শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো, বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর বাজার খেয়াঘাটের গুমানী নদীর দুই পাশের লোকজন।
বিশেষ করে, শিক্ষার্থী ও বয়সী বৃদ্ধরা রয়েছেন অধিক ঝুঁকির মধ্যে। এভাবে কেটে গেছে যুগের পর যুগ। দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে সেতু নির্মাণের জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে খেয়া ঘাটের রশি গলায় লেগে নদীতে পড়ে মুহিম (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্র নিহতের ঘটনা ঘটেছে ইতিমধ্যে। রহিম বক্স নামে এক বৃদ্ধ খেয়া নৌকার উপর পড়ে পা ভেঙে অনেক দিন শয্যাশায়ী থাকার পর মারা গেছেন। হর হামেশা দুর্ঘটনা লেগেই থাকে নাদোসৈয়দপুর বাজার খেয়াঘাটে।
ভুক্তভোগী আতিকুর ইসলাম, আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম, আলাউদ্দীন, ওছমান আলী, পিন্টু মিয়া, তোতা মিয়া, হাসেম আলী, আব্দুল জাব্বার, আব্দুর রহিম ও হরফ আলী বলেন, নাদোসৈয়দপুর খেয়াঘাটে একটি সেতুর আশায় বুক বেধে অনেকের বাপ–দাদা মারা গেছেন। আমাদেরও বয়স হয়ে গেল। কিন্তু নদী পারাপারের সীমাহীন কষ্ট থেকে মুক্তি পেলাম না।
ভুক্তভোগী লোকজন আরও বলেন, গুমানী নদীতে এখনো ১৮ ফুটের বেশি পানি রয়েছে। বন্যার পানি কমে যাবে, নদীর পানি শুকিয়ে যাবে চৈত্রের শেষের দিকে। তবুও দুর্ভোগের শেষ হবে না। খেয়াঘাটের দুই পাশের পাড় নদী থেকে বেশ উঁচুতে। যেন পাহাড় পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে হয় আমাদের!
অপরদিকে শিক্ষার্থী বায়েজীদ হোসেন, ইমদাদুল হক, সিয়াম আলী, আলমগীর হোসেন, ইয়াছিন আরাফাত, সোহান হোসেন, আছাদুল হক, সুমাইয়া খাতুন, আয়শা পারভিন, বৃষ্টি খাতুন জানায়, শিশুকাল থেকে খেয়ার নৌকায় পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে তারা। এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে নাদোয়ৈদপুর জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওদের অনেকের বাপ–দাদা নাদোসৈয়দপুর খেয়াঘাটে সেতু দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তারা ঝুঁকি মুক্ত অবাদ চলাচল করতে চায়, একটি সেতু চায়।
নাদোসৈয়দপুর খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি বাবলু বলেন, আমার একার পক্ষে দিন–রাত রশি টেনে লোকজন পারাপার করা সম্ভব হয় না। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ খেয়ার নৌকায় পারাপার হন। আমি যখন থাকি না তখন অন্যরা রশি টেনে পারাপার হন। খেয়াঘাটের দুই পাশ থেকে বড় নৌকা এলে রশি উঁচুতে তুলে ধরতে হয়। নয়তো নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটবে। গুমানী নদীর এ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর নাদোসৈয়দপুর খেয়াঘাটের জায়গা বেচে দেওয়া হয়। যে টাকা আসে নাদোসৈয়দপুর বাজার মসজিদ ও চরকুশা বাড়ি দাখিল মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে ব্যয় করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রশি টেনে নৌকা নিয়ে নদীর এপার থেকে ওপার যাচ্ছেন খেয়াঘাটের মাঝি। আট থেকে ১০ মিনিটি পর পর নদীর দুই পারের লোকজন পারাপার হচ্ছেন। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় বসে আছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজুল বলেন, প্রাক্কলিত প্রকল্প জমা দেওয়া রয়েছে নাদোসৈয়দপুর বাজার খেয়াঘাটে গুমানী নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য।
সিরাজগঞ্জ–৩ (তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, নাদোসৈয়দপুর বাজার খেয়াঘাটের সার্ভে হয়ে গেছে। আমার সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে এলাকাবাসীর জন্য সেতুটি নির্মাণ করার।