প্রীয় ধর্মভক্ত! বিনম্র চিত্তে সসম্মানে একটি প্রশ্ন শুধাই, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়ে আভুমিনত হয়ে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে আপনি কাকে ভজনা করে ফিরছেন?
তাছাড়া মাথার উপর থেকে সূর্যটি যখন হেলে পড়ে এবং সুর্যাস্তের খানিকক্ষণ পূর্বে একই পদ্ধতিতে একই কাজ করে থাকেন, এমন প্রথা আবিরাম করার মাধ্যমে কোন দেবতাকে তুষ্ট করার পায়তারা করে ফিরছেন, দয়া করে বলবেন কি?
আমি সকল মানুষকে অতীব সম্মান করেই কথাগুলো লিখছি! আমি জানি, এবং সুনিশ্চিতভাবেই তা মনে প্রাণে প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করি, সমস্ত মানুষ একক খোদার হাতে, তাঁরই প্রতিনিধি হিসেবে স্বীয় সুরতে করেছেন সৃষ্টি।
খোদা নিজ হাতে একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনি হলেন প্রথম মানুষ আদম। খোদা তাঁকে দোয়া করেছেন, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা দিয়েছেন, প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোটা বিশ্ব মানুষের ভরে তোলার জন্য। আদমের মর্যাদা আর খোদার মর্যাদা তো একই, ভিন্ন কিছু নয়। পাককালামে বিষয়টি যদি পাঠ করেন তবে বুঝতে পারবেন, ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে মানুষের উচ্চ মর্যাদার বিষয়।
কথায় বলে, মার্সেডিজ কোম্পানী কোনো খারাপ গাড়ি প্রস্তুত করে না। ঠিক একইভাবে বলা চলে, খোদা কোনো খারাপ কিছু সৃষ্টি করেন নি। বন–বাদারে বৃক্ষলতাগুল্ম যতকিছু দেখতে পাওয়া যায়, তার সবগুলোই অতীব দরকারী। আপনি চিনেন না তাই পদতলে দলিত মথিত্র করে চলে যাচ্ছেন।
মানুষ সৃষ্টি করে খোদা তাকে অতিউত্তম এক উপাধি দিলেন; আর তা হলো “আশরাফুল মাখলুকাত” অর্থাৎ তাবৎ সৃষ্টির মধ্যে মানুষ হলো সর্বোত্তম।
খোদা বরাবর অদৃশ্য, চাই তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি! কাকে আর পাবেন খুঁজে যোগ্য ব্যক্তি, যিনি হতে পারবেন অদৃশ্য খোদার দৃশ্যমান প্রতিনিধি! আদমই হলেন একমাত্র প্রতিনিধি, খোদা তাকেই স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে সসম্মানে সমাসীন করলেন। সুন্দর দামী বস্তু যখন নোংরা কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ে, তখন তা পুনরায় ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই স্নাতশুভ্র করার আবশ্যকতা রয়েছে। বিশুদ্ধ জলপানে কোনো ভয় থাকার কথা নয়, তবে যখন কোনো দুষণ তাতে মিলে যায় তখন তা পান করা হবে বিপদজ্জনক!
খোদার কথা অমান্য করে যখনই আদম কুলটা ইবলিসের কুটচালে প্রনোদিত হয়ে খোদাদ্রোহী বনে গেল, অমনি হারিয়ে বসলো ঐশি গুণ ও মর্যাদা; ফল স্বরূপ হলো বিতাড়িত পবিত্র স্থান থেকে, আজকের বিশ্বটি হলো অবাধ্য পতিত আদমের জন্য কালাপানি Place of Deportation!
