আপনি বলছেন, আপনার সাধ জেগেছে, তা একটা কিছু পাওয়ার; তা আমার তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়, আপত্তির প্রশ্নই জাগে না। বরং সহ মানব হিসেবে, আমার কিছু পজেটিভ দায় রয়েছে, আপনার ইপ্সিত বস্তু নাগালে পেতে যথাযথ সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
তা প্রশ্ন করি, আপনার আকাঙ্খার বস্তুটি কী এবং তা কোথা থাকে বা পাওয়া যাবে? সে প্রশ্নে উঠে আসে, উক্ত সঙ্কল পূর্ণ করার জন্য আপনাকে একটা কিছু করতে হবে! আপনার অভিলাষীত দ্রব্যের ধরণ অবশ্যই আপনাকে সবিশেষ জানাতে হবে।
আলোচনার স্বার্থে একটি বস্তু ধরে নেয়া যেতে পারে, একটি আপেল, অবশ্য বিশেষ জ্ঞানী নিউটন একটি আপেলের পতন দেখে তার চিন্তার রাজ্য খুলে গিয়েছিল, আর নিয়ত গবেষণার ফলে আবিষ্কার করেছিলেন ‘মধ্যাকর্ষণ’ শক্তি। আমরাও সেই একটি আপেলের প্রশ্নে আসি। আপেলটি কোথা পাওয়া যাবে? অবশ্যই বাগানে, আপেল বৃক্ষে। প্রশ্ন হলো, আপেল একটি ফল; জানতে হবে তা গোটা বৎসরজুড়ে ফলে কিনা! অথবা আপেল বাগানে যদি যেতে হয় তবে, যে সিজনে আপেল পরিপক্ক হয়, অবশ্যই আমাকে তেমন সময়, উক্ত বাগানে পৌছাতে হবে। বর্তমানে আমি কোথা আছি আর আপেল বাগান কোথায়, কতদূরে রয়েছে অবস্থানরত। আমাকে জানতে হবে, আমার অবস্থান আর উক্ত বাগানের অবস্থান। ছাত্রাবস্থায় আমি একটি আপেল বাগান পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ওটি সুইজারল্যান্ড। বাগানের মালিক আমাকে বললেন, আমার ইচ্ছামত, একটা আপেল, নিজ হাতে তুলে নিতে। আমার আনন্দ তুঙ্গে উঠে গেল।
এবার আলোচনায় আসা যাক, অভিলাষীত বস্তু প্রাপ্তীর জন্য আমাকে প্রস্তুত হতে হবে, যেতে হবে হেথা যেথা উক্ত বস্তু আছে অবস্থিত, আর তেমন ক্ষেত্রে পৌছা যদি আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়, তবে ভিন্নতর উপায়, যদি থাকে, তবে তেমন পথ অবলম্বন করতে হবে। সেই আপেলের প্রশ্নে আসা যাক, বাজারে হরদম বারো মাস আপেল পাওয়া যাবে। চলুন বাজার থেকেই সংগ্রহ করি। তেমন ক্ষেত্রে প্রয়োজন বিনিয়োগ। বাজারে যাওয়া আসা এবং উক্ত বস্তু ক্রয় করার অর্থ আপনার কাছে থাকতে হবে। বাজারে যাওয়ার জন্য আপনার প্রস্তুতি রয়েছে ভিন্নতর। ধরুন বাগানটি ভেসে ওঠেছে আপনার স্বপ্নযোগে। ঘুম থেকে জেগে ওঠলেন, অবশ্যই আপনাকে ফ্রেস হতে হবে। সকাল বেলার নাস্তাপানি রয়েছে, সময় বের করতে হবে, অফিসের পূর্বে বা পরে তাও নির্ণয় করে নিতে হবে, যথাযথ অর্থ পকেটে থাকতে হবে। সেজন্য নিজের পকেটে থাকে তো ভালো, আর তা যদি না থাকে, তবে স্ত্রীর কাছে মাগতে হবে, তেমন ক্ষেত্রে রয়েছে কতকগুলো অযাচিত শর্ত, যার উপযুক্ত জবাব দেয়া অধিক ক্লেষদায়ক। আপনি একভাবে বলছেন, আর ওনার মর্জি ভিন্নভাবে ধেয়ে চলছে। দুজনার মধ্যে বেধে গেল কথা কাটাকাটি, পরিশেষে আপনার পাবার ইচ্ছাটাই চুলোয় যাবার উপক্রম। ধরুন আপনার পত্নিটি বড়ই পতিপ্রেমিক বাধ্যগত; তেমন ক্ষেত্রে তার হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই, তখনও কোনো লাভ সম্ভাবনা দেখি না আপনার আরাধ্য বস্তুটা প্রাপ্তীর।
