প্রত্যেকটি বিষয়ের নানাবিধ ধারণা জনমনে সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন মূর্ত ও বিমূর্ত। মনোগত বা ধারণা, বাস্তব ও অবাস্তব ইত্যাদি।
ভ্রান্তি তাৎক্ষণিক, অহরহ, নিশিদিন যা ঘটে চলা, তা প্রকাশ করা হলে অপরাধি লা–জবাব হতে বাধ্য, আর অতীতের ঘটে যাওয়া ক্ষুদে বা মারাত্মক ঘটনাপুঞ্জী আটঘাট বেধে অডিট আপত্তিসহ প্রকাশ করা হলে অপরাধি স্বীকার করতে বাধ্য, এবং যথাযথ ব্যবস্থানুযায়ী জরিমানা দিতেও থাকে বাধ্য।
বর্তমানে ইস্রায়েল বনাম হামাস (ফিলিস্তিন) এদের মধ্যে ঘটে চলা যে লঙ্কাকান্ড ঘটে চলছে তাতে কত লক্ষ প্রাণ অকালে ঝড়ে পড়ছে, কেউ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এবং আবাল–বৃদ্ধ–বণিতা ভুগে চলছে মরণ জ্বালায়, তার সঠিক হিসেব আছে কি কারো জানা? ইউক্রেন রাশিয়ার মধ্যে ঘটে চলা কুরুক্ষেত্র এবং রক্তের দামে কেনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রাজনীতির অযুহাতে নগর–জনপদ, যানবাহন, আবাসিক–বাণিজ্যিক স্থাপনা ভষ্মিভূত করণ এমনকি রাত দ্বিপ্রহরে যানবাহনে আগুন দিয়ে জানান দেয়া হয় অগ্নিবাজরা দেশ জনতার সেবায় রয়েছে হরদম নিবেদিত সত্যি কি তাই? এই কোন সমাজে আমরা বাস করছি।
মানবতার ডাক দিয়ে মানুষ নিধন, যা শুরু হয়েছে আদমের প্রথম জোড়া পুত্রদের মধ্যে। আর খোদার নয়নকাড়া সৃষ্টি প্রথম মানুষ আদম, কার টানে, কার আকর্ষণে, সুমহান স্র্রষ্টা, প্রেমের পরাকাষ্ঠা খোদার অবাধ্য হলো তা অবশ্যই বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
খোদা নিজের সুরতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন কেবল স্বীয় প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কেননা, তিনি হলেন এক রূহানী অদৃশ্য সত্ত্বা, যাকে চর্মচোখ দিয়ে দর্শন করা সম্ভব নয়; তাকে দর্শন করতে হলে ব্যক্তিকে রূহানী আবেশে উন্নীত হতে হবে, অথবা খোদাকে দৈহিক কলেবরে আবির্ভূত হতে হবে; যেমন বায়ু নিয়ত বহমান থাকে, কখনো প্রবল বেগ অথবা মৃদু বেগ, তা যাই হোক না কেন, এর প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি।
মানুষের নির্মাতা খোদা মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করে তাকে দোয়া করেছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন স্বীয় বংশ সংখ্যা বৃদ্ধি করে গোটা বিশ্ব আবাদ করার জন্য। একই ব্যক্তি ও পরিবার থেকে সকল মানুষ সৃষ্টি করার মর্মকথা হলো, তারা যেন স্বজন প্রিয়জন মিলে মিশে সুখে শান্তিতে বসবাস করে এবং খোদার গৌরব বহন করে চলে।
মানুষের চরম ভ্রান্তি, আজ তারা পরষ্পর স্বজন–প্রিয়জন সুহৃদ না হয়ে পরষ্পর সাপ–নেউলে পরিণত হয়ে পড়েছে।
সাধারণ পরিবার থেকে শুরু করে রাজ–রাজাদের পরিবার পর্যন্ত খুন রাহাজানি দিয়ে আমিত্ব ও হীন স্বার্থপরতা প্রতিষ্ঠা করেছে। আর ধর্মীয় ক্ষেত্রে যদি এর ব্যতিক্রম হতো তবে মনকে প্রবোধ দেয়া সম্ভব হতো। ধর্মীয় ক্ষেত্রে চন্ডাশোকদের সংখ্যা কোনো অংশে কম দেখছি না। কবি যথার্থ দাবি করেছেন:
“তবুও ব্যর্থ সকল তীর্থ মিছেমিছি ধুম্র্রজাল
পান্ডা পুরোহিত শাস্ত্রীয় গীত সবই যে বিফল
পার্থীব ধারা মোহিনী করা ধোপে টেকার নয়
ত্যাগি যিনি ভোগি নন তিনি স্বজন সুনিশ্চয়”
