মুনিয়া খান রোজা। নীলক্ষেত থেকে অ্যাপ্রোন ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা থেকে কিনেছেন স্টেথোস্কোপ। বানিয়েছেন ভুয়া আইডি কার্ড। নিজেকে গাইনি চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যেতেন তিনি। ডাক্তারদের অ্যাপ্রোন পরে রুমে ঢুকে তাদের মূল্যবান মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রীও চুরি করতেন মুনিয়া। অন্যদিনের মতো গত শনিবারও চিকিৎসক সেজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। এ সময় তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়াতে রাতে ঢামেকের নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে শাহবাগ থানায় তাকে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের হাতে ধরা পড়ার পর মুনিয়া প্রথমে দাবি করেন– তিনি চিকিৎসক। পরে মেডিকেলের চিকিৎসকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভয়ে প্রথমে বলেছিলাম– আমি ঢাকা মেডিকেলের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক।
আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আসলে আমি কোনো চিকিৎসক নই, চিকিৎসা পেশার সঙ্গে আমি জড়িত না।
আমি নীলক্ষেত থেকে অ্যাপ্রোন কিনি। মুনিয়া বলেন, আমি মূলত ঢাকা মেডিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাই। এ ছাড়াও অ্যাপ্রোন পরে চিকিৎসকদের রুমে ঢুকে সুযোগ পেলে মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি করেছি। আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর জীবনেও এ কাজ করবো না বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে হাসপাতালের আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী বলেন, ‘ঘটনার সময় নতুন ভবনের আইসিইউ’র দায়িত্বে ছিলেন এপিসি জামান উদ্দিন। তিনি আমাকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে– একজন নারী চিকিৎসকের পোশাক পরা অবস্থায় আইসিইউ’র ভেতর থেকে বের হচ্ছেন। তাকে দেখে কোনো ভাবেই বোঝার উপায় নেই তিনি ডাক্তার নন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। একথা শুনে তখন আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। প্রথমে তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে অন্যান্য চিকিৎসকের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি এলোমেলো উত্তর দেন। এ সময় তাকে গাইনি বিভাগে নেয়া হলে আবাসিক চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান রাজি জানান– ওই নারী চিকিৎসক নন।
তার আইডি কার্ডটিও ভুয়া। তখন তাকে আমরা জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি চিকিৎসক নন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, অভিযুক্ত ভুয়া নারী চিকিৎসককে প্রথমে আমাদের নারী আনসার সদস্যদের পাহারায় নিরাপত্তা হেফাজতে ৭ নম্বর রুমে রাখা হয়। পরে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়। তিনি জানান, অভিযুক্ত ভুয়া নারী চিকিৎসকের বাড়ি চাঁদপুর সদরের হামানকর্দ্দি গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত মোহাম্মদ করিম খান। বর্তমানে তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড এলাকায় বাসা ভাড়া থাকেন। ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম বলেন, যারা ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে এ ধরনের অপকর্মে সহায়তা করে তাদেরও চিহ্নিত করা দরকার। শাহবাগ থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) সানরুল হক বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল সকালে মুনিয়াকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার ব্যবহৃত চিকিৎসকদের ইউনিফর্ম, ভুয়া আইডি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।