পাপ বিষের মত গোটা দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তিলেতিলে ব্যক্তিকে নিস্তেজ করে ছাড়ে, এবং যন্ত্রণাকাতরতার যবনিকা মৃত্যুর মুখে সমর্পন করে। বর্তমানবিশ্ব যদিও মানুষে ভরা, তবুও সেই বেগুনাহ মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। সকলে পাপ করেছে, এবং খোদার গৌরব হারিয়ে বসেছে। মানুষ খোদার প্রতিনিধিত্ব না করে সে আজ বিকারপ্রাপ্ত হয়ে পড়েছে ইবলিসের খাস চেলা হিসেবে। খুন, রাহাজানী, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, পার্থীব স্বার্থের কারণে হেন কর্ম নেই যা তারা করতে পারে না। ভ্রাতাকে খুন করে নিজেদের প্রমান করে দিল, তারা কতোটা হিংস্র!
মেহেরবান খোদা স্বীয় সৃষ্টিকে আদৌ ভুলতে পারলেননা, মাতা তাঁর সন্তানকে ভুলতে পারে না। তবুও দেখা যায়, পরকীয়ার প্রভাবে গর্ভজাত সন্তান খতম করে বহু দৃষ্টান্ত মানুষ স্থাপন করেছে। তাই বলে করুনাময় খোদা মানুষকে কখনোই ভুলতে পারেন না। নিজের প্রাণের অধিক তিনি মানুষকে ভালবেসেছেন। স্বীয়কালাম ও পাকরূহ মানবরূপে তিনি জগতে পাঠিয়েছেন, মানুষ খুঁজে নেবার জন্য, স্নাতশুভ্র ও নতুনজন্ম দান করার জন্য, যেন তারা পুনরায় লাভ করতে পারে হারানো অধিকার, যা ইবলিসের কুটচালে প্রলুব্ধ হয়ে যাত্রারম্ভে হারিয়ে ফেলেছিল। উক্ত বিশেষ ব্যক্তি হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। খোদার সার্বিক কুদরত, ক্ষমতা, মর্যাদা, প্রাধিকার ও অদৃশ্য গুনাবলী রয়েছে তাঁর মধ্যে। “লোভে পাপ, আর পাপে মৃত্যু” প্রবাদটি তিনি উল্টে দিয়ে ঘোষণা দিলেন, তওবা করো, তোমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।
গোটা বিশ্বের পাপ ক্ষমা করার জন্য তিনি এক চূড়ান্ত মূল্য শোধ দিলেন, নিজের পবিত্র রক্তে, মানবের প্রতি খোদার অতুলনীয় প্রেম প্রকাশ পেয়েছে কেবল খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের মাধ্যমে। নিরষ্কুষ বিশ্বাসহেতু আজ গুনাহগার পেয়ে গেল অভাবিত মুক্তি (১ইউহোন্না ১ অধ্যায় ৯পদ)। চন্দ্র–সূর্য–গ্রহ–নক্ষত্রের পিছনে ছুটে চলার মাধ্যমে কেবল নিজেকে ভ্রান্তির অতলে ডুবিয়ে রাখাই সম্ভব, মুক্তির সোপানে তারা আর ফিরে যেতে পারছেনা।
জমি দখল করার জন্য আজ মানুষ মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়ে বিনাশ করে ফিরছে, মানুষ কতোটা নারকীয় হতে পারে, তা স্বাভাবিক কল্পনায়ও ধরা পড়ার কথা নয়।
সর্বোত্তম সৃষ্টি আজ কেন এতটা কুলটায় হলো পরিণত? প্রশ্ন জাগে, দুষিত জল বিষাক্ত কেন? তাহলে জল কি আর পান করা সম্ভব হবে না? আমরা কি তৃষ্ণাকাতর হয়ে মারা পড়বো? ভয় নেই জল শোধন করার ব্যবস্থা আছে, উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। গুনাহগার মানুষ স্নাতশুভ্র বেগুনাহ করার জন্যই খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ নিজের প্রাণ কোরবান দিলেন, সম্পূর্ণ নিখুঁত ঐশি মেষ।
কেবল বিশ্বাসে আজ আপনি হতে পারলেন নতুন সৃষ্টি, খোদার নয়নের মণি। (ইশাইয়া ১ অধ্যায় ১৮, ৪০ অধ্যায় ৩১, ৪১ অধ্যায় ৮ থেকে ১০, ইফিষীয় ২অধ্যায় ৮ থেকে ১০)।