দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য রাজধানীবাসীর কাছে দিন দিন বাড়ছে মেট্রোরেলের চাহিদা। সড়কে নানা জটিলতায় মানুষের চলার ভরসা এখন মেট্রোরেল। কিন্তু ঝড়–বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক কারণে কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটিতে হুটহাট মেট্রোরেল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রাকৃতিক কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে নিয়মিত যাত্রীদের যেন কষ্টের সীমা থাকে না।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আধঘণ্টা বন্ধ ও পরে ১৫ মিনিট পরপর চলায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। শুধু ওইদিনই নয়, চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মেট্রোরেলের এক যাত্রী আল আমিন বলেন, প্রতিনিয়ত যানজট পাড়ি দিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় হাতে নিয়ে অফিসে যেতে হতো। কিন্তুমতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করায় ঘড়ির টাইম মেপে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মিরপুর থেকে অফিসে চলে যাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি মেট্রোরেল হুটহাট বন্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সময় ঘড়ির টাইম মেপে যাত্রা করা যাচ্ছে না।
আরেক যাত্রী বলেন, গত সোমবার মিরপুর এলাকায় অনেক জায়গায় হাঁটুপানি ছিল। সেই সঙ্গে ছিল গাড়ি সঙ্কট। বৃষ্টি থাকায় রিকশা ভাড়াও কয়েকগুণ বেশি। তাই মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য দুপুরের দিকে পল্লবী স্টেশনে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ। প্রয়োজনের সময় যদি ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে কী লাভ এই মেট্রোরেল দিয়ে?
চাকরিজীবী কাউসার বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থেকে জরুরি কাজে মতিঝিল যাওয়ার কথা ছিল। তাই মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশনে যাই। কিন্তু মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে ৩০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এই যে হুটহাট মেট্রো বন্ধ হয়ে যায়, এজন্য বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয়।
এদিকে ডিএমটিসিএলের একটি সূত্র জানায়, হুটহাট মেট্রো বন্ধ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আগের চেয়ে বেশি তৎপর হয়েছে। কারিগরি ত্রুটির জন্য মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকলেও কীভাবে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, মানুষ কম সময়ের মধ্যে কোথাও যেতে চাইলে মেট্রোরেলকে ভরসা করে। আর দিন দিন মেট্রোরেলের চাহিদা বাড়ছে। ঠিক এ সময়ের মধ্যে হুটহাট মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ে যায়। যার জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মেট্রোরেলে। তাই র্কর্তৃপক্ষের উচিত কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা।
এদিকে, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত যাচ্ছে মেট্রোরেল। জুন থেকেই এ পথের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে। এমআরটি চারের আওতায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সময় লাগবে ১৫ মাস। এরপরই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। ঢাকার ভেতরে পাতাল পথে আর রাজধানীর বাইরে উড়াল পথে চলবে এই রুটের মেট্রোরেল।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন–৪ (মেট্রোরেল–৪) এর আওতায় রাজধানীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরকে যুক্ত করা হবে। কমলাপুর থেকে নতুন এই পথটি যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড, চট্টগ্রাম রোড ও কাঁচপুর হয়ে যাবে মদনপুর পর্যন্ত। এই পথের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে এই জুনে।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর মেট্রো লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করার টার্গেট অনেক আগেই নেওয়া। যদিও মূল নির্মাণে কাকে কারা অর্থায়ন করবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্টদের আশা, সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হওয়ার আগেই অর্থায়নের বিষয়টিও নিশ্চিত হবে।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, জুনের প্রথম দিক থেকেই মোবিলাইজেশন শুরু হবে। দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিটির জন্য অফিস নিতে হবে। প্রয়োজনীয় অফিস ও লোকবলের সংস্থানের পর দ্রুতই কাজটি শুরু হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই হয়ে গেলে একটা কনক্রিট (চূড়ান্ত) জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। তার সঙ্গে বেসিক ডিজাইন হয়ে গেলে সম্ভাব্য খরচও জানা যাবে। তখন বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও সরকারের সঙ্গে অর্থায়নের বিষয়ে কথা বলা যাবে এই কাজ শেষ হলে রাজধানীর যোগাযোগের অন্যতম হাব হয়ে উঠবে কমলাপুর। যেখান থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য থাকবে আরও তিনটি মেট্রো লাই