আমরা যা কিছুই চিন্তা করি না কেন, অবশ্যই এর পূর্বাপর বিষয় ও অবস্থা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে। অন্যদিকে আমার যথাযোগ্য অবস্থান জানতে হবে। আমাকে আমার মত করে দেখতে হবে। অমুক অমুক সুরে কারো পিছু পিছু ছুট দিলে চলবে না। আমিও তো একজন মানুষ! মহান মাবুদের একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমাকে সর্বপ্রথম আমার প্রাণপ্রতীম নির্মাতার সাথে যোগাযোগ বহাল রাখতে হবে; তারপর পরের কথা– নির্মাতা মাবুদের সাথে আলাপ করে জেনে নিতে হবে, আমার করণীয় দায়িত্ব কর্তব্যসমূহ। আর তেমন দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার জন্য যদি কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে, তবে তা রপ্ত করতে হবে। কাঙ্খীত বস্তুটি যদি অবস্তু, অদৃশ্য কিছু হয়ে থাকে, তবে তা পেতে অবশ্যই তেমন ক্ষেত্রে কায়িক শ্রম নিষ্প্রোজন। তেমন ক্ষেত্রে চাই রুহানি সাধনা। আর জানেনইতো, সাধনা করার জন্য চাই কায়মনবাক্যে নিবেদন। চাই একাগ্রতা, অস্থির মনটাকে সুস্থির করে, ফালতু সবকিছু ঝেড়ে ফেলে, নিরবধি নিবেদিত থাকতে হবে কাঙ্খিত প্রাপ্তির পূর্ণতা পর্যন্ত। তারপর লাভ করলেন আপনার অভিলষীত বস্তু। এখন তা নিয়ে কি করবেন, কোথা রাখবেন, অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, কোনোভাবেই যেন তা খোয়া না যায়। খ্যাপার মত গেয়ে ওঠতে না হয়, “পেয়েও হারালাম”।
আপনি একটি মোম জ্বালালেন। সকলে হেসে ফেললো। হাসির কারণ হলো, বেলা দ্বিপ্রহর! আবার মধ্য রাতে আপনার মোমটি জ্বালাচ্ছেন না, জিজ্ঞাসুনেত্রে সকলে রয়েছে আপনার পানে তাকিয়ে। তাই স্থান–কাল–পাত্র বুঝে আপনি যখন কাজ করেন তখন আপনার নিজের উপকার হয় আর পাড়া–প্রতিবেশি হয় উপকৃত।
প্রজ্জ্বলিত মোমটির কথায় আসুন, মোম আলোর প্রতীক। মোমটি আগুন ধরে রাখার ক্ষমতায় পূর্ণ। মানুষকে মোমের সাথে তুলনা করা চলে। “তোমরা দুনিয়ার নূর” যার অর্থ হলো, একটি প্রজ্জ্বলিত মোম যেমন এর চারপাশের অন্ধকার দূর করে, তদ্রুপ একজন সুশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজ থেকে ভ্রান্ত শিক্ষার অপসারণ ঘটাবে, যা হলো স্বাভাবিক প্রত্যাশা। বাতি জ্বেলে কেউ ঝুড়ির নীচে রাখে না, রবং বাতিদানের উপরেই রাখে, যাতে করে উক্ত মোমটির আলো চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে; স্থানটি ভরে ওঠে আলোর বন্যায়।
