দেশব্যাপী চলতে থাকা তাপদাহের প্রভাব পড়েছে মুরগির বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারভেদে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দর বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ ও আলুর মতো নিত্যপণ্য। তবে গরমের মধ্যে বেশি বিক্রি হলেও লেবুর দর কিছুটা নাগালে রয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগি মরে যাচ্ছে। এ কারণে সরবরাহে কিছুটা টান পড়েছে। অন্যদিকে গরমের কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে পারছেন না। শুকিয়ে যাচ্ছে সবজি। এসব কারণে বাজারে মুরগি ও সবজির দাম বাড়তি।
গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার ঢাকার তেজকুনীপাড়া, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে দুই জাতের মুরগির দর ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে কোথাও কোথাও ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকাও হাঁকছেন বিক্রেতারা।
তেজকুনীপাড়া এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদের কয়েকদিন পর মুরগির দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন গরমে মুরগি মারা যাওয়ায় দাম বাড়ছে।
প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রচণ্ড গরমে ছোট খামারিদের মুরগি বেশি মারা যাচ্ছে। তবে করপোরেটদের খামারে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তারপরও তাদের চুক্তিভিত্তিক খামারিরা বেশি দামে মুরগি বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম কেনা যাচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও আলুর। ঈদের পর পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকার আশপাশে। এর পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গতকাল কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত চার–পাঁচ দিনে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একইভাবে দাম বেড়েছে রান্নাঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় আরেক মসলাপণ্য রসুনের। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি রসুনের। এ রসুনের কেজি এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। একই সময়ে চায়না রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা দরে। ঝাঁজ বেড়েছে আদারও। ৮–১০ দিনের ব্যবধানে আমদানি করা আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। দেশি আদার দাম আরও বেশি। সপ্তাহের ব্যবধানে এ আদার দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ–রসুনের খুচরা বিক্রেতা আলী এরশাদ বলেন, পাইকারি বাজারে কয়েক দিন ধরে রসুনের দাম বাড়তি। অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেশি থাকায় দাম বাড়তে শুরু করেছে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির বাজারদরের তথ্যমতে, ঈদের সপ্তাহখানেক আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
আলুর বাজারও কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগে আলুর কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। গতকাল বাজারভেদে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। গরমের কারণে শসার চাহিদা বেড়েছে। তাতে ৮–১০ দিনে পণ্যটির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গতকাল শসার কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। একই সময়ে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১১০ টাকা দামে। অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে, কাঁকরোল ও বেগুনের দাম বেড়েছে। কাঁকরোল ও বেগুনের কেজি ৭০ থেকে ৮০ এবং পেঁপে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে লাউ, কুমড়া, টমেটো, ঢ্যাঁড়শ, পটোল, করলার মতো সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তেজকুনীপাড়া এলাকার সবজি বিক্রেতা শাহীন মিয়া বলেন, গরমের কারণে অনেক সবজি শুকিয়ে ওজনে কমে যাচ্ছে। কৃষকরা সবজি তুলতে পারছে না। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।
গরমের কারণে লেবুর বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। যদিও সেই তুলনায় দাম তেমন বাড়েনি। মাঝারি আকারের এক ডজন লেবু কেনা যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। তবে বাজারে চাল, ডাল, তেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্যগুলো আগের মতোই উচ্চমূল্যে স্থির রয়েছে।