মেরিন মাইন্ডের (মহাসাগর ও সামুদ্রিক প্রাণীদের রক্ষায় পরামর্শক) মতো ওয়ানহোয়েল নামের আরেকটি অলাভজনক সংস্থার একটি দল ২০১৯ সাল থেকে ভালদিমির নামের একটি তিমিকে নিয়ে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করছে। খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছে ভালদিমিরের কার্যক্রম, আচরণ ও মানুষের সঙ্গে মেলামেশার বিষয়গুলো। সম্প্রতি ওয়ানহোয়েলের প্রতিষ্ঠাতা রেজিনা হগ সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ভালদিমিরের মৃত্যু কোনো ‘সাধারণ মৃত্যু ছিল না’।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ভিডিও বার্তায় হগ জানান, ‘একটি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে যে ভালদিমিরের শরীরে কোনো ক্ষত ছিল না। চোখে পড়ার মতো কোনো জখমও পাওয়া যায়নি। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ তবে তার (ভালদিমির) শরীরে কিছু রক্তাক্ত গর্ত ছিল বলে দাবি করেছেন হগ।
কে এই ভালদিমির : ভালদিমির হল বেলুগা প্রজাতির একটি তিমি। রাশিয়া এটিকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।পশ্চিমাদের সন্দেহ, তিমিটি হয়তো রাশিয়ার নৌবাহিনীর একটি গোয়েন্দা কর্মসূচির অংশ হতে পারে। ওই কর্মসূচির আওতায় গুপ্তচরবৃত্তির জন্য জলজ প্রাণীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বাহিনীটি। যদিও অন্যদের দাবি, ভালদিমিরকে হয়তো প্রতিবন্ধী শিশুদের থেরাপি দিতে সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।
তিমির নরওয়েজীয় প্রতিশব্দ ‘ভাল’ এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নামের প্রথম থেকে ‘দিমির’—এ দুটি শব্দ মিলিয়ে তিমিটির নাম রাখা হয় ভালদিমির। সম্প্রতি এই তিমির মৃতদেহটি পানি থেকে ক্রেন দিয়ে তুলে পার্শ্ববর্তী পোতাশ্রয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছিল।
প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে, সম্প্রতি সন্দেহজনক অবস্থায় পাওয়া যায় তিমিটির মরদেহ। এটিকে উদ্ধার করা হয় নরওয়ের কাছে রাশিয়ার জলসীমা থেকে। এই সময় তিমিটির গলায় একটি বেল্ট পরানো ছিল।
মহাসাগর ও সামুদ্রিক প্রাণীদের রক্ষায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করে চলেছে নরওয়ের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মেরিন মাইন্ড। এটির প্রতিষ্ঠাতা ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী সেবাস্তিয়ান স্ট্র্যান্ড তিন বছরের বেশি সময় ধরে ভালদিমিরের গতিবিধি অনুসরণ করছিলেন।
এই নিয়ে সেবাস্তিয়ান স্ট্র্যান্ড বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমরা ভালদিমিরকে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় খুঁজে পাই। তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।’ পাশাপাশি তিনি আরও জানান, সেরা গুপ্তচরদের মতোই ভালদিমির তার পরিচিতির কোনো প্রমাণপত্র রেখে যায়নি। ফলে তিমিটি গুপ্তচর ছিল কি না, তা এখনো বলা সম্ভব নয়।
বেলুগা প্রজাতির একটি তিমি সাধারণত ৩০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে গড় আয়ুর অর্ধেকেরও কম সময় বেঁচেছিল ভালদিমির। মৃত্যুর সময় এটির বয়স হয়েছিল ১৪ থেকে ১৫ বছর।মত্যুর আগপর্যন্ত ভালদিমিরকে নরওয়ের বিভিন্ন উপকূলে দেখা গিয়েছিল। মৎস্যশিকারিদের সঙ্গে তার ভাববিনিময়ের, এমনকি সাগর থেকে এক কায়াকচালকের গোপন ক্যামেরা উদ্ধার করার ছবিও আছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এর আগে অন্য কোনো পশুপাখিকে কখনো গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, কিংবা আড়ি পাতার অত্যাধুনিক যন্ত্র হিসেবে অতীতে কোন প্রাণী বা পাখিকে ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা ? গোপন নথি থেকে জানা গিয়েছে অতীতে বিভিন্ন সময়ে গুপ্তচর হিসেবে জীবীত ও মৃত প্রাণীকেও ব্যবহার করা হয়েছে।
কবুতর/ পায়রা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনারা শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারির জন্য কবুতর ব্যবহার করতেন। এসব কবুতরের শরীরে বেঁধে দেওয়া হতো নজরদারির বিশেষ ক্যামেরা।
কাক : একবার জানলার ধারে আড়ি পাতার যন্ত্র বসানোর জন্য কাকেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সিআইএ (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা)।
ডলফিন : সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী কর্মসূচির (এমএমপি) অধীন মার্কিন নৌবাহিনীও ডলফিন ব্যবহার করেছিল। ফলে পানির নীচে নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হত খুব সহজেই।
এছাড়াও বিড়াল, তিমি, ডলফিন, বিভিন্ন পাখি, এমনকি মৃত প্রাণীদেরও বিভিন্ন সময় গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।