নাম ও উপাধি কখনো কখনো বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দেখা দেয়। কোনো এক লোক বললেন, তাঁর উপাধি হলো ‘পিউরিফিকেশন’। আর একজন বললেন, তাঁর উপাধি হলো ‘সৈয়দ’। উপাধি দু’টো বংশপরষ্পরায় সকলে ব্যবহার করে চলছেন অবাধে। জানি না, তাঁরা কতোটা পাকপবিত্র জীবন যাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন এই পঙ্কিলময় পৃথিবীতে।
ধর্মীয় পর্ব আপন গতিতে ঘুরে ঘুরে মানব সমাজকে নাড়া দিতে এসে থাকে এবং আসতে থাকবে। পূর্ণিমা, অমাবস্যা, ঋতুচক্র, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি মানুষের নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে। মানুষ যখন কোনো ঘটনা থেকে সময় গণনা করতে শুরু করছে তখন থেকে আমরা বয়স–কাল সম্বন্ধে সজাগ হলাম। পূর্বে কারো বয়স জানতে চাইলে বাবা–মা বলতেন, অমুক বন্যার সময় অমুকের জন্ম হয়েছে বর্তমানে কুষ্ঠিনামা রক্ষা করা হয়ে থাকে, বিধায় আমরা আমাদের বয়স–কাল জানতে পারি।
শুভ বড়দিন আমাদের দোরগোড়ায় দণ্ডায়মান। আমার জীবনে কমপক্ষে ৫৫ বার বড়দিন এসেছে। তবে তার প্রভাব যে কতোটা আমার মননে, ধ্যানে পড়েছে অথবা আমার জীবন–আচরণে শুভ বড়দিনের সুবাতাস আছর করেছে, তার হিসেব নেয়া প্রয়োজন। বড়দিন কখনোই গুরুত্ববহ হতে পারে না, যদি কেউ তা নিয়ে চিন্তা না করে। দয়ার সাগর আলাহপাক মানবজাতির জন্য এক বিশেষ রহমত প্রকাশ করেছেন এ–বড়দিনে, যা নিয়ে বিশ্বের কতিপয় জনমানুষ আনন্দ উৎসব করে থাকে প্রতিবছর। সচরাচর দেখা যায় ২৫ ডিসেম্বর দিবালোক যতোই ক্ষীণ হতে থাকে, জনমনে বড়দিনের প্রভাববলয় ততোই ক্ষীণ হতে শুরু করে।
শুভক্ষণ তো তাকেই বলা চলে যখন ঘটে মহেন্দ দর্শন। আর মহেন্দ্র তো ক্ষণপ্রভার মতো চোখ ধাঁধাতে আবির্ভূত হন না, তাঁর আগমন ঘটে মানবেতর জীবন থেকে তুলে এনে সত্যিকার স্বার্থক জীবন গড়ে তুলতে। প্রাকৃতিক নিয়মে জমিতে বীজ বহন করার পর থেকে তা অঙ্কুরিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি লাভ করে চলে। কিন্তু বড়দিনের প্রভাব মানব জীবনে যেন চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলতে কোথাও সমস্যায় ভোগে।
বড়দিন মানবত্রাতা মসিহের আবির্ভাবের দিন, যিনি মানব জীবনে চিরস্থায়ীভাবে বসতি করার জন্য এসেছেন; এসেছেন জীবন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করে গড়ার জন্য।
নববর্ষ বা সহস্রাব্দের নববর্ষ একইভাবে মানব সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে যখন মানুষ তাঁর ফলে চেতনা লাভ করে থাকে; অন্যায়, অপরাধ, অসামাজিক কাজকর্ম, তথা মানবজাতির ক্ষতিকারক অপকর্ম থেকে তারা দূরে সরে দাঁড়ায়। মানুষের মনের পরিবর্তন এলে স্বার্থক হয়ে ওঠে বিশেষ বিশেষ দিন, মাস বছর বা যুগকলাপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়ে গেল। কতোটা যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল এমন তাৎপর্যবহ অনুষ্ঠান পালনে, তা হিসেবের বিষয়। সন্ত্রাসীকর্ম সমাজে এমন মাত্রায় ঘটে চলছে যা সুসভ্য জাতির মস্তক অবনত করে রাখে বিশ্বের দরবারে। বাগানে বিষাক্ত বৃক্ষের চাষ যতোই বেড়ে চলবে, বিষাক্ত ফলের মাত্রা ততোই প্রাচুর্যময় হতে বাধ্য। যারা বিশ্বাস করে, সমস্ত মানুষ একই উৎস থেকে জন্মেছে, অর্থাৎ আদম–হাওয়া থেকে জন্মেছে, তারাও মানুষে–মানুষে সৃষ্টি করে রেখেছে হাজারও জাত–পাত–গোত্র–ছত্র। আসলে তারা যা বিশ্বাস করে তা কি তারা জীবনে প্রয়োগ করে? কর্মহীন মৌখিক বিশ্বাস কোনো ফল বয়ে আনতে পারে কী?
নির্বাচরনের সুবাদে কতোলোক আহত হয়, নিহত হয়। এটাকে কোন সভ্যতা বলবো? আর কতোকাল মানুষের হাতে মানুষের রক্ত ক্ষরিত হবে?
আসুন, সর্বপ্রকার অশান্তিকর কর্মকাণ্ড পরিহার করে আমাদের জীবটাকে জীবিত, পবিত্র, খোদার গ্রহণযোগ্য কোরবানি হিসেবে খোদার হাতে তুলে দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলি; বর্তমান বিশ্বের তথা সহস্রাব্দের দাবি তো তা–ই হওয়া উচিত।