আমার দায়েরকৃত মকর্দমার প্রসংগে দু’একটি বক্তব্য সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। যে কোনো জটিল অংক কষতে হলে তার সূত্র জেনে নিতে হবে, নতুবা সূত্র ছাড়া অনুশীলন, তা দিনরাত সমানে চালানো হলেও সুষ্ঠু সমাধান লাভ করা সম্ভব নয়।
আমার পরিচয় কেবল তোমারই রয়েছে জানা, তুমি নিজের প্রয়োজনে, বিশেষ এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে, স্বীয় সুরতে (Image) আমাকে সৃষ্টি করলে। ঘোষণা দিলে সর্বোত্তম সৃষ্টিরূপে। সত্যিই সর্বোত্তম, যা হলো তোমার ঘোষণা।
ন্যায্যত, আমার মধ্য দিয়ে তোমার গুনাবলী প্রকাশ পাবে, যা হলো আমার একক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সূত্রটি হলো, মানুষ খোদার প্রতিনিধি, যোগ্য কি অযোগ্য সে বিষয়ের কথা তুলছি না।
আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিরপীত। মকর্দমার প্রয়োজন হলো এখানেই। তোমার উপরে আমার বিশ্বাস ছিল অঘাধ, বর্তমানে যেন চরম দেউলীয়া। খোদার প্রতিনিধিত্ব না করে হয়ে পড়েছি চরম প্রতারক, ইবলিসের খাস প্রতিনিধি। কথায় কাজে কেবল স্বার্থপরতার গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়, যার প্রকৃত কারণ হলো, আদি পাপ, প্রথম প্রতারণা, প্রথম বিদ্রোহ, হৃদয়ে পুঞ্জীভুত পাপাচার, কুবাসনা, চোখের লোভ ও মাংসিক অভিলাস চরিতার্থ করার অদম্য উম্মাদনা।
আমি ভালো নেই। ভালো মন্দ বুঝবার ক্ষমতাও ছিল না আমার। চোখ খোলার পরে যা কিছু দেখেছি তাই চুড়ান্ত মনে করেছি। তুমি শেখালে, দৃশ্যমান বস্তুজগতের পিছনে একটি অদৃশ্য পারঙ্গম, হাত রয়েছে সদা ব্যস্ত, যে কারণে দৃশ্যমান আছে টিকে।
তুমি আমার স্রষ্টা ও উদ্ধারকর্তা। তুমি আমাকে মুক্ত করেছো এক চুড়ান্ত মূল্যে। যে বিষয়টি আমি পলে পলে পরিষ্কার করে চলছি। কেবল দর্শনই নয়, নানা উপায়ে দেউলীয়া ও সম্পদশালীদের মধ্যে স্থীত আকাশ পাতাল দূরত্ব প্রকাশ পাচ্ছে।
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যারা আজ দেউলীয়া, তাদের সাথে আমি লড়তে চাই না, সে দায়িত্ব আমি ইতোপূর্বে তোমার খাস দরবারে দাখিল করেছি। আর তা করার ফলে আমার হাতে বেশ সময় বেঁচে গেলে। ফলে সর্বাগ্রে করণীয় কাজটি করে যাওয়াতে আর কোনো অন্তরায় থাকলো না। আর প্রথম কাজটি হলো ‘তোমার রাজ্য ও ধার্মিকতা!’
