গুটি জাতের আম পাড়ার মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে রাজশাহী জেলার বাগানগুলো থেকে আম পাড়া। জেলা প্রশাসনের ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জেলার চাষিরা কেবল পরিপক্ব গুটি আম পাড়তে পারবেন। গুটি আম এখনো ভালোভাবে পরিপক্ব না হওয়ায় সীমিত আকারে কিছু বাগান থেকে আম পাড়া হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমের ফলন কিছুটা কম হতে পারে।
এদিকে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নওগাঁ জেলায় এবার চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে। ওই দিন থেকে গুটি জাতের আম সংগ্রহ করা যাবে। সুস্বাদু আমের স্বাদ নিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর নওগাঁ থেকে ২২০ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। এবার নওগাঁ থেকে আমাদের টার্গেট, মিনিমাম ৫০০ টন আম রপ্তানির। চলতি মৌসুমে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে নওগাঁ জেলায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো গুটি আম পাকা শুরু হয়নি বলে বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম পাড়ছেন। পবার আম ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, বানেশ্বর হাটে আম বিক্রির জন্য নিয়ে যাব। আজ (গতকাল) প্রথমদিন খুব বেশি আম পাড়ব না, এখনো সব আম পাকেনি। বাজার জমতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
আরেক আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, সকালে রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া ও কোর্ট এলাকায় তার বাগান রয়েছে। সব না পাকায় সীমিত আকারে আম পেড়েছেন। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিন আমের দাম ঠিকঠাক বলা যাচ্ছে না। তবে ফলন কম হওয়ায় আশা করছি ভালো দাম পাব।
গত ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসন প্রকাশিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর গোপালভোগ ২৫ মে থেকে, লক্ষন ও হিমসাগর ৩০ মে থেকে, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি–৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি–১১ আম পরিপক্ব সাপেক্ষে পাড়া যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহীতে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। আর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে।
এদিকে নওগাঁ জেলায় এ বছর ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের আশা করছে বাগান মালিক ও কৃষি বিভাগ। ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি আমচাসহ দেশি–বিদেশি মিলে প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে– গুটি (স্থানীয় জাতের আম) ২২ মে, গোপালভোগ ৩০ মে, ক্ষিরশাপাত, হিমসাগর ২ জুন, নাকফজলি ৫ জুন, ল্যাংড়া–হাড়িভাঙ্গা ১০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, ফজলি ২৫ জুন এবং আশ্বিনা/বারি–৪/বারি–১১/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই পাড়ার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে।
সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আমচাষি নূর বলেন, আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের পরিমাণ। আমের মুকুল থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘাতে প্রায় ৩০–৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে এ বছর খরায় আরও ৪–৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ কিছুদিনের মধ্যে আম বাজারজাত করা হবে। গাছে আমের পরিমাণ কম হলেও দাম ভালো পেলে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।