ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতি ভারি বর্ষণ এবং জোয়ারের মধ্যে চট্টগ্রামে খালে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এর মধ্যে একজন কলেজছাত্র এবং অপরজন বৃদ্ধ। চট্টগ্রাম মহানগরীর আসাদগঞ্জ ও বোয়ালখালীতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, দুদিন পর পুরোপুরি সচল হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ার পর মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে পুরোদমে চলছে পণ্য ওঠানামা। বড় জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিং চলছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর
কর্তৃপক্ষ। তবে একটি জাহাজ ভেড়ানোর সময় বয়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে বড় ধরনের দুর্ঘটনার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু সেই ঝুঁকি সামলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ৯টি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ার পর অ্যালার্ট প্রত্যাহার করা হলে গত সোমবার বেলা ১১টা থেকে জাহাজগুলো জেটিতে ফিরতে শুরু করে। তবে বৈরী আবহাওয়া থাকায় এ কাজটি বিঘিœত হচ্ছিল। মঙ্গলবার বেলা ২টার মধ্যে সবগুলো জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। এখন ১৯টি জাহাজে কাজ চলছে। এ ছাড়া বহির্নোঙরে ৪৫টি জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিং হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর (ডিসি) ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, একে একে নির্বিঘেœ ১৮টি জাহাজ জেটিতে আনার পর ১৯ নম্বর জাহাজটির প্রপেলার গুপ্তা পয়েন্ট এলাকায় একটি বয়ার সঙ্গে আটকে যায়। এতে কিছুটা ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বন্দরের পাইলটের দক্ষতায় মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে সে সমস্যা দূরীভূত হয়। ফলে সকল জাহাজ ভিড়েছে বন্দর জেটিতে।
জেটির এ জাহাজগুলো এবং বহির্নোঙরের ৪৫ জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর কাজ চলছে। তবে সাগরে প্রচুর বাতাস তথা প্রতিকূল অবস্থা থাকায় কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটছে। মঙ্গলবার থেকে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বলা যায়।
খালে পড়ে ২ জনের মৃত্যু ॥ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতিভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের মধ্যে
মহানগরী ও বোয়ালখালীতে খালে পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকালে কোতোয়ালী থানার আছাদগঞ্জ শুঁটকিপট্টি এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আজিজুল হাকিম ইমন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খালের পাশে প্রস্রাব করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পানিতে পড়ে ডুবে মারা যান ইমন (২০)। তিনি রামপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হতভাগ্য ইমন
চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকার ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
রাতে পুলিশ জানায়, বিকেলের দিকে কলাবাগিচা খাল থেকে ইমনের দেহ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে শুরুতে তার পরিচয় জানা যায়নি। পরে ফেসবুকে দেখে ইমনের পরিবারের সদস্যরা এসে তার লাশ শনাক্ত করেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী জানান, এলাকার এক নারী ওই যুবককে পানিতে পড়ে যেতে দেখে অন্যদের খবর দেন। এরপর চার–পাঁচজন ছেলে খালে নেমে তাকে তুলে আনেন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করেছি।
ওই যুবককে একা হেঁটে খালপাড়ে যেতে দেখা গেছে। তিনি প্রস্রাব করতে খালের একদম ধারঘেঁষে বসেন। এর পর সেখানে পিছলে পড়ে গেলে আর উঠতে পারেনি। সুরতহালে শরীরে গুরুতর কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। হয়তো পানিতে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে বোয়ালখালীতে মাছ ধরতে গিয়ে খালের পানিতে ডুবে মো. মনসুর আলম (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উজির আলী চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ছন্দারিয়ার খালের পোপাদিয়া এলাকায় স্থানীয়রা মনসুর আলমকে ভাসতে দেখেন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা বলেন, মনসুর আলম খালে জাল দিয়ে মাছ ধরতেন। তিনি খাল থেকে জাল টেনে তোলার সময় পানিতে পড়ে যান। তার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে।
মোংল বন্দরে পণ্য ওঠানামা শুরু ॥
নিজস্ব সংবাদদাতা মোংলা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের তা–বে গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পুনরায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল থেকে বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত দেশী–বিদেশী ছয়টি জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে পণ্য খালাস করে বাংলাদেশ পতাকাবাহী ‘এম ভি মার্কেন্টাইল–৪৪’ জাহাজ বন্দর ত্যাগ করেছে।
এর আগে সোমবার (২৭ মে) বিকেল থেকে এই বন্দরের অভ্যন্তরে জেটিতে শুরু হয় পণ্য ডেলিভারি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার মহাবিপদসংকেত কমিয়ে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করার পর বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এদিন বিকেল থেকে জেটি থেকে পণ্য ডেলিভারি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্দর চ্যানেলের হারবারিয়ায় নোঙর করা জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজও শুরু হয়েছে।
যেসব জাহাজে পণ্য খালাস শুরু হয়, সেগুলো হলো –বাংলাদেশ পতাকাবাহী ‘এমভি আম্মার’ (পাথর) পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি গ্যাস জিউস’ (গ্যাস), পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি ভি স্টার’ (সার), পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি ইয়াস স্কাই’ (ক্লিংকার) ও থাইল্যান্ড পতাকাবাহী ৃএমভি সুমি–২’ (গ্যাস)।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আবহাওয়া অধিদপ্তর মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর রবিবার (২৬ মে) সকাল ১০টায় জেটি থেকে জাহাজগুলোকে হারবাড়িয়ায় নিরাপদ নোঙ্গরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে একই সময়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় বন্দরের নিজস্ব এলার্ট–৪ জারি করে বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এলার্ট–৪ হলো ১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রণীত ঘূর্ণিঝড়–দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনার সর্বোচ্চ ধাপ। এটি জারি করার পর বন্দর চ্যানেল ও জেটি থেকে বড় জাহাজগুলোকে হারবাড়িয়ায় নিরাপদ নোঙরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পণ্য হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) সহ সব কনটেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টগুলোকে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়।