দেশের অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাগেরহাটে তৈরি বিশ্বমানের ১১০টি কাঠের বসতঘর যাচ্ছে ইউরোপে। ইউরোপীয় মডেলে আধুনিক এসব কটেজের ছাদ বা ছাউনিও তৈরি করা হচ্ছে দেশীয় কাঠ দিয়ে। বেলজিয়ামের ‘পাইরি ডাইজা’ ইকো–ট্যুরিজম কেন্দ্রে ধনাঢ্য পর্যটক পরিবারের আরামদায়ক বসবাস উপযোগী আধুনিক আসবাবপত্রসহ কাঠের এসব বসতঘর রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বাগেরহাটেও ২ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী আগস্ট থেকে প্রতিটি কাঠের ঘরের খণ্ড–খণ্ড অংশ কনটেইনারে করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে জাহাজযোগে পাঠানো হবে বেলজিয়াম। বাগেরহাট সদরের করোরী গ্রামে ন্যাচারাল ফাইবার নামের কারখানাটিতে ১১ মিটার লম্বা ও ৩ দশমিক ৭৫ মিটার চওড়া প্রতিটি কাঠের বসতঘর এখন তৈরি হচ্ছে। এসব ঘরের পাশাপাশি চেয়ার–টেবিল, আলমারি, খাটসহ সব আসবাব কাঠের তৈরি। থাকছে কাঠের তৈরি শৌখিন আসবাবপত্রও। বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবার কারখানা ঘুরে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবার কারখানার মোস্তাফিজ আহমেদ ও তার ছোট ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাহিদ আহমেদ জানান, করোনাকালে আমরা বসে না থেকে দেশের অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য হিসেবে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ডিসপোজেবল হোটেল স্লিপার, কাঠের বেবি ব্যালান্স সাইকেল, সান বেড, পোষা প্রাণীর বিছানা, পাখির বাসা, খেলনাসহ নানা পণ্য উৎপাদন করে ইউরোপে রপ্তানি করতে থাকি। বেলজিয়ামের ‘পাইরি ডাইজা’ ইকো–ট্যুরিজম কেন্দ্রে আমরা হাতি চলাচলের করিডর ও বেড়া দেওয়ার ৪ শতাধিক খুঁটি তৈরির অর্ডার পাই। প্রথম চালানে ১৬২টি কাঠের খুঁটি বেলজিয়ামে পাঠানো হয়। অর্ডার অনুযায়ী কাঠের খুঁটি সরবরাহ করায় ‘পাইরি ডাইজা’ ইকো–ট্যুরিজম কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হন। এরপর ‘পাইরি ডাইজা’ কর্তৃপক্ষ ১১০টি কাঠের তৈরি ‘বোট টিনি হাউস’ নামের এ ঘর বানানোর জন্য ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে তারা কাজ পেয়ে যান। শিডিউল অনুযায়ী প্রথমে একটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি নমুনা ঘর বানানো হয়। বসতঘরের কাঠামো, দেয়াল এমনকি ছাদও কাঠের তৈরি। ইকো–কটেজগুলো দেখতে অনেকটা উল্টো নৌকার মতো। বাগেরহাটে এসে ‘পাইরি ডাইজা’ কর্তৃপক্ষ দেশের মেহগনি কাঠ দিয়ে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি নমুনা ঘর দেখে মুগ্ধ হন। আসবাবসহ প্রাথমিকভাবে ১১০টি ঘরের ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর এখন এসব কাঠের বসতঘর তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় মেহগনি কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি করা হলেও ঘরের ছাদ বা ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে আফ্রিকান ‘ইপে’ গাছের কাঠ দিয়ে। এজন্য আফ্রিকান ইপে কাঠ আনা হচ্ছে। এসব ঘরে কোনো রং করা হবে না। তবে, ছাদ বা ছাউনিতে পানি প্রতিরোধী প্রলেপ দেওয়া থাকবে। এসব ঘর তৈরিতে বাগেরহাট সদরের করোরী গ্রামে ন্যাচারাল ফাইবার কারখানায় প্রতিদিন ২ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। এসব ঘরের কাঠামোর পাশাপাশি চেয়ার–টেবিল, আলমারি, খাটসহ সব আসবাব কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। ঘরের একেকটি অংশ আলাদা–আলাদা করে কনটেইনারে ভরে জাহাজে করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে বেলজিয়াম পাঠানো হবে। আমাদের ন্যাচারাল ফাইবার কারখানার কর্মীরা বেলজিয়ামে গিয়ে এসব ঘর জোড়া লাগিয়ে সেট করে দিয়ে আসবেন। এক–একটি কাঠের ঘর তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলেও জানান বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার কারখানা কর্তৃপক্ষ।