ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। এই দুই জেলায় এখনো পানিবন্দি ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫ জন মানুষ। এদিকে গাইবান্ধায় নদ–নদীর পানি কমা–বাড়ার কারণে জেলার পাঁচ উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সিলেট ব্যুরো : ভারতে চেরাপুঞ্জিতে ও সিলেটে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় গত বুধবার বিকেল থেকে কমতে শুরু করে বন্যার পানি। এ ছাড়া গত তিন দিন থেকে সিলেটের রৌদ্র–উজ্জ্বল আবহাওয়া পানিবন্দি মানুষকে স্বস্তি দিয়েছিল। ইতোমধ্যে বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। তবে সোমবার (২৪ জুন) সকালে সিলেটে আবারও বজ্রবৃষ্টি হয়। এতে নদ–নদীর পানি খুব একটা বৃদ্ধি না পেলেও বানবাসী মানুষের মাঝে আবারও বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে সিলেটে এখনো পানিবন্দি রয়েছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫ জন মানুষ। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার সারি, সারিগোয়াইন, পিয়াইন (ডাউকি), ধলাইসহ সব নদ–নদীর পানিই কমছে। সোমবার বেশির ভাগ নদ–নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এখনো সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪.১ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫১ মিলিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, আজ বৃষ্টি হলেও নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পায়নি। তবে এখন বর্ষাকাল চলমান এবং আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৮ জুন থেকে সিলেটে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নদ–নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং বন্যার ব্যাপারে সবাইকে আগাম সতর্ক থাকতে হবে।
উজানের পাহাড়ি ঢল আর থেমে থেমে বৃষ্টিতে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদ–নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে করতোয়া নদীর পানি সামান্য বেড়েছে। পানি কমা–বাড়ার কারণে জেলার চার উপজেলায় নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে নদ–নদীর চরাঞ্চলে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওই সব এলাকার কোথাও কোথাও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তা নদী অববাহিকার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর, বেলকা, কাপাসিয়া; সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারী; ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, ফুলছড়ি, এরেন্ডাবাড়ী, ফুজলপুর, গজারিয়া, উদাখালী এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের মুলভূখণ্ড ও চরাঞ্চলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে এসব ইউনিয়নের লোকজন ঘরবাড়ি নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানান গেছে, পানি বৃদ্ধি ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, কুরুয়াবাদা, গোয়ালবাড়ী, বাবুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এই গ্রামের অনেকেই বসতভিটা হারিয়েছেন। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। তা ছাড়া ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে আরও অনেক পরিবার।
কুরুয়াবাদা গ্রামের রাজা মিয়া বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে এই এলাকার প্রায় ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কৃষিজমিসহ আমার প্রায় ৮ বিঘা জমি ছিল। সব নদীতে হারিয়েছি। ভারী বৃষ্টিপাতে আর ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করার ফলে এসব জমি বিলীন হয়েছে। এই পর্যন্ত ৭ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পাড়ে গতবার যে জিও ব্যাগ দিয়েছে, সেগুলো ছিঁড়ে ছিটে নষ্ট হয়েছে।’
গোয়ালবাড়ী গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, ‘১০ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। সব শেষে অস্থায়ীবাবে ওই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছি।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও গতকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই সব জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে করা হবে।’
মৌলভীবাজারে ধীরে কমছে পানি
মৌলভীবাজারে গত তিন দিনে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার বন্যার পানি ধীরগতিতে কমছে। তবে এখনো জেলার সাত উপজেলার তিন লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলেও অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষজন খাদ্যসংকটে পড়েছে। কোথাও কোথাও ত্রাণ পৌঁছালেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৯টি ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার দুপুর ১২টায় কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীতে ১৮০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে মনু নদের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ও ধলাই নদী রেলওয়ে ব্রিজে পানি ৩৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।