কিশোরগঞ্জ–ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে কিশোর ছিনতাইকারী চক্র মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। একেকটি মোটরসাইকেলে চক্রের দুই–তিনজন সদস্য একত্রে ছিনতাইয়ে নামে।
বেপরোয়া গতিতে তারা মোটরসাইকেল চালায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে তারা পথচারী বা গাড়িতে থাকা যাত্রীর মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, স্বর্ণের দুল ও নেকলেস, ব্যাগ ইত্যাদি ছিনিয়ে নেয়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে তারা এলাকা থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এ সব ঘটনায় পথচারী ও যাত্রীরা গুরুতর আহত হয়। এমন ঘটনা অহরহ ঘটায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রাবিরতি স্থান মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী চক্রের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। তাদের হাত থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী–পুরুষ রক্ষা পাচ্ছে না। ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানায় কেউ অভিযোগ করেন না। আবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ–ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের চৌদ্দশ বাসস্ট্যান্ডে দ্বিতীয়বারের মতো ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়েন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রভাতী সরকার।
তার হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ব্যাগে মোবাইল ফোন, টাকা ও অফিশিয়াল কাগজপত্র ছিল। এ সময় তার হাতের বালাও ভেঙে যায়। রক্তাক্ত জখমের শিকার হয়ে তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাশের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে নিয়ে চিকিৎসা করান।
খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগও নেওয়া হয়।
মহাসড়কের কটিয়াদীর সীমান্তবর্তী বাজিতপুর উপজেলার উজান চর এলাকা থেকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নতুন জেলখানার মোড় পর্যন্ত এলাকায় ছিনতাইকারীরা অবাধে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
১ জানুয়ারি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফিরছিলেন কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের প্রভাতী সরকার। চৌদ্দশ এলাকায় তার সিএনজি অতিক্রম করার চেষ্টা করে একটি মোটরসাইকেল। কাছাকাছি এসে হঠাৎ তার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দেয় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ছিনতাইকারী।
২১ ডিসেম্বর সিএনজি অটোরিকশায় আসার পথে চৌদ্দশ এলাকায় মোটরসাইকেল বাহিনীর ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়েন নেত্রকোনা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিথী আক্তার। ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সিএনজি থেকে তিনি ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার ব্যাগ নিয়ে ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা চৌদ্দশ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটরসাইকেল বাহিনী ছিনতাইকারী চক্রের অপতৎপরতার কথা স্বীকার করেন। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব আর বড় ভাইদের দাপটে অপরাধী চক্রের সদস্যরা অধরা থেকে যাচ্ছে।