সমাজে একটি প্রথা চালু আছে, এক কালের জঘণ্যতম ডাকাত বা খুনি যত অসৎ চরিত্রের ব্যক্তি প্রচুর ধন–সম্পদ উপার্যনের মাধ্যমে উঠে আসলো সম্মানের আসনে, বাহারি পোশাক চেহারার মধ্যে নিয়ে আসলো আমূল পরিবর্তন, চেনা–জানা পরিচিত লোকজন পেল তার কাছ থেকে প্রচুর ফায়দা, আর অচেনা ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকলো না, তার কুৎসিত দলিল দস্তাবেজ বদলে ফেললো, ভ্রান্ত শিক্ষা দিয়ে প্রজন্মকে শেখানো হলো বিপরীতধর্মী গান, জঘণ্য সন্ত্রাসি ব্যক্তিটি সহজেই পরিণত হলো শ্রেষ্ঠ সাধুসন্তে। এমন হলো আজ বাংলাদেশের ইতিকথা।
মানুষ বেমালুম ভুলে গেছে একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধের মৌল কথা, ভুলে গেছে ঘাতকদের নির্মমতা, পুরো খান্দান সমেত জাতির পিতাকে নিপাত করার ঘটনা, অধিকন্তু খুন, রাহাজানী হত্যারমত অপরাধের বিচার চাওয়া যাবে না, এমন কদর্য, নীচ, নোংরা উম্মাদনার উক্তি কি কেউ মেনে নিতে পারে?
অসম্ভব! কারা তেমন কালো আইন চালু করলো, জনতা তেমন জঘণ্য খুনিদের কথা বেমালুম ভুলে গেল। কারা পুনরায় গ্রেনেড ফাটালো, পন্ড করে দিল বিশাল জনসভা, পুনরায় খতম করে দিল দেশপ্রেমিক হাজার জনতা, তাদের শেষ করে দিল বিষাক্ত বেয়নেটের খোঁচায়. তারপরও উক্ত সত্য বিবেক জাগ্রত করার প্রবণতা চিরতরে মুছে ফেলার পায়তারা, যারাই তাদের সমর্থন যোগাচ্ছে, ঘাতকদের দোষর ছাড়া তাদের আর কি পরিচয় থাকতে পারে বলুন!
আমরা অতিসহজেই ইতিহাসের অমানবীয় কালো অধ্যায়গুলো ভুলে যাই, আমাদের স্মৃতির হাড়ি হয়ে আছে শতছিদ্র, কোনো কিছুই জমা থাকে না, সাধু–অসাধু, চোরগুন্ডা বদমাস একাকার করে চলি সহজেই; কল্যাণবাহি আপনজনের ছবি মানসপট থেকে মুছে ফেলি; এ প্রবণতা নিয়েই জন্ম ও প্রবৃদ্ধি আমাদের, আধারে জন্ম আধারেই ক্ষরণ, পুরোপুরি অভিশপ্ত ইবলিসের কব্জাগত। এর মধ্যেও চাষাবাদ করে চলতে হবে, নিরুপায়, তবে সাবধান থাকতে হবে দিবানিশি, সর্বক্ষেত্রে। অবশ্য কালামের আলোকে দেখা যায়, চার প্রকার চরিত্রের জমি রয়েছে দেশে, কোনোটা পথিপাশ্বের, কোনোটা পাথুড়ে, কোনোটা জঙ্গলে ভরা আর একখন্ড জমি হলো সার্বিক দিক দিয়ে কণ্টকমুক্ত।
ভরসার কথা হলো, অন্ধকার যতোই ঘণ ঘুটঘুটে পথরুদ্ধকর মনে হোক না কেন, জন্মদিনের ক্ষুদে একটি মোম জ¦ালালেও অন্ধকার ভেগে যায় যেতে বাধ্য। যদিও একটি মহীরূহ প্রতিষ্ঠা পেতে প্রচুর সময় দৃষ্টিহরণকারী ফুল, ফল, পাতা, শাখা–প্রশাখা উৎপাদনের অবশ্য তেমন সময় ওটির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু সচরাচর ওটাকে অমন করে আর রোপন করা হয় নি, এবং তেমন চিন্তা হবে অবান্তর চিন্তা, বাগানে রোপন করা হয়েছিল ক্ষুদে একটি বীজ, অবশ্য জীবন্ত প্রাণবন্ত বীজ, হয়তো সবার অলক্ষে জনতার চোখর আড়ালে, কোনো শোডাউন ব্যতিরেকে; যা হলো নিরেট বাস্তবতা।
পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রতিরক্ষার সমন্বয়ের মাধ্যমে এক কালের দু’টি পাতা একটি কুড়ি আজ সক্ষম হলো গোটা বিবেকবান বিশ্বের দৃষ্টি কাড়তে। কালামের আলোক স্পষ্ট দেখা যায়, খোদা মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন স্বীয় সুরতে নিজ প্রতি নিধিকরের। প্রেম রোপিত হয় গোপনে, যদি সে প্রেম নির্ভেজাল সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হয়ে থাকে, জীবন্ত প্রাণবন্ত থাকে, তবে তা কলায় কলায় বেড়ে ওঠে, শক্তি সামর্থ লাভ করে, আর এককালের লজ্জা নামক কালো আবরণ শতছিন্ন করে মহিরুহের মতো সমাজে অবদান রাখবে নিশ্চয়। যেমন লাইলি–মজনু, সিরি–ফরহাদ। বিশ্বাসীদের আদি পিতা নামে খ্যাত ইব্রাহিম নবীই বা কম কিসে, যিনি বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে, খোদা প্রেমে সজাতি জমাজমি দেশ কাল ঐশি প্রেমের কাছে তুচ্ছজ্ঞান ভেবে জলাঞ্জলি দিলেন, এমনকি একমাত্র পুত্রকে পর্যন্ত আল্লাহর মনঃতুষ্টির জন্য কোরবানি দিতে ছিলেন রাজী।
পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ দম্পতির হাতে একটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে ঘোষণা দিতে থাকে না তাদের বিবাহের বার্তা, সদ্য অন্তঃসত্ত্বা রমণী সহজে কারো কাছে মুখে স্বীকার করে না, তার গর্ভে ভ্রুণ স্থান পেয়েছে, আর তেমন বলারও প্রয়োজন পড়ে না; গর্ভবতি নারীর শরীর, হাত–পা, চালচলন কমনীয়তা আপনা থেকে পরিবর্তিত হতে থাকে, যা দেখে মানুষ বুঝতে পারে একটা কিছু, যা দেখে মানুষ বুঝতে পারে একটা কিছু ঘটে গেছে ইতোমধ্যে। কেউ প্রদীপ জ্বেলে চীৎকার শুরু করে! ঘোষণা করে না প্রদীপের অবস্থানের কথা, প্রদীপের আলো নিজেই নিজের অবস্থান ও পরিচয় ঘোষণা করে ফেরে, চারপশের অন্ধকার নিজ থেকে ইতোমধ্যে পালিয়ে গেছে।
আজ পর্যন্ত শুনিনি আদমকুলে জন্মপ্রাপ্ত কোনো সাধু পুরুষের প্রথম জন্মদিন ঘটা করে পালন করতে, কেননা সদ্যজাত কোনো সন্তানই মনীষী হয়ে জন্মায় না, সমাজে সচরাচর দেখা যাচ্ছে, আলো আধারের মধ্যেই বয়প্রাপ্ত সকলে হয়, প্রত্যেকটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে, নিরোগ বলতে এমন কেউ আছে বলে মনে করি না; সকলেই তো ঐ একই আদমের ঔরষজাত! প্রত্যেকে চায় রোগ মুক্তি! তবে মুক্তির পথ রয়েছে নানাবিধ! অগণিত! একটা একটা করে বলতে গেলে মূল থিম হারিয়ে ফেলব। তাই তেমন দায়িত্বটি প্রিয় সম্মানিত বোদ্ধা পাঠক কুলের হাতে তুলে দিলাম। মুক্তির প্রচেষ্টা করতে গিয়ে ভিটে মাটি পর্যন্ত খুইয়ে পথে বসতে দেখেছি। তথাপি সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ ঘটে নি, ভিতরে ভিতরে রোগের জ্বালা তুষানলের মত নিয়ত জ্বালিয়ে মারছে।
