ঈসা সদ্দূকীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন শুনে ফরীশীরা একত্র হলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আলেম ঈসাকে পরীক্ষা করবার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন, “হুজুর, তৌরাত শরীফের মধ্যে সবচেয়ে বড় হুকুম কোনটা?” ঈসা তাঁকে বললেন, “সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দরকারী হুকুম হল, ‘তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে।’ তার পরের দরকারী হুকুমটা প্রথমটারই মতÑ ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করবে।’ সম্পূর্ণ তৌরাত শরীফ এবং নবীদের সমস্ত কিতাব এই দু’টি হুকুমের উপরেই ভরসা করে আছে।” (মথি ২২ : ৩৪–৪০)
ইব্রাণী পুস্তকের ১৩ অধ্যায় ৫–৬ পদে চমৎকার একটি চেতনা বাণী রয়েছে যা হলো টাকার প্রতি মোহথেকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে, তার কারণ হলো মাবুদ, যিনি আমাদের স্বীয় সুরতে ও প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তারা কেবল ব্যস্ত থাকবে মাবুদের মহিমা প্রকাশ করার কাজে। যেমন একজন সরকারী কর্মচারী সদা–সর্বদা মনোযোগী থাকবে সরকারের সার্বিক প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে, আর তাকে মাসোহারা দেয়া হয় তার নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য। কেবল অসৎ কর্মচারী ঘুষ–দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারের পতন ঘটায়। খোদা–প্রেমি ভক্তজনের অবশ্যই চুড়ান্তভাবে নির্ভর করতে হবে খোদার উপর; কেননা তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি কখনোই ভক্তবৃন্দদের ছেড়ে দিবেন না অথবা অস্বীকার করবেন না।
মানুষ আসলে খোদার হাতে সৃষ্ট, তবে তারা খোদার পরিচয় থেকে রয়েছে বিভ্রান্ত, যার প্রমান পাবেন তাদের বাস্তব জীবন–কর্মে, প্রতিটি পদক্ষেপে। যুদ্ধ বিগ্রহ তো কোনো নতুন খেলা নয়, যা শুরু হয়েছে মানবের যাত্রারম্ভ থেকে।
পাককালমে একটি বিষয় বর্ণীত রয়েছে, ভক্তের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত মন দিয়ে মাবুদ মাওলাকে প্রেম করবে। কথাটা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তবে অন্যকিছুর প্রতি আকর্ষণ জাগার প্রশ্ন ওঠে না। অর্থের প্রতি বিশেষ আকর্ষণের কারণ হলো এই পৃথিবীর প্রতি অদম্ম টান, যার ফলে নিয়ত মানুষ ছুটে চলে কড়ির পিছনে; যাকে মোহ বলা চলে, আর এই পার্থীব মোহ মানুষকে অন্ধ করে ছাড়ে, এক কথায় তাকে মোহান্ধ বলা হয়। একজন মোহান্দ ব্যক্তি হারিয়ে ফেলে তার সৎবিবেক। মানুষ আসলে সৃষ্ট হয়েছে খোদার সুরতে তার প্রতিনিধি হিসেবে। মানুষের ঐশি দায়িত্ব হলো সহ মানুষকে পথ, সত্য ও জীবের সন্ধান দান করা। কালামের আলোকে দেখা যায়, প্রথম মানুষ আদম থেকে সকলে হয়ে পড়েছে সঠিক পথ থেকে স্খলিত, আর তেমন অবস্থাকে প্রেরণা দিয়ে চলছে খোদার দুষমন অভিশপ্ত ইবলিস। আমাদের মহা নির্মাতা আমাদের প্রতিজ্ঞা দিয়েছেন, “আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না বা কখনও তোমাকে ত্যাগ করব না।”
খোদার অপার রহমতে আমরা বেঁচে আছি। তিনি যে আমাদের অকৃত্রিমভাবে মহব্বত করেন তার প্রমান হলো, আজ পর্যন্ত আমরা সুস্থ সবল আছি; করে চলেছি তাঁর গুণকীর্তন। অবশ্য এক্ষেত্রে আমাদের থাকতে হবে নির্জলা বিশ্বাস। একমাত্র বিশ্বাসহেতু আমরা খোদার কাছে হয়েছি সমাদৃত, তাঁর সকল আশিষধারার ভাগিদার, প্রবক্তা ও বিতরণকারী। কালামপাক থেকে একটি আয়াত তুলে দিচ্ছি, প্রিয় পাঠককুল, অনুগ্রহ পূর্বক উক্ত আয়াতটি নিয়ে একটু ধ্যান করুন, আপনি খুঁজে পাবেন আপনার মর্যাদপূর্ণ সঠিক অবস্থান। “যদি কেউ মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আল্লাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আল্লাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেজন্যই আমরা মসিহের দূত হিসেবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আল্লাহ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসিহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আল্লাহর সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসিহের মধ্যে কোন গুনাহ ছিল না; কিন্তু আল্লাহ আমাদের গুনাহ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনাহের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসিহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আল্লাহর পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়” (২করিন্থীয় ৫ : ১৭–২১)