তিনজনের সংসার তাইজুল ইসলামের। থাকেন ছোট একটি বাড়িতে। দুটি বাতি ও একটি ফ্যান ব্যবহার করেন। স্বাভাবিক নিয়মে বিদ্যুৎ বিল আসার কথা সামান্যই। তবে নভেম্বর মাসের বিলের কাগজ হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। বিল এসেছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। বাগেরহাট সদরের বাসিন্দা তাইজুল চায়ের দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অবশ্য এটি কম্পিউটার টাইপিংয়ের ভুল বলে দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাতে সন্তুষ্ট নন দোকানিসহ এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ভূতুড়ে বিলের কারণে এমন পরিস্থিতি শিকার হচ্ছেন অনেকে। চা দোকানির এক মাসের বিল প্রায় ১৪ লাখ টাকা আসায় তাদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামের চা দোকানি তাইজুল।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে দেওয়া বিলের কপিতে দেখা যায়, নভেম্বর মাসের বিল এসেছে ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৭ টাকা। নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিলম্ব মাশুলসহ পরিশোধ করলে অতিরিক্ত আরও ৬৬ হাজার ৫৭ টাকা গুনতে হবে তাইজুলের। অথচ এর আগের মাসে তাঁর বিল এসেছিল ১০০ টাকার কম। সংশোধনের পর দেখা গেছে, মূল বিলের পরিমাণ ১৬২ টাকা।
ভুক্তভোগী তাইজুল ইসলামের কথায়, অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৯৩ টাকা। অথচ নভেম্বর মাসে ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা হয়ে গেছে। বিলটি হাতে পাওয়ার পর মোবাইল ফোনে চেক করেন। সেখানেও একই অঙ্কের টাকা দেখায়। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তাইজুল বলছিলেন, ‘আমার ছোট পরিবার। এত টাকা বিল দেখে ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন বাড়িতে এসে সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে যায়।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের বিলের এ ধরনের সমস্যা নতুন নয়। অনেক সময় মিটার রিডাররা বাড়িতে না এসে ইচ্ছামতো রিডিং বসিয়ে দেন। এলাকার অনেকে আছেন, যারা পড়াশোনা জানেন না। মিটারের রিডিং দেখা বোঝেনও না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিল করার সময় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
সদরের কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র স্কুলের সামনে ছোট মুদি দোকান মেহেদীর। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিল আসে তাঁর। তবে নভেম্বর মাসে বিল এসেছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। পরে সব দোকানি মিলে সমন্বয় করেছেন। বাড়ির বিলও এসেছে প্রায় ৮০০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ।
একই ধরনের কথা জানান বিল্লাল নামে এক অটোরিকশাচালক। তাঁর আগে ২ হাজার ৪০০ টাকার মতো বিল এলেও নভেম্বরে ছিল ৫ হাজার ৪০০ টাকা।
প্রায়ই এমন অতিরিক্ত বিল আসে অভিযোগ করে বৈটপুর গ্রামের ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, কেউ কেউ অফিসে গিয়ে ঠিক করে আনেন। অনেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দেন। এটি বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের খামখেয়ালি ছাড়া কিছু না। এর দায় শোধ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ চায় সবাই।
কম্পিউটারের সফটওয়্যারের সমস্যার কারণে তাইজুল ইসলামের বিল বেশি এসেছে বলে দাবি বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (অর্থ) মো. রিপন বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘আমরা বিলটি সংশোধন করেছি। ১৬২ টাকার বিল গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’