খুলনায় মানুষের মুখে মুখে এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদের নাম। কারণ, ঝিনাইদহের সংসদ–সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় তাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
এখন অবধি আটক আসামিদের মধ্যে খুলনার তিনজন। ওই দুজন ছাড়া অন্যজন হলেন শিমুল ভূঁইয়ার ভাইপো তানভীর ভূঁইয়া। সংসদ–সদস্য হত্যা ও আটক সন্ত্রাসীদের কথা এখন খুলনার টক অব দ্য টাউন।
২২ মে ঢাকায় গ্রেফতার হন খুলনার ফুলতলা উপজেলার বাসিন্দা ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) শীর্ষ নেতা শিমুল ভূঁইয়া ও তার ভাইপো তানভীর ভূঁইয়া। এরপর ২৩ মে ভারতে আটক হয়েছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কসাই জিহাদ।
ফুলতলা পুলিশের তথ্যমতে, শিমুল ভূঁইয়ার ভাইপো তানভীর ভূঁইয়ার নামে অস্ত্র মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। দিঘলিয়া পুলিশের তথ্যমতে, জিহাদ হালদার ওরফে কসাই জিহাদের নামে হত্যাচেষ্টা ও মারামারিসহ তিনটি মামলা রয়েছে। তারা আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল।
শিমুল ভূঁইয়াকে এলাকায় ১৫–২০ বছর দেখা যায়নি। সংসদ–সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যা মামলায় আটক হওয়ার পর মিডিয়ায় তার ছবি অনেকেই দেখেছেন। খুলনাঞ্চলে শিমুল ভূঁইয়া এক আতঙ্কের নাম। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য ও আপন ভাই শিপুল ভূঁইয়া দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বরত রয়েছেন। স্ত্রী ও ভাইয়ের জনপ্রতিনিধি হওয়ার পেছনে শিমুল ভূঁইয়ার ভূমিকার বিষয়টি সবার জানা। তার স্ত্রীর নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।
এদিকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, খুলনা–৫ আসনের সংসদ–সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলার চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনের সঙ্গে শিমুল ভূঁইয়ার পরিবারের ছিল সুসম্পর্ক।
জানা যায়, ফুলতলার চেয়ারম্যানবাড়ি খ্যাত পরিবারটির সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরদার, তার ছেলে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বাদল ও তার ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যার পেছনে শিমুল ভূঁইয়ার হাত রয়েছে। এসব হত্যা মামলায় শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাই শিপলু ভূঁইয়া ও শিমুল ভূঁইয়ার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা আসামি।
শিমুল ভূঁইয়া ১৯৯১ সালে খুলনার ডুমুরিয়ায় এমরান গাজী হত্যার পর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। এরপর ১৯৯৮ সালে ১৮ আগস্ট ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেমকে গুলি করে হত্যা করেন। এই ঘটনায় তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান শিপলু ভূঁইয়াকেও আসামি করা হয়।
১৯৯৯ সালের ২০ মে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে গণেশকে গলা কেটে হত্যা করেন। খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন মামলার আসামি থাকা অবস্থায় ২০০০ সালে ২৫ মে তিনি যশোর এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জামিন পান। এর আগে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট আবু সাঈদ বাদলকে হত্যার ঘটনায় কারাগারে থাকা অবস্থায় শিমুলের নামে মামলা হয়।
এদিকে জিহাদ হালদার ওরফে কসাই জিহাদের এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা এলাকাবাসী বিশ্বাসই করতে পারছে না। তাদের ভাষ্যমতে, জিহাদ ছোটবেলায় খেলাধুলা করত এবং ভালো ছেলে ছিল। এরপর সে রংমিস্ত্রির কাজ করত।
নিহত আবুল কাশেম সরদারের ছেলে মো. সেলিম সরদার বলেন, ভূঁইয়া পরিবারের রোশনালের শিকার স্থানীয় সরদার পরিবার। এ পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যা করেছে তারা। যে হত্যা মামলাগুলোর বিচার এখনো পায়নি। এবার সংসদ–সদস্য হত্যা মামলার বিচার হবে কি না, এটা দেখার অপেক্ষায়।
শিমুল ভূঁইয়ার ভাইজি তন্বী বেগম বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা বাড়িতে নেই। সে অসুস্থ। ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছে। পুলিশ এসে তানভিরের পাসপোর্ট নিয়ে গেছে।
শিমুল ভূঁইয়ার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান শিপলু ভূঁইয়া জানান, রাজনীতি করি। সবার সঙ্গেই সম্পর্ক আছে। ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আমাকে কেমন জানে, সেটা জানি না।
জিহাদ হাওলাদারের বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার তার ছেলের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, এমন ছেলে আমার দরকার নেই।
জিহাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম বলেন, বছরখানেক ধরে সে ভারতে থাকে। কোনো সময় আমাদের টাকাপয়সা দেয়নি।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে ব্যস্ত। শিমুল ও জিহাদের বিষয়ে আমরা কোনো তদন্ত করছি না। এটা আমরা জানি না।