আমি যে তোমার সন্তান তার দালিলিক প্রমাণ হলো ইউহোন্না প্রথম অধ্যায় দ্বাদশ পদ, “তবে যতজন তাঁর উপর ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন।” আমি বিশ্বাস করি, আমি স্বীকার করি, আমি জঘন্য পাপী, অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে পবিত্রতার। তুমি এসে আমাকে চুপিসারে আহŸান জানালে, অভয়বাণী দিলে, দুজন দুজনার হয়ে গেলাম, যার ফলে অফুরান পরিতৃপ্তি আজ আমার হৃদয়ে রয়েছে বিরাজমান।
আমি খোদার সন্তান। এ ধারণাটি আমাকে সদা পুলকিত রাখে। আমি গুনাহগার, যা শতভাগ সত্য, আমাকে নির্জীব করে দেবার অপঘাত সাধ্যাতীত হানা হয়েছে, আমার দুর্বলতায় তুমি এসে এমন অপরাজেয় সাহসশক্তি যোগালে যা কল্পনাতীত। আমার সার্বিক ক্ষতি পুষিয়ে দিতে তুমি নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃশ্ব করলে। আমার পরিবর্তে তুমি সলিবে আত্ম কোরবাণী দিলে, আর আমি বেঁচে গেলাম। কি চমৎকার ব্যবস্থা, কোনো দেউলীয়ার মগজে তেমন ধারণা স্থান পেতে পারে না। অবশ্য আমার কলুষীত মগজ ও আত্মা পরিবর্তন করে দিলে তোমার পূতপবিত্র হৃদয় দিয়ে, ফলে আজ আমার কাছে সবকিছু নতুন নতুন লাগছে। আমরা মানুষ, মানুষের কাতারে রয়েছে আমাদের আনাগোনা। মানুষ নিয়ে ভাবতে প্রেরণা জাগে হৃদয়াভ্যন্তরে। প্রেরণা প্রেষণা যেন বিগলীত লাভা অবমুক্ত হবার জন্য ভূপৃষ্ঠে চৌচীর করে ছেড়েছে।
বর্তমানকার কেতাদুরস্ত বিন্যাস, যাকে সভ্যতা, ভদ্রতা, সামাজিক আদর্শ বলে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে, তা আসলেই যে বিকৃত রুচির পরিচয় তা সহজেই বোধগম্য হবে, সৃষ্টি লগ্ন থেকে শুরু করে প্রতারিত ও পতীত হবার দিনগুলো নিয়ে যদি আলোচনা করা সম্ভব হয়। পয়দায়েশ পুস্তকের প্রথম দুটি অধ্যায় পাঠ করা হলে বুঝা যাবে, খোদা আদম হাওয়াকে কতোটা মানমর্যাদা, দায়দায়িত্ব, সুখ শান্তি অর্পণ করেছিলেন। আদম ছিলেন নিরুদ্বেগ, খোদার রাজ্যে এক সম্মানীত মেহমান। বলতে পারেন প্রথম রাজদূত।
অবশ্য তারা ইবলিসের কুটচালে বিভ্রান্ত হলেন, নিষিদ্ধ কাজ করে বসলেন, হলেন বিতাড়িত পবিত্র স্থান থেকে।
মহান স্রষ্টা মানুষের প্রতি নিরঙ্কুষ প্রেম প্রকাশ করে আসছেন প্রথম দিন থেকে। চুড়ান্তভাবে সে প্রেম প্রকাশ পেল খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের মাধ্যমে, যিনি শতভাগ বেগুনাহ, তিনি বিশ্বের তাবৎ গুনাহগারদের জন্য কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্য শোধ দিলেন নিজেকে কোরবানী দিয়ে।
তিনি নিঃশ্ব হলেন আমাদের সর্বস্বের অধিকারী করার জন্য। প্রেম তো এমনই হয়।
আমরা ফিরে আসি আমাদের অধিকার দায় দায়িত্ব কর্তব্যের প্রশ্নে। কর্তব্য সম্পাদন না করে অধিকার আদায় করা কি সম্ভব? তা আমাদের কর্তব্য হলো মাবুদ তোমার প্রতিনিধিত্ব করা, তোমার বিষয়ে যারা রয়েছে সম্পূর্ণ অজ্ঞ অথবা তোমার বিষয়ে সঠিক ধারণা যাদের নেই, কিন্তু যাদের হৃদয় নিয়ত কাঁদে, তোমাকে পেতে চায় হৃদয়াভ্যন্তরে, তাদের কাছে, তাদের ভাষায়, প্রাঞ্জুলভাবে তোমার প্রেম, ক্ষমা ও মুক্তির বিষয় প্রকাশ করা। আমরা যারা সত্যিই দাসত্বের কবল থেকে হতে পেরেছি অবমুক্ত, দর্শকমন্ডলী যেন তা প্রত্যখ্য করতে পারে, সে দায়িত্বও বর্তে আমাদের উপর।
কারখানায় শতশত মোম তৈরী করা হয়, স্টোরে মোড়ক দিয়ে জমা করে রাখা হয়, তবুও আঁধার কাটে না। মাত্র একটি মোম জ্বালিয়ে দেবার সাথে সাথে ঘরটা আলোকিত হয়ে গেল। রহস্যটা হলো, আলো আর আঁধার সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী। কেউ কাউকে মেনে নেয় না। এটা হলো অপরিবর্তনীয় সূত্র। যেমন নেতিবাচক আর ইতিবাচক ধারণা। অনেকেরই স্বভাব হলো প্রথমেই ‘না’ দিয়ে শুরু করা। ‘না’ তাকে কিছুতেই ছাড়ছেনা। অস্থি মজ্জার মধ্যে মিশে গেছে হতাশা, ব্যর্থতা নেতিবাচক ধারণাগুলো। কেউবা জীবন নিয়ে আলোচনায় পূর্বেই মরণ ডেকে আনে। আরে বাপু, জন্মই হলো না, তবে মৃত্যু আসবে কেমন করে। “জন্মিলে মরিতে হবে” শ্লোকটি যথাযথ, প্রথমে জীবন, এবং সেই জীবন আপনি কিভাবে যাপন করছেন তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী ধাপ। কাল বলতে যা কিছু বুঝা যায় তা হলে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। তা অতীত, বিগত বা পতিত দিনগুলো আর কখনোই ফিরে আসবে না, লিখে রাখুন তা তা¤্রপাতে।
আলোচনার একটা বিশাল অংশ বাদ পড়ে গেল। আর ভবিষ্যৎ হলো অনাগত অজানা, চলতে পারে না তা নিয়ে কোনো ভাবনা। থেকে গেল “বর্তমান” যা আপনার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বিশ্বস্থভাবে। আজকে আপনি যা যা করতে চান তার একটা তালিকা প্রস্তুত করুন। অলসতা ঝেড়ে ফেলে স্বাচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে চলুন।
উপদেশ রয়েছে, “দিনের চিন্তা দিনের জন্য যথেষ্ট”। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে চলুন, পড়ন্ত বেলা হিসেব নিয়ে বসবেন, দায়–দায়িত্বের কতটুকু পালন করতে পেরেছেন। আপনার মন থেকে ভেসে উঠবে অধিকার কতটুকু পাবার যোগ্য হলেন আপনি।
মজার বিষয় হলো, অযাচিতভাবেই আমরা অনেককিছু পেয়েছি যার কৃতজ্ঞতা বোধটুকু আমাদের হৃদয়ে জাগে না। পাপ আমাদের অন্ধ অকৃতজ্ঞ করে ছেড়েছে। ঘন কুয়াসা ও ঘনমেঘ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সৌকর যেমন ভুপৃষ্টে পৌছাতে পারে না, তদ্রুপ মানুষের হৃদয়ের জমাটবাধা পাপ কালীমা সম্পূর্ণ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত খোদার মুখচ্ছবি হৃদয়পটে জাগ্রত হতে পারছে না।
চাই সম্পূর্ণ স্নাতশুভ্র হওয়া, চাই পরিষ্কার পানি, যে পানিতে ডুব দিলে খসে যাবে শরীরের সবগুলো নোংরা আবর্জনা ধুলীময়লা। বিশ্বের সকলে পাপ করেছেন, খোদার গৌরব নষ্ট করেছে। মানুষের ধার্মিকতা খোদার কাছে আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের প্রতি খোদার অকৃত্রিম অব্যার্থ খাঁটি প্রেম প্রকাশ পেয়েছে মসিহের আত্মকোরবানির মাধ্যমে। তিনি হলেন ঐশি মেষ, যাকে মানুষের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কোরবানি দেয়া হয়েছে, যেন বিশ্বাসহেতু গোটা বিশ্ব হতে পারে সম্পূর্ণ বেগুনাহ। মসিহ যথার্থ বলেছেন, “মনে রেখো, ইবনে আদম সেবা পেতে আসেন নি, বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।” (মথি বর্ণীত সুখবর বিশ অধ্যায়ের আটাশ পদ)।
হে মাবুদ মনে পড়ে, তোমার কাছ থেকে নেমে আসা প্রথম প্রেরণা ছিল সাদামাটা। আগে পিছে আমার কিছুই জানা ছিল না। অন্ধব্যক্তিকে হাতে ধরে যেমন পরিচালনা করা হয় ঠিক তুমিও আমাকে তেমনি হাটাতে শিখালে। আদি অন্ত পথের শেষ কোথা, ছিল না তা জানা, ছিল না আমার কোনো পাথেয়। অভয়বাণী যুগিয়ে এসেছে সদাসর্বদা, পাবে ‘যে চায় সে পায়’ তোমার বেহেশতী পিতা জানেন ওগুলো তোমার প্রয়োজন রয়েছে।
আজ আমি অপরাহ্নে এসে পৌছেছি। সুদীর্ঘ কাল যেভাবে চালিয়ে আসছো, বাকীটুকু পথ তুমিই চালিয়ে নিবে সে ভরসাটুকু হৃদয় মাঝে পুষে রেখেছি। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, পতীত অতীতকে নিয়ে জাবরকাটা আর শোভনীয় হতে পারে না।
তুমি আর আমি, আমি আর তুমি রচনা করি অনন্ত বাসরঘর, যা হলো আমাদের যৌথ অভিযান। হৃদয় নিংরানো ভক্তি শ্রদ্ধার মালা পরিয়ে দিলাম তোমার গলে, ধন্যবাদ।