সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের তোড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ভাঙন। অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডবে ভাঙন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ঢেউয়ের তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত সৈকত হারাচ্ছে তার চিরচেনা সৌন্দর্য। প্রতিদিন শহর ও হোটেল–মোটেল জোনের ৪০ টনের বেশি বর্জ্য সাগরে পড়ছে। এই বর্জ্য সাগরমুখে তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে একটা বিপরীত স্রোত তৈরি হচ্ছে; যা কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত ভাঙনের অন্যতম কারণ মুখের তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, সৈকতে ভাঙনের এটাই প্রধান কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সরেজমিন দেখা যায়, ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত সৈকত এলাকায় বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন স্থানে বালু সরে গেছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ভাঙনের কবলে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি, ঝাউগাছ। কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ঢেউয়ের আঘাতে লাবণী পয়েন্টের বেশ কয়েকটি জিও ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে।
সৈকতের ব্যবসায়ীরা জানান, সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের তোড়ের পাশাপাশি গত ১৬ আগস্ট থেকে টানা পাঁচ দিন কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানিতে পাঁচ শতাধিক হোটেলের কলাতলী হোটেল–মোটেল জোন ডুবে যায়। তখন পাশের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জমে থাকা পানি সমুদ্রসৈকতের দিকে নামতে থাকে। এর ফলে বালুচরে বড় ভাঙন দেখা দেয়। এ ভাঙন এখন পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য অচল হয়ে পড়েছে; ভেঙে যাওয়া পথ দিয়ে কেউ সৈকতে নামতে পারছেন না।
কক্সবাজার সৈকত ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রুবেল খান বলেন, ‘সৈকতের তীরঘেঁষে গড়ে তোলা পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দোকান, হোটেল–মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনার মালিকরা সমুদ্রের ভয়ংকর রূপ দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা উদ্বিগ্ন তাদের বিনিয়োগ নিয়ে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, ‘সাগর সৈকতে অবৈধ স্থাপনার একটা প্রভাব তো রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন হোটেল–মোটেল জোন থেকে ২০ টন এবং শহর থেকে ২০ টনসহ ৪০ টনের বেশি বর্জ্য সরাসরি সাগরে পড়ছে। এই বর্জ্য সাগরমুখে তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে একটা বিপরীত স্রোত তৈরি হয়েছে, যা কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত ভাঙনের অন্যতম কারণ।’
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ঘনঘন নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বড় বড় ঢেউ উপকূলে শক্তিশালী হয়ে আছড়ে পড়ছে। উচ্চ শক্তির এই ঢেউ উপকূলের বালু সরিয়ে দেওয়ায় সৈকতে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় সমুদ্র স্রোতের প্রকৃতি ও ঢেউয়ের তীব্রতা এবার অন্যরকম বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া মানবঘটিত কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন হতে পারে।’
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই সৈকতের বিভিন্ন অংশ ভাঙছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা বর্ষা মৌসুমে ভাঙে। এ অবস্থায় পর্যটন শিল্প ও কক্সবাজার শহর বাঁচাতে স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’