বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় কোথাও কোথাও পানি কিছুটা কমলেও, কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। পানিবন্দিদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা ত্রাণ বিতরণ করছে। তবে এখনো অনেক স্থানে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। অনেক এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন সংগঠন বন্যা দুর্গত এলাকায় ছুটলেও তা বিতরণে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এ জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকলেও তা প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো যাচ্ছে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গতকাল দেয়া তথ্য মতে বন্যায় দেশে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ৫, নোয়াখালীতে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে ১১ জেলায় মোট ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলা। জেলাগুলো হলো– ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে ফেনীর, অবস্থা ভয়াবহ। এ ছাড়া কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজরেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা পানিতে ডুবে গেছে মানুষের ঘর–বাড়ি। ভেসে গেছে গবাদিপশু, ঘের ও পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত। সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে ফেনীসহ কয়েকটি জেলা। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। বন্যাকবলিত ১২ জেলায় ১৮০০ মোবাইল টাওয়ার অচল। যোগাযোগ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মোবাইল টাওয়ার সচলে গতকাল বিটিআরসিকে জেনারেটরে ফ্রি ডিজেল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। উপদেষ্টার নির্দেশে কুমিল্লা–নোয়াখালীতে সচল হচ্ছে মোবাইল টাওয়ার তবে ফেনীর অবস্থা এখনো শোচনীয়।
দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরাও ত্রাণ বিতরণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দেশের সাধারণ মানুষ যে ভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যার্তদের সাহায্যে ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছেন তা এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এমন ঐক্য সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের রূপ। বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ বিতরণে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রম ও সহযোগিতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কন্টিনজেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যাকবলিত জেলাসমূহে প্রায় ৫৫টি বোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আনুমানিক নয় হাজার পাঁচশত বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। পাশাপাশি প্রায় পাঁচ হাজার বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও চলছে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা এবং উদ্ধার কাজ। তারা কয়েকশ’ নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে। তবে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণ কার্যক্রম স্বল্পতার অভিযোগ রয়েছে পানিবন্দি দুর্গত মানুষের। শুকনো খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে লাপাত্তা, পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বির অভিযোগ। বাজার তদারকি দায়সারা গোছের বলেও ভোক্তাদের অভিযোগ। এদিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানচলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। শত শত পণ্যবাহী ট্রাক গত তিনদিন ধরে মহাসড়কে আটকা পড়ে আছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে দুর্গত এলাকায় যেতে বলেছেন। এ ছাড়া দেশবাসীকেও বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বন্যার্তদের সাহায্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে অনুদান পাঠানোরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশেই বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বন্যাকবলিত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারে আবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে বন্যাকবলিত ৫ জেলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এলাকাগুলোর ছয়টি নদীর নয়টি স্টেশনের পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই পাঁচ জেলা হলো– মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। বন্যার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খ, আ, ম, রশিদুল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানি কমতে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত ১২ঘণ্টায় আখাউড়ার হাওড়া নদীর পানি আরও ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও বাঁধ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে এখনও বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে গত বুধবার আখাউড়ায় বন্যা সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার বঙ্গেরচর, কালিকাপুর, বাউতলা, আড়িয়ল ও খলাপাড়াসহ ৪০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরদিন বন্যার পানি বেড়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তবে ঢলের পানির বেগ কমায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি কমতে থাকে। গতকাল সকাল থেকে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বসা–বাড়ি থেকে পানি সরে গেছে। তবে বন্যার কারণে আড়িয়ল ও খলাপাড়া এলায় হাওড়া নদীর দুইটি বাঁধসহ অন্তত ৮টি স্থানে সড়ক ধসে পড়ে। এতে করে ওইসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি সরে গেলেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখনও বন্ধ রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। পাশাপাশি আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়েও যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী থেকে এহসানুল আলম খসরু জানান, জেলায় গত ১২ ঘণ্টায় ৩ সেন্টি মিটারেরও বেশী পানি কমেছে। আগামী কয়দিন বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ত্রাণ কার্যক্রম স্বল্পতার অভিযোগ রয়েছে পানিবন্দি দুর্গত মানুষের। শুকনো খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে লাপাত্তা, পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বির অভিযোগ। বাজার তদারকি দায়সারা গোছের বলে ভোক্তাদের তীর্যক মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে জেলার প্রায় দু’লক্ষ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় আমন ধানের বীজতলা, রোপণ করা আমন ধানের জমি,আবাদকৃত শাক–সবজি, মাছের পুকুর, খামার, ঘের ডুবে গেছে। এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে দুর্গত এলাকার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ। বন্যা কবলিত এসব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠন নেতৃবৃন্দ। তবে এখনো অনেক জায়গায় সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন বানভাসি মানুষ। গতকাল দুপুরে জেলার সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, কুমিল্লা ইপিজেডের ভেতরে আশপাশের নিম্নাঞ্চল থেকে আসা পানি উৎপাদনকারী সকল প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে শুরু করলে কর্মচারীদের দাবির মুখে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে ছুটি ঘোষণা করেছে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে ভেতরে পানি ঢুকা শুরু করলে দুপুরে তা বেড়ে গোটা ইপিজেড পুকুরে পরিণত হয়। এসময় কর্মচারীরা অফিস বন্ধ ঘোষণার দাবি তুললে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে কাদেনা বেনড্রিকস, নাসা স্রুতি, গোল্ডেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল, পি ওয়াই, আর এন টেক্সটাইল এবং নিউবেনড্রিকসসহ ৪৯টি কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছুটি দেওয়া হয় সব কর্মচারীকে। ইপিজেডে অবস্থিত কাদেনা কোম্পানির কর্মকর্তা আহসান হাবিব কাওসাইন বলেন, সকালে পানি অল্প ছিল কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির পরিমাণ বেশি হলে সব কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় যাওয়া ইনকিলাবের ফটো সাংবাদিক এস এ মাসুম জানান, কুমিল্লার মুরাদ নগর উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি কায়কোবাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করছেন। এ ছাড়া নৌকা দিয়েও দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে তার খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। মুরাদনগর উপজেলার একটি আশ্রয় কেন্দ্র নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এই আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল এক শিশুর জন্ম হয়েছে। তার পরিবার এই নবজাতকের নাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের নাম অনুসারে নাম রেখেছে আবু সাঈদ।
লক্ষ্মীপুর থেকে শেখ মো. বাবুল (বাবর) জানান, লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে ক্রমশ পানি বাড়ছে। ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে। জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যার্তদের সহায়তায় সরাসরি ভাবে ৫৭৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিএনপি–জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার, চাল–ডালসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কোনো কোনো এলাকার মানুষ ত্রাণ এখনো পায়নি। পানিবন্দি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, জেলার ৫০ হাজার মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। লক্ষ্মীপুর জেলায় চাষাবাদ করা প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর আছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুর ডুবে ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। ৫ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমির চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের প্রায় ৮০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে। বন্যায় আমন ধানের বীজতলা ১৪৮৬ হেক্টর, আমন ধান ২৬১৮ হেক্টর, আউশ ধান ২৯৬৩ হেক্টর ও শরৎকালীন ৪৪৩ হেক্টরের সবজি আক্রান্ত হয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) থেকে মো. আবদুল আলীম খান জানান, জেলার সীমান্তে ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার শুরুতে অর্থাৎ দুই জেলার মাঝখানে দিয়ে প্রবাহিত সালদানদী ২৩ আগষ্ট সকালে বাগড়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা দিয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে এবং ২৪ আগষ্ট ভোররাতে ঘুঘুর নদীর বাঁধ ভাঙ্গে এবং বড়ধুশিয়া বড় খালের বাঁধ ভেঙ্গে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া, মানরা, নাগাইশ, বড়ধুশিয়া, চান্দলা, নাইঘর, টাটেরা, ছানিয়ানী সহ উপজেলার সর্বত্র পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ফলে এইসব এলাকার হাজার হাজার লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একদিকে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গে বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার লোকজন পানিবন্দি। অন্যদিকে সালদা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ব্রাহ্মণপাড়ায় লোকালয়ে প্লাবিত হওয়ায় মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের অবস্থা। পানিবন্দি এলাকার লোকজন তাদের পরিহিত কাপড়, শুকনো খাবার নিয়ে নিজ নিজ নারী পুরুষ বাড়ীঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। অনেকে তাদের গবাদি পশু গরু ছাগল, হাঁস–মুরগী নিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে, দুই উপজেলার হাজার হাজার পুকুরের মাছ বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে।