জীবনটা অবশ্যই পরীক্ষা নিরীক্ষার জীবন। বেঁচে থাকার তাগিদে বহু ধরণের কাজে নামতে হয়েছে; আঁকাবাঁকা পথে হাটতে গিয়ে পা না ভাঙ্গলেও মচকে গেছে বহুবার, অগত্যা কিছুদিন বিশ্রাম এবং সহজ সরল পথে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে গিয়ে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে।
একবার কমলা বিক্রি করেছি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে, বেশ ভালোই বিক্রি হলো, সে অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন ফন্দি মনে জাগলো, যদি কমলার জুস বিক্রি করা সম্ভব হয় তবে হয়তো আরো অধিক লাভজনক বাণিজ্য হবে। যেমন চিন্তা তেমন পদক্ষেপ নিতে কালবিলম্ব আর করলাম না। গ্লাসে একই কমলার জুস রেখে দিলাম, সাথে অবশ্য কমলাও রেখে দিয়েছি ঝুড়িতে এই ভেবে, প্রয়োজনমত ক্রেতা বেছে নিবে। দিনের শেষে প্রমাণ পেলাম গোটা কমলার ঝুড়ি শেষ, অর্থাৎ বিক্রি হয়ে গেল, তুলনামুলক আমার দ্বারা সহজ করে দেয়া কমলার জুস তেমন আর বিক্রি হলো না।
বিষয়টি আমাকে ভাবনায় ফেলেদিল। গোটা কমলা ছুলতে হবে, ভিতরে প্রবেশ করতে হবে, তারপর কমলার রসে পরিপূর্ণ ক্যাপস্যূল থেকে চিবিয়ে চিবিয়ে রস বের করে তবে ভোক্তা পাবে পরিতৃপ্তি; তা তো বেশ শ্রমসাধ্য বিষয়। আমার ধারণা হেথা আর টিকল না। আমার চিবানোটা বা নিংড়ানোট তারা কেন খাবে!
মানুষ আস্ত কমলাটা যতটা বিশ্বাস পূর্বক গ্রহণ করে, উক্ত কমলার রস যা আমার হাতে প্রস্তুত করা ছিল, তার উপর ভরসা করতে পারছিল না। হয়োত আমার কাজে তাদের বিশ্বাস ভরসা করতে তাদের সমস্যা ছিল।
মানুষ জীবনে অনেক কথাই বলে থাকে, অনেকের সাথে অনেক প্রতিজ্ঞা করে আসে, শেষতক কি তারা কথানুযায়ী বাস্তবায়ন দেখতে পায়? আমি কি পেরেছি বজায় রাখতে ইতোপূর্বে যতগুলো প্রতিজ্ঞা করে এসেছি তার সবটুকু? আদম থেকে শুরু করে সকল মানুষ চরমভাবে ভ্রান্ত; সঠিক পথে চলে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। মানুষের হাতে মানুষের রক্ত ক্ষরিত হয়ে আসছে আদমের পুত্রদের মধ্যে। গোটা পৃথিবীটা হলো একটা বদ্ধ ভূমি, তা রাষ্ট্র পরিচালনা, প্রশাসনিক কর্মকান্ডের খাতিরে হোক (মানুষ) অপরাধী সাজা পেয়ে আসছে মানুষের রচিত নিয়ম কানুনের বিচারে। ব্যবসা বাণিজ্য তথা জমি জমা নিষ্কণ্টক করার জন্য কণ্টক মুক্ত করার খেলা খেলতে দেখেছি বহুবার। বিগত আশি বৎসরের অভিজ্ঞতার নিরীখে দেখতে পেয়েছি, ধর্ম রক্ষার অজুহাতে হাজার হাজার মানুষ হত হয়েছে “বিধর্মী” অভিধার সুবাদে। অথচ সকল ধর্মের নির্যাস হলো “জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর (খোদা)”। কালামপাকে পরিষ্কার বর্ণীত রয়েছে খোদা জগতকে দোষী সাব্যস্থ করার জন্য স্বীয় কালাম ও পাকরূহ মানুষের বেশে জগতে প্রেরণ করেন নাই বরং মানুষকে রক্ষা করার জন্যই তাকে পাঠিয়েছেন। মানবরূপে আগত কালেমাতুল্লাহ নিজের প্রাণ পর্যন্ত কোরবানি দিলেন মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দেবার জন্য।
খোদার কাছ থেকে প্রেম ও ক্ষমার শিক্ষা পেয়ে আসছি সেই আদিকাল থেকে, আর খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের জীবনাচরণের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা পেল উক্ত ঐশি বিধিকলাপ, যা হলো এক চূড়ান্ত মূল্য, হৃদয়বীদারক ত্যাগ–তিতীক্ষা। গুনাহের জন্য কোরবানিী পরিশোধ করার জন্য অবশ্যই এক নিখুঁত মেষের প্রয়োজন শর্ত পূরণ করতে হলে। মানব জাতির মধ্যে অর্থাৎ আদমের বংশে তেমন কোনো নিষ্পাপ মানুষ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। দয়াপরবশ হয়ে খোদা নিজেই তেমন এক বেগুনাই ঐশি মেষ জগতে প্রেরণ করলেন, যিনি স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে, প্রেমের তাগিদে, মানবজাতিকে পাপমুক্ত করার জন্য, নিজেই কোরবানি হবার জন্য এগিয়ে এলেন কোরবানগাহে। স্বার্থান্ধ মানুষের পক্ষে ঐশি ত্যাগের মহিমা অনুধাবন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। মানুষ বর্তমানে অল্পসল্প পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মানুষ খুন করে বসে, তাদের পক্ষে ঐশি প্রেম ও চূড়ান্ত ত্যাগের বিষয় ধারণা লাভ করা হবে অসম্ভব বিষয়।
আমাদের জীবনে কতটুকু পরিবর্তন ঘটেছে তা সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে না, তবে যিনি সকলের জীবনে একটা আমুল পরিবর্তন বয়ে আনেন, তাঁর সাথে সকলকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে সর্বোত্তম দায়িত্ব পালন; যা হবে নতুন জীবনের যথার্থ পরিচয়। যেমন সমরীয় নারীকে গ্রামবাসি অভিব্যক্তি প্রকাশ করেচিলেন, এখন আমরা নিজেদের চোখে দেখতে পাচ্ছি বলে বিশ্বাস করছি (ইউহোন্না ৪:৪২)।