ধর্মমত বা মতবাদ যতই সুন্দর নয়নকাড়া পরিশিলীত জাঁকালো হোক না কেন, তা মানুষের মুক্তি তথা প্রাকৃতিক নিয়মের গন্ডি থেকে অবমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে কি?
মানুষ বরাবর দুটি বন্ধনীতে আবদ্ধ; যাকে বলা চলে জন্ম ও মৃত্যু। বলুন কোন মতবাদ আজ পর্যন্ত সফল হয়েছে, মানুষকে এমন অমোঘ শৃঙ্খলদ্বয় থেকে অবমুক্ত করতে? গোটা বিশ্ববাসি একই প্রাকৃতিক দানসমূহ উপভোগ করে তবে বেঁচে আছে। ক্ষুধায় অন্ন, তৃষ্ণায় জল। ফুসফুস চালু রাখার জন্য অক্সিজেন ইত্যাদি… ব্যাত্যয় খুঁজে পাবার নয়, যা নিঃশঙ্কোচে তা বলা চলে।
ধর্মীয় উৎকর্ষতা হলো মানুষের সেবাদান। মানুষের জন্যই ধর্মীয় মতবাদ, তা মানুষই যদি বিপণ্য হলো, তবে তেমন মতবাদ, আসলেই ইবলিসের জুড়ে দেয়া মতবাদ মাত্র। দেহের কামনা, চোখের লোভ ও সাংসারিক বিষয়ক অহংকার অন্ধকারের দ্বারা সৃষ্ট উম্মাদনার ফলে তেমন মতবাদ সমাজে হয়েছে প্রচলিত, আর ওগুলো বাজার পেয়েছে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে, যেমন বাজার ভরে আছে ভেজাল পণ্যে; ক্রেতাগণ নিরুপায়, কিনে নিচ্ছে নিজেরাই আত্মহননকারী অখাদ্য কুখাদ্য দ্রব্যদি।
ধর্মীয় মতবাদের ক্ষেত্রটি অধিক ভয়ঙ্কর; ভক্তবৃন্দ বুঝতেই পারে না অমোঘ বাণীর মর্মকথা, মর্মার্থ, যা নিয়ে তারা দিবানিশি কপচাচ্ছে। যে ভাষা বা বাক্য ভক্ত আদৌ বুঝতে পারে না, অর্থ বোঝে না, তা নিয়ে মনে জাগরণ বা উম্মাদনা জাগে কি করে? অবশ্যই চিরাচারিত প্রথা যা পূর্বের চৌদ্দ খান্দান চর্চা করে ফিরছে, পেয়েছে সমাজে প্রতিষ্ঠা, রুটি–রুজির ব্যবস্থা আসে তেমন পথে, তাই অত পান্ডিত্যের কোনো প্রয়োজন নেই, ধানদুর্বা বহাল থাকা চাই যে কোনো মূল্যে।
ধর্ম প্রতিষ্ঠার নামে মানব নিধন, লুটতরাজ, রাহাজানি, হলো দস্যুতার নতুন সংস্করণ। লুটের মালামাল শব্দ পরিবর্তনের ফলে জায়েজ বা আইনানুগ করা হয় ‘গণিমতের মাল’ বলে; হেথা প্রত্যক্ষ লুটেরাদের থাকে একটা অংশ আর দলপতি বা সর্দারের জন্য রেখে দেয়া হয় ১/৫ ভাগ; বাস, লুটতরাজ আইনানুগ হয়ে গেল, প্রহসন ছাড়া অধিক কি আর বলা যাবে।
কারো মালিকানাধীন সম্পত্তি জবরদখল জায়েজ করার জন্য প্লাকার্ড ঝুলিয়ে দেয়া হলো, ‘খোদার ঘর’ বাস জায়েজ, সবই জায়েজ। মানুষ সৃষ্ট খোদার হাতে, খোদার মহান পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে, যেথা মানুষের নেই কোনো অধিকার; অবশ্য খোদার চিরশত্রæ অভিশপ্ত ইবলিস বরাবর খোদার পরিকল্পনা বানচাল ভুলন্ঠিত করে আসছে সেই এদন–বাগান থেকে, কুপরামর্শ নিয়ে মানুষের ক্ষতি সাধন ইবলিসের আজন্ম ব্রত। আর ইবলিসা¯্রতি কুলাঙ্গার সম্প্রদায় ধর্মের লেফাফা কপালে বেধে, নগর জনপদ কচুকাটা করে আসছে আজীবন। ইতিহাসের ছাত্র–ছাত্রী মবালগ নৃসংসতার সবটুকু খবর রাখে। অবশ্য সমাজে অপকর্ম পুষে রাখা পার্টি তেমন সঠিক ইতিহাস বাতিল করেও রাখে কখনো কখনো।
ধর্মীয় ইতিহাস বলুন আর ধর্মীয় মতবাদ তথা কেচ্ছাকাহিনী বলুন, ভক্তমাত্রই পুরো অধিকার রাখে নিজ নিজ ভাষায় তা সম্যক অনুধাবন, উপলব্ধিকরণ, মর্মার্থ পুরোটা জেনে নেবার।
আমাদের দাবি, ধর্মীয় মতবাদ তথা ধর্মীয় গ্রন্থ যেন সকলে নিজ নিজ ভাষায় পরিষ্কার বুঝতে পারে, তেমন ব্যবস্থা আসু গ্রহণ করার, আর তাদেরই সে ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে যারা ধর্মপ্রচার কাজে রয়েছেন নিবেদিত।