মোমটির প্রসংগে আসুন। যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত মোমটি আগুনের সাথে যুক্ত না হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত, তা বহাল তবীয়তে, অটুট অবস্থায়, আমিত্ব জাহির করে ফিরছে, আর তা স্বাভাবিক, নিটোল, নিখুঁত! তবে বলতে বাধ্য হবেন, তেমন অবস্থায় মোমটি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কিন্তু পূর্ণতা পেল না! মোম তো সেখানেই জ্বালানো হয় যেথা থাকে আধারে পরিপূর্ণ। মোমটিকে অবশ্যই আত্মাহুতি দিতে হবে। জন্মলগ্নে মোমটিকে জেনে নিতে হবে, কোন কাজের জন্য অথবা কোন বাষণা পুরণের নিমিত্তে তা সৃষ্টি করা।
মানুষ যখন একা একা থাকে তখন তার উদ্দেশ্য লক্ষ্য কিছুই থাকে না, বলতে পারেন গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসমান। আদম মাটির মূর্তি। খোদা তাঁর নাকে প্রাণ বায়ু ফুকে দেবার সাথে সাথে প্রজ্ঞাময় অর্থবহ এক ব্যক্তিতে হলেন পরিণত। খোদার প্রতিনিধিত্ব পালন করা ছিল তাঁর একমাত্র দায়িত্ব। আদম তো নিজেকে নিজে সৃষ্টি করেন নি, কোন অধিকারে সে স্বকীয়তা প্রকাশ করবে?
আমরা সকলেই খোদার হাতে, তাঁরই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সৃষ্ট। প্রত্যেক দিন দেখে নিতে হবে ঐশি প্রদত্ত দিবসের কর্মসূচী।
জ্বলন্ত মোমটিকে নিয়ে যাওয়া হবে যেথা রয়েছে তিমির অন্ধকার। অশিক্ষা কুশিক্ষায় পুরো সমাজ ডুবন্ত; মানুষ হয়েও মানবীয় দায়–দায়িত্ব ত্যাগ করে, সুন্দর বিশ্বটা, ভাগাড়ে পরিণত করে ফেলেছে। বিশ্ব মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যদিও সকলে একই পরিবার থেকে হয়েছে জাত, তবুও আজ হীন স্বার্থের বিষে একটাই আক্রান্ত, সকলেই আত্মকেন্দ্রীক অপশক্তিতে পরিণত। সেই পুরানো দৃষ্টান্তে আসা যাক! পানপাত্র পতনের ফলে হয়ে গেল অগণিত খন্ডে বিভক্ত, ছোটবড় মাঝারি, আবার কতকগুলো অণুবীক্ষণ ব্যতীত ওর অস্তিত্ব বুঝতে পরা কষ্টদায়ক। ধরুন ২/৪টা বড় খন্ড আপনার হাতের কাছে পেলেন, পানপাত্র দিয়ে যেভাবে পান করা যেত, উক্ত খন্ড দিয়ে কি তা আদায় করা সম্ভব? কষ্মিণকালেও সম্ভব হবে না। খন্ডিতাংশগুলো, যদি সম্ভব হয়, পুনরায় ওভেনে দিয়ে বিগলিত করা ও নতুন একটি পান পাত্র নির্মাণ করা চলে, তবে নিশ্চিতভাবে, পাত্র নির্মানের মনোবাষণা হবে পরিপূর্ণ। যতক্ষণ পর্যন্ত ওগুলো ওভেনে ফেলা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে বড়ই খতরনাক, ঠোট কাটার জন্য উপযোগী; বিনষ্ট মানুষ পুনরায় স্বার্থক মানুষে পরিণত হবে, যখন তারা পুনরুত্থিত মসিহের সাথে হতে পারবে পুনর্মিলিত; মসিহের মধ্যেই রয়েছে নতুন সৃষ্টি হবার একমাত্র উপায় (২করিন্থীয় ১৭–২১)।