মানুষের রয়েছে দুটো শরীর যাকে বলা চলে ভৌতিক আর আত্মিক, মানুষ ক্লীষ্ট উভয় দেহে, শারীরিক ব্যধি ও পাপের দ্বারা উৎপন্ন যাবতীয় ব্যধি যা তার আসল পরিচয় বহুপূর্বেই বিকারগ্রস্থ করে রেখেছে। মানুষ বাঁচতে চায় নিজস্ব কলা–কৌশল ও মন্ত্রনাবলে। অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে, তা ছলা–কলা যা কিছুই প্রয়োজন হোক না কেন, কোনো কিছুতেই কার্পণ্য করে না প্রয়োগ করতে। এই তো সেদিন হাসিখুশিতে কোনো একটি প্রতারক চক্র দেড়লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল স্বঘোষিত এক বুদ্ধিমতির পকেট থেকে, অবশ্য তিনি অধিক প্রাপ্যের আশায় রয়েছেন অদ্যাবধি অপেক্ষারত। হায়রে মোহান্ধ! লক্ষকোটির মধ্যে এটি হলো মাত্র একটি প্রতারণার কুফল।
আদম–হাওয়া এমনি করে হলেন প্রতারিত। আমরা সকলেই! ব্যতিক্রমহীনভাবে হয়ে পড়ি প্রতারিত। এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রটি পর্যন্ত আগাগোড়া প্রতারণার শিকার, যেমন আদম মাত্র একজনই রয়েছেন ভরসাস্থল, মুক্তির নায়ক, যিনি আপন পর বলতে কোনো ভেদাভেদ করেন না, কেননা তার নজরে সবাই সমহারে গুনাহগার, পতিত আদমের বংশধর। আদমের বাইরে ঘটেনি কারো আগমন। দেশ–কাল–পাত্র, ভাষা, রুটি রোজী, প্রথা, কেবল মানুষের সৃষ্টি। হাসপাতালে সকল রোগীর ভর্তী হবার সমঅধিকার রয়েছে, পক্ষপাত দোষ হলে, অর্থ বাণিজ্য ও আত্মিয়তা মাত্র।
মসিহ এসে উদাত্ত কণ্ঠে আহবান জানিয়েছেন প্রত্যেকটি জনগোষ্টিকে, পোশাক–পরিচ্ছেদ, চুল–দাড়ির কোনো পার্থক্য তার কাছে কোনই আবেদন রাখে না, কথাটা মনে রাখবেন।
চাই স্বীয় অপরাধ ও তেমন প্রবণতার জন্য অনুতাপ; কেবল অনুতাপানলে বর্জগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তলানি থেকে যায় ঐশিদত্ত উপহারটুকু, যিনি মানুষ খোদার প্রতিনিধি, যাখে বলা হয়েছে কেবল খোদার রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতা। ধার্মিকতার জন্য আলাদা অর্থ পূথকি করণ। যেমনটা ইব্রাহিম নবী সবকিছুই ছেড়ে দিয়ে খোদার পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন, যাকে ইমানদারের আদি–পিতা বলে সকলেই জানে।
খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ নিজের প্রাণটি পর্যন্ত কোরবানি দিলেন বিশ্বের মুক্তির জন্য, পাপের কাফফারা পরিশোধ করার জন্য, ছিল না তার মধ্যে কোনো বাণিজ্যিক প্রবণতা বা চর দখল, ঘর দখল করার লোলুপতা অথবা নোংরা রাজনীতি। আপনি কার পক্ষে ওকালতি করে চলছেন, তাঁর চরিত্র অন্ততঃ একবার পর্যালোচনা করে দেখুন, পথ চলতে আশা করি সহজ হবে। বিশাল ভোজের আয়োজন করছেন অথচ বুড়ো দাদাকে দাওয়াত দিচ্ছেন না তা ভোজটা আপনার জন্য না অন্য কোনো মহান ব্যক্তির মহান উদ্দেশ্যে দত্ত হলো, নিজের কাছে গোপনে প্রশ্ন করুন (মথি ৫ : ২৪)।
বিশ্বের সকলে সত্য সুন্দরের পথে ফিরে আসুক এ প্রার্থনা রাখছি সুমহান প্রভুর দরবারে।