মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মসজিদের পাশেই সামান্য অনাবাদি জমি। কিছুদিন ধরে সেখানে অনেকটা গাজর ও ধনিয়া গাছের মতো দেখতে এক ধরনের আগাছা দেখতে পান ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন আলী আহাম্মদ। এতে সাদা সাদা ফুল হয়। দেখতেও সুন্দর। ধীরে ধীরে আগাছাগুলো বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জমিটি ভরে যায়। গত বুধবার একজনকে নিয়ে আগাছাগুলো কেটে ফেলেন আলী আহাম্মদ। এর পর তাদের শরীরে চুলকানি দেখা দেয়। আলী আহাম্মদ বলেন, আমরা জানতাম না এটা ক্ষতিকর আগাছা। তাই নাকমুখ না ঢেকেই এগুলো কেটে ফেলি। পরে দেখি গা–হাত–পা চুলকাচ্ছে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যায়।
আলী আহাম্মদের মতো অনেকেই জানেন না, ভয়ংকর এই আগাছার নাম পার্থেনিয়াম। এটি পরিবেশ, ফসল, মানবদেহ ও গবাদি পশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পার্থেনিয়ামের ইংরেজি নাম perthenium এবং বৈজ্ঞানিক নাম parthenium hysterophorus. এর জন্ম উত্তর আমেরিকায়। তবে বিভিন্ন আমদানি খাদ্যপণ্যের সঙ্গে এটি বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়ক ও অনাবাদি জমি ভয়ংকর এই আগাছায় ভরে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ ও কৃষির নীরব ঘাতক পার্থেনিয়াম। এটি দ্রুত বংশ বিস্তার করে। প্রতিটি আগাছা থেকে বীজ জন্মে ১৫ থেকে ২০ হাজার। ফলে দ্রুতই কৃষিজমিতে এই আগাছা ছড়িয়ে পড়ছে। গবাদি পশু চরানোর সময় এটি গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়। এ ছাড়া তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। গাভি পার্থেনিয়াম খেলে দুধ তিতা হয়। ওই দুধ অনবরত কেউ খেলে সেই মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। পার্থেনিয়াম আরও ছড়িয়ে পড়লে জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্তসহ মানুষ ও গবাদি পশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।
মেহেরপুর–কুষ্টিয়া, মেহেরপুর–চুয়াডাঙ্গা, মুজিবনগর–দর্শনা প্রধান সড়ক এবং মেহেরপুর–শোলমারী–কাথুলীসহ জেলার প্রায় সব রাস্তার দুই ধারে এ বছর ব্যাপকহারে পার্থেনিয়াম দেখা যাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে এবং অপসারণ বিষয়ে কাউকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠেছে এই ক্ষতিকর আগাছা।
সদর উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, চার–পাঁচ বছর আগেও এই আগাছা আমাদের চোখে পড়েনি। এখন জেলার প্রতিটি সড়কের ধারসহ অনাবাদি জমি পার্থেনিয়ামে ভরে গেছে।
মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মাঞ্জারুল ইসলাম বলেন, উপজেলার প্রায় সব রাস্তায় এই আগাছা দেখা যাচ্ছে। ক্ষতিকর আগাছাটি অপসারণে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, পার্থেনিয়াম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই আগাছার মধ্যে এক ধরনের কেমিক্যাল আছে, যা শুধু ফসলেরই নয়, মানবদেহ ও
গবাদি পশুর ক্ষতি করতে পারে। মানুষ এর সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, ব্রঙ্কিওলাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এটা দ্রুত নির্মূল করা প্রয়োজন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, পার্থেনিয়াম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দিবসে এর ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। এটি নির্মূলে সরকারি কোনো বাজেট নেই। তবে কৃষকদের আমরা এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং পরিবেশ রক্ষার্থে এটি নির্মূল করা জরুরি বলে প্রচার চালাচ্ছি। এই আগাছা পরিষ্কারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা থাকলে ভালো হয়। পা ভালোমতো ঢেকে রাখতে হবে।