বর্তমান যা হলো চলমান বা ঘটমান; অতীত, তা তো বিগত। বিগলিত পতীত কেবল হাসায় কাঁদায়, মনটাকে বেধে রাখে বেদনায়, অস্থিরতায়, অন্তরায় ঘটায় পথ চলায়। স্মৃতির অতীত কেবলই ব্রেক দাবায় আলতো ঝাকুনি দেয় পথ চলায়, কেবল ভেলসিটি কমায়, পরিষ্কার হয়েও মনে হয় দিবালোকে চলেও যেন মেঘলা বায়। প্রগতি রূখে দেবার ক্ষমতা অতীত রাখে না, তবে আগন্তুকের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়, দুর্বিসহ বোঝা চাপিয়ে দেয় অভিযাত্রীর মাথায়, উদ্দেশ্য বিপ্লবী পথিমধ্যে নাকাম হয়, থেমে যায়।
অন্তরীক্ষ থেকে জীবনের মালিক নিয়ত উৎসাহ দেয়, শক্তি যোগায়, কন্টকগুলো সরিয়ে দেয়, যেন পথিকের পাদযুগল অক্ষত রয়, প্রবলগতিপায় পথিমধ্যে থেমে যেতে না হয়; তবেইতো হবে যুদ্ধে বিজয়!
অতীত নিয়ে কেন পস্তাতে হবে, সেকি কভু ফিরে আসবে, তবে, যাকে তুমি হারালে অনাদরে, পরিশেষে বুঝতে পারলে, বিষাক্ত আবহাওয়া সৃষ্টির পিছনে ছিল কতোটা তোমার ভূমিকা! তুমি আছো, বর্তমান নিয়ে, তোমার বিষকাঁটা দিয়ে আর কাওকে করোনা আঘাত। তবে সাধ্য নেই গন্ধগোকুল নিজেকে স্নাতশুভ্র করে সুগন্ধ ছড়ায়; ওর সাধ্যের সম্পূর্ণ বাইরে তেমন বদলে যাওয়া, নিরুপায়! খাটাশ যা পারে তা হলো ক্ষণকালের জন্য নিরব হওয়া, হাসি কাশি দিয়ে পথিকের গতিনাশ না করা।
দুষ্টচক্র অতীতের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নিথর করে দিতে চাচ্ছে গোটা সমাজ, গোটা বিশ্ব। এটা দুষ্টের কুটচক্র। নির্মাতা চলমান, যার নেই আহার নিদ্রা, সদাজাগ্রত নেগাবান মাবুদ সকলের জন্য রাখেন দরদ, সমানে সমান। তিনি খুশি হতে পারেননা লগ্ন পূজা দেখে। আহ্নিকগতি বার্ষিকগতি কে কখন যে ভাগ করেছে। দিনপঞ্জি কার হাতে যে হয়েছে সৃষ্টি তা মহান অনন্তকালস্থায়ী মাবুদের জানার কথা নয়। তাঁর কাছে জন্ম মৃত্যু উভয়ই সমান। আমি চাকুরী করেছি, দেশ–বিদেশ ঘুরে ঘুরে কাটাতে পেতাম বেজায় আনন্দ, লোচনদ্বয় তৃপ্ত হতো নয়নকাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করে। আমি মুগ্ধ, আমার নির্মাতা আমার মত করে আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অদৃশ্য মাবুদের দৃশ্যমান প্রতিভু হিসেবে; আমি সে ব্যাপারে হলাম নিশ্চিন্ত। কানে কানে চুপিসারে নিয়ত দিচ্ছেন প্রেরণা। আর সে কারণেই ভুতুরে বিনস্ট বিবেকের বেদবাক্যে ভেদাভেদ করি না, স্বার্থান্বেষীদের কর্ণযপে পড়ে না মনে কোনো প্রতিক্রিয়া। চোর তষ্কর এসে অমৃতবাণী গুনালো, তা যতই সুললীত কাব্য হোক না কেন, তষ্করের কি অধিকার রয়েছে সাধুবাদে! আর বিগত অতীত। আমাদের পদস্খলনের ফলে অনেক কিছু হারিয়েছি, বানরের হাতে মশাল তুলে দেয়া সুবুদ্ধির পরিচায়ক হতে পারে না। তবে পস্তাতে হবে না। আমরা প্রজন্ম বেঁচে আছি, নতুনের কেতন গেয়ে চলছি। মাবুদ হলেন মোদের সনাতন, তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিলেন। আমাদের নতুন করে গড়ে তুলবেন।
নতুন বিশ্ব জড়াব্যাধি মুক্ত আলোয় আলোয় ঝলমল, নূরুল আলম থাকবেন হেথা নিয়ত আলোর রাজ্য ধরে রাখতে। মৃতের গন্ধ খুঁজে পাবে না, পাবে না বিষের জ্বালা, থাকবেনা ফণী বিষদাঁত তাক করে। যেমন অতীতে শুনেছি, বিশ্বপিতা নাকি হাতুড়ি নিয়ে নিয়ত ধাওয়া করছে অপরাধির পিছু পিছু; কোনো সুযোগ নেই অনুতাপের…। ফিরে আসার, হাজার কোটি হোকবা জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হতে হবে। নিয়ত জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা সরীসূপের লকলকে জীভের মত দূর থেকেই ছোঁমেরে তুলে নিতে পারে আপন শিকার। এ সকল প্রচার প্রচারণা কেবল লুটেরাদের প্রচার, তা শুনার সময় আছে কার! নারে বন্ধু, পতীত অতীতকে বলো আলবিদা! হাতের মধ্যে যতটুক সময় পাও, যেথা থাকবে কিছু করনীয় তোমার আমার কল্যাণ করার, এসো কায়মনবাক্যে উক্ত সময়টুকু কাজে লাগাই কেবল কল্যাণের জন্য; যাকে বলা হয় ‘আমলে সালেহান’, অর্থাৎ সৎকর্মে, যা হবে বেদবাক্যের মোদ্দাকথা, নির্যাসটুকু। সময়টাকে যে তুমি ভাগ করলে, জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, সময় মাপার সে ফিতেটা কে তৈরি করলো? মানুষের কৃত কোনো কিছুই নিখুঁত হতে পারে না। তাছাড়া ক্ষুৎপিপাসাকাতর মানুষগুলো শান্ত সুস্থ পরামর্শ দিতে পারে না, চাই তার চাহিদা পূরণ। উপদেশ পরামর্শ দিতে পারেন, দিয়েছে সেই নিখুত ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমি, না জন্মেছেন পতীত আদমের কলুষিত বীর্যের দ্বারা, পার্থিব স্বার্থের টানে যাকে পারেনি আকৃষ্ট করতে, অন্ধ বানাতে, বিপরীতক্রমে প্রেমের তাগিদে গোটা বিশ^বাসিকে করলেন শৃঙ্খলমুক্ত নিজের পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে।
ক্ষণকালীন ক্ষয়িষ্ণু বস্তুসমূহ খুঁজতে গোটা বিশ্ব চষে ফিরতে দেখেছি, মানুষ পর্যন্ত নিপাত করতে দেখেছি, তা অনন্ত প্রেম নির্ঝর সংগীটিকে খুঁজতে আপত্তি থাকবে কেন। তা ছাড়া তিনি তো ব্যক্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ত দাঁড়িয়ে করাঘাত করে চলছেন। অতীত যেমন আমাদের হাতে নেই, অনাগত ভষ্যিতের উপরও নেই কোন প্রভাব মানুষের হাতে।
আসুন বর্তমান নিয়ে যত্নবান হই। যা হবে সুবিবেচকের সমযোচিত কর্তব্য।