রাজধানীতে শীতের তীব্রতা এখন অতীত। প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী ভাব স্পষ্ট। আমুদে এই বসন্তের আবহ বাইরে ঘুরে বেড়ানোর খোরাক জোগায়। সে সঙ্গে গতকাল ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। এই দুই মিলিয়ে ভাষার মাসে রাজধানীবাসীর পছন্দের গন্তব্য অমর একুশে বইমেলা গতকাল ছিল লোকে লোকারণ্য।
দ্রুত পৌঁছানোর তাড়া নেই, সড়কে যানজট নেই, মেলাও ছিল পূর্ণ দিবস। ফলে বইপ্রেমীরা মেলায় এসেছিলেন তাদের সুবিধামতো সময়ে। কাটিয়েছেন দীর্ঘক্ষণ। প্রচণ্ড ভিড় উপেক্ষা করেও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন মেলা প্রাঙ্গণ, ঢুঁ মেরেছেন বড় বড় সব প্যাভিলিয়ন–স্টলে। কিনেছেন পছন্দের বই।
শুক্রবার মেলা চলে দুই ভাগে। ছুটির দিনে সকাল নয়টায় খুলে মেলার দ্বার। প্রথম ভাগটা বরাদ্দ শিশুদের জন্য। শিশু প্রহর, সিসিমপুরসহ নানা আয়োজনে। অভিভাবকদের সঙ্গে আসা অসংখ্য শিশু–কিশোরের কোলাহলে মুখরিত থাকে শুক্রবারের সকালটা।
বিকালের ভাগটায় সব বয়সী পাঠক–দর্শনার্থীদের সমাগমে ভরপুর। অন্যান্য দিন সন্ধ্যার পরে ভিড় বাড়লেও এদিন বিকাল থেকেই জমে উঠে মেলা। মেলামুখী জোনস্রোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেলার আশপাশের এলাকাও এদিন ছিল সরগরম।
ছুটির দিন মানে বিক্রেতা–স্টল মালিকদের আনন্দের দিন। এদিন যেমন মেলায় ক্রেতা–পাঠকদের উপস্থিতি বাড়ে কয়েক গুণ, তেমনি বই বিক্রিও হয় অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি।
প্রথমা,পাঞ্জেরী, অন্যপ্রকাশ, কথা প্রকাশ বেশ কয়েকটি স্টল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এদিন কথা হয়। প্রায় সবার মুখেই একই সুর , শুক্রবার সারাদিন থাকে ব্যস্ততা। অন্যান্য দিন যেখানে বই কিনতে পাঠকেরা আসেন অল্প, সেখানে ছুটির দিন বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে পাঠকদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় বিক্রেতাদের।
মেলায় আগতরা বই কিনতে যেমন আসছেন, তেমনি আসছেন পরিবারের সঙ্গে অবসর বিকাল কাটাতে। বইয়ের সৌরভের সঙ্গে তাদের সে অবসরের ক্ষণ আরও বেশি আনন্দঘন হয়ে উঠে কোনো স্টলে পছন্দের লেখকের সান্নিধ্য পেয়ে গেলে। ভিড়ের ভেতর অনেকেই আবার হঠাৎ সাক্ষাৎ পেয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকা আত্মীয় কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে।
গতকাল ছিল মেলার নবম দিন। মেলার নিয়মিত আয়োজনগুলোতে ছুটির দিনে বেড়েছিল দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। লেখক বলছি মঞ্চে লেখকদের নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা কিংবা মূলমঞ্চে আলোচনা সভা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলাকেন্দ্রিক নিয়মিত বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমগুলো গতকালও সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। মোড়ক উন্মোচন মঞ্চেও এদিন দেখা গিয়েছিল নতুন পাঠক–লেখকদের চিরচেনা ভিড়।
গতকাল একদিনে মেলায় নতুন বই আসার রেকর্ড হয়েছে। এদিন মেলায় এসেছে ১৭৩টি নতুন বই। নয়দিনে নতুন বইয়ের সংখ্যা ৬১৮। মেলায় আসা নতুন বইগুলোর বেশির ভাগই কবিতার।