চট্টগ্রামে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এতে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেছে। কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আক্রান্তরা সরকারি হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রকল্প চালু ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবার পোষা কুকুরকে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কার্যক্রম চালু থাকলেও ভ্যাকসিন সরবরাহ অপ্রতুল।
চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। রাস্তাঘাটে ফুটপাতে বেওয়ারিশ কুকুর পড়ে থাকে। এতে চলাফেরায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। আক্রান্তরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিনের জন্য ভিড় করছে। বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিনের দাম বেশি হওয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে অনেকের পক্ষে ভ্যাকসিন প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। চসিক কুকুরের কামড়ানো রোগীদের নামেমাত্র মূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করত। কিন্তু গত প্রায় দুই বছর যাবত কুকুরের ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ। আর্থিক সংকটের কারণে ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রতিদিন রোগীরা এসে ফেরত যাচ্ছেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে সরকারি ভাবে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ভ্যাকসিন চালু রয়েছে।
নগরীর জেনারেল হাসপাতালে দেখা গেছে, কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন নিতে নানা বয়সী নারী পুরুষের দীর্ঘ লাইন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি সময়ে ভ্যাকসিন নিতে আক্রান্তরা বেশি ভিড় করছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ইত্তেফাককে বলেন, জরুরি বিভাগে কুকুরে কামড়ের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। আমাদের আলাদা একটি রুম করতে হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক দিনে প্রায় ২০০ জনকে ভ্যাকসিন দিতে হয়েছে। আমাদের ভ্যাকসিনের কোনো সংকট নেই। বিভিন্ন স্থানে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রকল্প চালু ছিল। বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করা হতো। কিন্তু গত দুই/এক বছর যাবত প্রকল্পের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, কোভিডের আগে প্রকল্পের কার্যক্রম চালু ছিল। এর পর আর হচ্ছে না।’ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু পোষা কুকুরদের ভ্যাকসিন প্রদান করি। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় থেকে কুকুরের মালিকরা ৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারেন। তবে ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে। মাসে পাঁচ/ছয় পিসের বেশি ভ্যাকসিন বরাদ্দ মিলে না।’
জানা যায়, কুকুর, বিড়াল ইঁদুর কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হয়। দুই ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হয়। একটি ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে। এটি একজন রোগীকে তিন ডোজ আর যেটি মাংসের ভেতর দিতে হয় সেটি চার ডোজ। এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা করে কিনতে হয়। এতে দরিদ্র মানুষের পক্ষে তিন/চার ডোজ ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব হয় না। কুকুরের কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে রোগীদের রেবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি রেবিস ইমোনোগ্লোবিন (রেবিস আইজি) প্রদান করতে হয়।
ফৌজদারহাট সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এখানে ২০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। আক্রান্ত কম হলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সারা বছরই এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এখানে আউট ডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চালু রয়েছে। রেবিস ভ্যাকসিন ও রেবিস আইজি সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে।