শীতে শিশুর সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ কিছু অসুখ বেশি হয়। আক্রান্ত হলে দুই–তিন দিন নাক বন্ধ থাকে, নাক দিয়ে পানি ঝরে, গলা ব্যথা ও খুসখুস করে, শুকনো কাশি থাকে। জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো ভাইরাস রোগ। চিকিৎসা নিলে সাত দিন, না নিলে এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ভাইরাসজনিত ঠান্ডা–কাশিতে কোনো ওষুধ লাগে না। তবে শিশুর ক্ষেত্রে শুকনো কাশি কিছুদিন বেশি ভোগাতে পারে। একটু সতর্ক থাকলেই এগুলো এড়ানো সম্ভব। শীতকালীন ঠান্ডা–কাশি খুব ছোঁয়াচে। দ্রুত ছড়ায়। তাই যার হয়েছে, তাকে অন্যদের সামনে হাঁচি–কাশি দেওয়া থেকে বিরত রাখুন।
হাঁচি–কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন বা করতে বলুন। বাইরে বেরোলে নাক–মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। ধুলাবালি, ঠান্ডা থেকে দূরে রাখুন। শীতে নিয়মিত গোসল করাবেন। তাতে ধুলোবালি ও ভাইরাস দূর হবে। সর্দি–কাশির ঝুঁকি কমে যাবে। শিশুদের আরামদায়ক টুপি ও মোজা পরাবেন। জুতা পরিয়ে রাখুন। খালি পায়ে ফ্লোর বা মাটিতে হাঁটলে ঠান্ডা লাগতে পারে। ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার ও আইসক্রিম খাওয়াবেন না। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে দিন। ভিটামিন–সি যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খেতে দিন। অনেকে কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে বা ঠান্ডা বেড়ে যাবে– এমন কথা বলেন। কলা একটি নন–অ্যাসিডিক, লো গ্লাইসেমিক খাবার, যা গলা খুসখুস ও ঠান্ডা–সর্দির ভাব কমায়।
সাধারণ ঠান্ডা–সর্দি–কাশিতে শিশুকে বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়াবেন। অন্যান্য খাবারও খাওয়াবেন। মধু, তুলসী পাতার রস, আদা চা, লেবুর শরবত বা চা, হালকা গরম পানি অল্প অল্প করে পান করাবেন। হাতে–পায়ে সরিষার তেল আর রসুন মালিশ করলে আরাম পেতে পারে। শিশুকে সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করান। ডিমের সাদা অংশ, গাজর, চিকেন স্যুপ ঠান্ডায় ভালো কাজ করে।
নাক বন্ধ হলে নাকের ফুটোয় সরিষার তেল লাগাবেন না। শিশুর নাক পরিষ্কার রাখুন। তাতে শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে সুবিধা হবে, খাওয়া বাড়বে। নাক পরিষ্কারের জন্য নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করুন। একটু বড় শিশুরা সর্দি, গলা ব্যথা বা শুকনো কাশির জন্য লবণজলে গড়গড়া করেেব। ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে গরম পানিতে মেনথল মিশিয়ে সেই ভ্যাপার নাক–মুখ দিয়ে টানলে বন্ধ নাক দ্রুত খুলে যাবে। অক্সিমেটাজোলিন বা জাইলোমেটাজলিন নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারবে। তবে সাধারণ ঠাণ্ডা–সর্দি–কাশিতে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন না। কাশি হলেই কাশির ওষুধ খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, রোগ সাধারণ হোক বা মারাত্মক, যে–কোনো স্বাস্থ্যসমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন; নিজের ইচ্ছামতো বা অন্য কারো পরামর্শে নয়।
খেয়াল রাখুন, শিশু বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে কিনা। নেতিয়ে পড়ছে, হাসছে না, খেলছে না, তাকাচ্ছে না– এমন হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। জ্বর এলে, খেতে না পারলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে অথবা বেশি ঘনঘন শ্বাস নিলে, শ্বাস নিতে বুকের নিচের দিকটা দেবে গেলে, বুকে শাঁ–শাঁ বা চিঁ–চিঁ শব্দ, কাশি দীর্ঘস্থায়ী কিনা (২ সপ্তাহ বা তার বেশি) হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এগুলো বিপদচিহ্ন।