উপকূলের কৃষকরা বহু বছর ধরেই গোল গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে আসছেন। নোনাজলের এ গাছেই মজুত থাকে সুমিষ্ট গাঢ় রস। এ রস জ্বালিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়। উপকূলের কৃষকরা বহু বছর ধরেই গোল গাছের এ রস দিয়ে গুড় তৈরি করে আসছেন। এখন সেটা বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ ও পাখিমারাসহ কয়েকটি গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে গোলের গুড় উৎপাদিত হচ্ছে। পতিত লবণাক্ত জমিতে বেড়ে ওঠা গোল গাছ থেকে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাস গোলের রস সংগ্রহ করা হয়। পরে তা আগুনে জ্বাল দিয়ে গুড় উৎপাদন করে প্লাস্টিকের কৌটায় ভরে বাজারজাত করা হয়।
নীলগঞ্জের নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস এলেই গোল গাছের পুষ্পদণ্ড বের হয়, সেটির মাথা ধারাল দা দিয়ে কাটা হয়। আর কাটা অংশ থেকেই ফোঁটায় ফোঁটায় রস বের হয়।
ওই রস সংগ্রহের জন্য প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের মাথার সঙ্গে প্লাস্টিক বা মাটির তৈরি পাত্র রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়, আর সেখানে ফোঁটা ফোঁটা রস জমতে থাকে। প্রতিদিন খুব সকালে ও বিকালে এ রস সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে বড় উনুনে টিনের তৈরি পাত্রে রেখে আগুনে জ্বাল দেওয়া হয়। তিন থেকে চার ঘণ্টা জাল দিলে এ রস গুড়ে পরিণত হয় এবং তা প্লাস্টিকের কৌটায় ভরে বাজারজাত করা হয়।
গোলের রস থেকে গুড় তৈরিতে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় না বলে এটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং খেতে খুবই সুস্বাদু বলে জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, এ উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে গোল গাছ রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গোল গাছ থেকে স্থানীয়রা রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করেন।
উপজেলার নীলগঞ্জ, নবীপুর, নিয়ামতপুর, পাখিমারা ও মিঠাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার ৩০০ পরিবার এ গুড় উৎপাদনে জড়িত। এখানে গত বছর তিন কোটি টাকার গুড় উৎপন্ন হয়েছে এবং চলতি বছর চার কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষ এ গুড় কিনে নিয়ে যান। এখানকার গোলের গুড় খুবই সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। স্থানীয়রা এ গোলের গুড় তৈরি করে মৌসুমভিত্তিক বাড়তি উপার্জনের সুযোগ পান।
গুড় উৎপাদনকারী সুমিত জানান, তিনি ৩০০ গোল গাছ থেকে প্রতিদিন ৮–১০ কলস রস সংগ্রহ করতে পারেন এবং সেখান থেকে দৈনিক ২৫–৩০ কেজি গুড় উৎপাদন করতে পারেন। প্রতি কেজি গোলের গুড় ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।
সুমিতের স্ত্রী নমিতা জানান, ঢাকা, পাবনা, বরিশাল ও খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মোবাইলে কথা বলে তাদের গুড় কিনে নেন ক্রেতারা। পাবনার একটি কোম্পানিকে ইতোমধ্যে ১০০ কেজি গুড় কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ বছর থেকে পটুয়াখালীতে গোলের গুড়ের প্রচারে সহায়তা করার কথা জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অণুবিভাগ) মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী কলাপাড়া এলাকায় মাঠপর্যায়ে কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, গোলের গুড় এ অঞ্চলের একটি বিশেষ মৌসুমি কৃষিজ পণ্য হওয়ায় তা আরও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন নিশ্চিত করাসহ উৎপাদকদের কারিগরি ও মার্কেটিং সুবিধা নিশ্চিতেও কাজ করবে মন্ত্রণালয়।