শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কের বাতকুচি পাহাড়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছে ৪০–৪৫টি হাতির একটি দল। দিনে জঙ্গলে গা–ঢাকা দিয়ে থাকলেও, রাত নামতেই খাবারের খোঁজে তারা হানা দিচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই হাতির পাল ঢুকে পড়ে জঙ্গলে। সামনে কাউকে পেলেই আক্রমণ করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান কৃষক উমর আলী। দুই মাসের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে এ নিয়ে দু’জন প্রাণ হারালেন।
স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ ধরে এক দল বুনো হাতি সীমান্তবর্তী বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ক্ষেতে নেমে খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে ফসল নষ্ট করছে। বৃহস্পতিবার রাতেও এক দল হাতি বাতকুচি গ্রামে ধানক্ষেতে আসে। এ সময় উমরসহ গ্রামবাসী তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে চিৎকার করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে হাতির পাল একটু পিছু হটলে নিজ বাড়ির দিকে যেত থাকেন উমর। পথিমধ্যে কয়েকটি হাতি তাঁকে ঘিরে ফেলে পা দিয়ে পিষে ও শুঁড়ে পেঁচিয়ে হত্যা করে।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত কৃষকের পরিবারকে সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এর আগে ২৯ মার্চ একই উপজেলার নাকুগাঁও এলাকায় ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির ধাওয়া খেয়ে জেনারেটরের খোলা জিআই তারে জড়িয়ে উসমান আলী নামে একজন মারা যান। বাতকুচি গ্রামের হাসমত আলী ও আব্দুল কাদিরসহ কয়েক কৃষক জানান, সন্ধ্যা নামলেই হাতিগুলো সড়কে ও লোকালয়ে চলে আসছে। হাতির পাল ফসলের ক্ষেতে এসে তাণ্ডব চালায়। এ সময় বাড়িঘর, গাছপালা ভাঙচুর করে। হাতির বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কে আছি। হাতির ভয়ে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে।
আদিবাসী নেতা লুইস নেংমিনজা বলেন, গারো পাহাড়ে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের বসবাস। এখানকার মানুষকে হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ জন্য দিন দিন হাতির তাণ্ডবে প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৪ সাল থেকে এক দশকে শুধু গারো পাহাড়ে হাতির আক্রমণে ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। একই সময়ে মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩০টি হাতি মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল।
পাহাড়ের জমিতে চাষাবাদ করায় হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান। তিনি বলেন, হাতিকে বিরক্ত না করলে কাউকে বিরক্ত বা হামলা করে না। বনভূমির জায়গায় বাসস্থান ও চাষাবাদ করা যাবে না। যেগুলো দখল হয়েছে তা উদ্ধার করতে হবে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম এর আগে বলেছিলেন, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরে ১১৯ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় সোলার ফ্যান্সিং স্থাপন, অভয়ারণ্য গড়ে তোলাসহ টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।