অবৈধভাবে বসতি না গড়তে চট্টগ্রাম নগরীর ২৬টি পাহাড়ের পাদদেশে গত ২৫ ডিসেম্বর সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে পাহাড়ের পাদদেশে বাস করা পরিবারগুলোকে সরে যেতে তিন দিন ধরে মাইকিংও হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। এখনও ঝুঁকি নিয়েই চট্টগ্রামের অনেক পাহাড়ের পাদদেশে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বাস করছেন।
নগরীর ফিরোজশাহ কলোনিসংলগ্ন ১ নম্বর ঝিলপাড় এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করতে দেখা গেছে শতাধিক পরিবারকে। বায়েজিদ এলাকার অন্তত পাঁচটি পাহাড়ে গিয়ে হাজারো মানুষকে বসবাস করতে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে আলগা হয়ে গেছে পাহাড়ের মাটি। এ সময়ে পাহাড়ে বসবাস করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। গবেষণা বলছে, চট্টগ্রাম নগরীতে গত চার দশকে বিলুপ্ত পাহাড়ের সংখ্যা ১২০।
জেলা প্রশাসন জানায়, চট্টগ্রামের শতাধিক পাহাড়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়সহ মোট ২৬টি পাহাড়ে প্রায় ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার আছে চরম ঝুঁকিতে। গত বছরের ৮ আগস্ট পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অনুযায়ী পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এসব পাহাড়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন।
আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়ধসের বিষয়ে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার দায়ে প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে মামলা চলছে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে নিয়মিত নজরদারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পাহাড়খেকোরা যত শক্তিশালী হোক, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘এটা ঠিক যে, শুধু সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাহাড় কাটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তার পরও এসব সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেখে অন্তত জনসাধারণ পাহাড় কাটার বিষয়ে সচেতন হবে। পাহাড়ে অবৈধ দখল ও কাটতে দেখলে তারা সরাসরি থানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে পারবে।’
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
১৫ উপজেলার মানুষ
চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হলেও বিকেল থেকে আর হয়নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নগরীর সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ছিল। ঝড়ে অধিকাংশ উপজেলায় গাছ ও ডালপালা ভেঙে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তার, উপড়ে গেছে খুঁটি। ফলে সকাল থেকেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ১৫ উপজেলার মানুষ। সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, রাউজান, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও চন্দনাইশে বিদ্যুৎ সরবরাহ গতকাল রাত পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১ এর সভাপতি চৌধুরী হাছান মাহমুদ আকবরী বলেন, ঝড়ের প্রভাবে অসংখ্য জায়গায় গাছ পড়ে, তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরবরাহ সচল করতে আমাদের কারিগরি টিম কাজ করছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক করতে আরও সময় লাগতে পারে।