মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জে গত এক সপ্তাহ থেকে ক্রমশ তাপমাত্রা নিচে নামতে শুরু করেছে। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে শিশুসহ বয়স্কদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছে। এদিকে ঠাণ্ডায় ছিন্নমূল, বস্তিবাসী ও দিনমজুররা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলস্থ আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জানা যায়, চা–বাগান ও বনাঞ্চল থাকার কারণে শহর থেকে গ্রামে শীতের তীব্রতা বেশি। ঠাণ্ডাজনিত রোগে প্রতিদিন কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন প্রাইভেট চিকিৎসকের চেম্বারে শিশু ও বয়স্কদের ভিড় বেড়েছে। এদের মধ্যে সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্যমআয়ের মানুষের ভিড় প্রতিদিন বাড়ছে। শীতে দিনমজুর, চা–বাগানের মানুষ, ছিন্নমূল ও বস্তির লোকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। চা–বাগানসমূহে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও কুয়াশাও তুলনামূলক বেশি থাকে। ফলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময়ে কাবু হয়ে পড়েন চা শ্রমিকদের একটি বড় অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন।
চা–শ্রমিকরা জানান, স্বল্পআয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারণে এসব পরিবারের সদস্য ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সময় কাটান।
শমশেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চা–বাগানের শ্রমিকনেতা সীতারাম বীন বলেন, শীতের সময়ে চা–শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করেন না। কয়েক বছর আগে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে চটের বস্তা বিতরণ করত। এখন আর কিছুই দেওয়া হয় না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবারের সদস্য শীতে কষ্ট পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষক মো. আনিছুর রহমান জানান, সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রার এ অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণে সর্দি, জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতালেও এসব রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলায় এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শীতবস্ত্র আসেনি। বরাদ্দ এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।