এবার দেখা যাক আদম বংশের সকল মানুষ, আপনাকে আমাকে সহ, এমন কেউ ছিলেন কি যাকে শতভাগ বেগুনাহ হিসেবে দাড় করানো চলে। না, তেমন কেউ ছিল না এবং বর্তমানে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই; কেননা সকলে পাপ করেছে এবং খোদার গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। পাইকারীহারে সকলেই পাপী, নিজেদের হাত রঞ্জিত করেছে ভ্রাতার রক্তে। আদম বংশে বেগুনাহ ব্যক্তি কেউ ছিল না এমনকি, পরবর্তী পর্যায়ে নূহের বংশজাত কোনো ব্যক্তিও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় যাকে দিয়ে খোদার পবিত্রতার খাঁটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব।
বিশ্ববাসি চরম ভ্রান্তির শিকার! সকল প্রজন্ম সংশোধনের সম্পূর্ণ উর্ধে। কালামপাকে আশ্বাসবাণী দেখা যায়, শ্রষ্টা নিজেই মানুষের দুষিত হৃদয় তাঁর পূতপবিত্র হৃদয় দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দিবেন “আমি তোমাদের ভিতরে নতুন দিল ও নতুন মন দেব; আমি তোমাদের কঠিন দিল দূর করে নরম দিল দেব” (যিহিষ্কেল ৩৬ : ২৬)।
মানুষ কেন মানুষকে ঘৃণা করে, এড়িয়ে চলে, খুন–রাহাজানি করে? মানুষের স্বভাব আচরণ থেকে এর অধিক কিছু আমরা প্রত্যাশা করতে পারি কি? কোনো ব্যক্তির ভিতর বাহির সবটুকু অবলোকন করার সুযোগ আপনার হয়েছে কি? অসম্ভব! কেবল অন্তর্যামী, যিনি হৃদয় মনের খবর রাখেন, তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হলে প্রকৃত জবাব পাওয়া সম্ভব।
কালামপাকে অবশ্য তেমন একটা প্রত্যয়োক্তি রয়েছে, যা দেখে নিবেদিত প্রাণ খুঁজে পায় আশ^াস জ্ঞান। খোদার রহমতে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ বা মুক্তি আসে যা প্রজ্ঞা ধার্মিকতা, কৃচ্ছ্রতা, পান্ডিত্য, অর্থবিত্ত অথবা ভিন্ন কোনো কিছুর বিনিময়ে লভ্য হবার নয়। মানুষের প্রতি খোদার অনন্ত অফুরাণ প্রেমের কারণে তিনি স্বীয় সৃস্টিকে সুরক্ষা করার জন্য বদ্ধ পরিকর। তিনি এমন কথা বলেন, “আমি, আমিই আমার নিজের জন্য তোমার অন্যায় মুছে ফেলি; আমি তোমার গুনাহ্ আর মনে আনব না” (ইশাইয়া ৪৩ : ২৫)।
গর্ত খুড়ে গর্তের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করার উপায় থাকে না, তদ্রুপ পতীত জনগোষ্ঠির ছিটেফোটা কৃচ্ছ্রতা বা প্রহসনমূলক ধার্মিকতা দিয়ে মানুষের সার্বিক ঘাটতি পুরণ করার কোনো প্রশ্নই জাগে না।
সীমাহিন প্রেমের পারাবার, পূতপবিত্র দয়ার অফুরান ভান্ডার অনন্ত অসীম ক্ষমানীধি প্রত্যেকের দ্বারে দাড়িয়ে রয়েছেন সকলকে নতুনভাবে সৃষ্টি করার তাগিদে, যার কাছে আপামর জনতা আজ সমাদরে সমাদৃত; মজার বিষয় হলো অবহেলিত অপাঙ্কেয় ব্যক্তিবর্গ জানেইনা কে তাদের হৃদয়দ্বারে অপেক্ষমান! বিশ্ব–পিতা পাপের নিগড়ে বন্দি অসহায় নয়নের মনিদের অবমুক্ত করা, স্বীয় ক্রোড়ে পুনরায় সমাসীন করা, তথা তাদের হারানো প্রাধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্য বিশ্ব পিতা নিজের প্রাণের বিনিময়ে চুড়ান্ত মূল্য পরিশোধ করেছেন, ফলে আপামর জনতা বিশ্বাসহেতু হতে পেরেছে অনন্ত মুক্ত।
“দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আঘাত করছি। কেউ যদি আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব এবং তার সংগে খাওয়া–দাওয়া করব, আর সে–ও আমার সংগে খাওয়া–দাওয়া করবে” (প্রকাশিত কালাম ৩ : ২০)। “যারা হারিয়ে গেছে তাদের তালাশ করতে ও নাজাত করতে ইবনে–আদম এসেছেন” (লুক ১৯ : ১০)।