ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কলাপাড়া উপকূলে চলছে দুর্গত মানুষের আহাজারি। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করলেও এখনো প্রচণ্ড বেগে বইছে দমকা বাতাস, থেমে থেমে হচ্ছে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। এতে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে পরিবার–পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন মুজিব কিল্লায়। অগণিত গাছপালা উপড়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সড়ক থেকে গাছপালা অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদ্যুৎ ও মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সমগ্র উপজেলায়। কলাপাড়া পৌর শহরের নাগরিকরা দু’দিন ধরে পানিসেবা পাচ্ছেন না।
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ তাদের জীবন রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও পরিবার পরিজন নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
এখনো পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শুকনো ও রান্না করা খাবার দুর্গত এসব মানুষের মাঝে সরবরাহ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এর আগে উপজেলার কাউয়ারচর এলাকায় রোববার দুপুরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৪) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কলাপাড়ায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ১৩০ জনে। সম্পূর্ণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১৪০টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত ৬২০টি পরিবার। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে দুর্গত মানুষের মাঝে প্রতি বেলায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনো দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরিতে দুই/একদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, পাউবো’র পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সীপাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলি, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড় কলবাড়ি, খ্রিস্টান পাড়া, চরান্ডা, চরম মোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া বেড়িবাঁধের প্রায় ১৯ কি.মি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, রেমালের তাণ্ডবে উপজেলার ২৪শ’ ৬৫টি পুকুর এবং ৭৭৮টি ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপজেলার ২০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকের করলা, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, গিমা কলমি শাক, চিচিঙ্গা, শসা, কলা ও আমের বাগান। দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণে কাজ চলমান রয়েছে। বনবিভাগ, কৃষি, শিক্ষা, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে লিখিতভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকিতে আমরা দুর্গত মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুর্গত মানুষের জন্য ১৩০ টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শুকনো খাবার বরাদ্দ পেয়েছি।