গাজীপুর নগরীর কাশিমপুরে গোপালগঞ্জের প্রভাবশালী পরিচয়ে জমিদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মানববন্ধন করেছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন কাশিমপুর সরুপাইতলি মৌজায় অবস্থিত ওই জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, বহিরাগত ১০–১৫ জন ভাড়াটে লোক জঙ্গলের ভেতরের একটি খোলা জায়গায় টিনের ছাপড়াঘর উঠিয়ে অবস্থান করছেন। ঘরের সামনে ইট দিয়ে অস্থায়ী চুলা বানিয়ে সেখানে পিকনিকের মতো রান্নাও করছেন। তাদের সাথে কয়েকজন নারীও রয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘরটির ভেতর আরও বেশ কয়েকজন নারী ও দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র রাখা হয়েছে। সেখানে অবস্থানকারীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক বলে জানা গেছে। চলমান শ্রমিক আন্দোলনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের ভাড়া হিসেবে সেখানে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক সফিকুল ইসলাম জানান, তার বন্ধু আলমগীর ওই জায়গা ক্রয় করেছেন। আলমগীরের পক্ষে ওই জায়গা পাহারা দিতে তিনি সেখানে গিয়েছেন।
আলমগীরের আত্মীয় পরিচয়দানদারী রফিক জানান, তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শিন্নিপাড়ায়। ওই জায়গা পাহারা দেওয়ার জন্য আলমগীর তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আলমগীর টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের নেতা বলেও জানায় রফিক।
আলোচিত জমির মালিক বৃদ্ধ মহিউদ্দিন জানান, তার পিতা কলিম উদ্দিন জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পত্তি তাদের চার ভাইকে দলিলমূলে হস্তান্তর করে যান। পরবর্তীতে তার অপর ভাই গিয়াস উদ্দিনের অংশও তিনি কিনে নেন। তার পিতা কলিম উদ্দিন ও ভাই গিয়াস উদ্দিন সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হওয়ার পরও গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হারুন সম্প্রতি সাড়ে ৭ একর জমির মালিকানা দাবি করছেন। নিঃস্বত্ববান কলিম উদ্দিনকে দাতা দেখিয়ে ১৯৮৫ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল নিবন্ধনও দেখানো হয়।
মহিউদ্দিনের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, আইন অনুযায়ী ওই দলিলের কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ ওই জমি গাজীপুরে, আর দলিল হয়েছে ঢাকায়। তাছাড়া বিতর্কিত ওই দলিলের দাতা কলিম উদ্দিন আরও আগেই সমস্ত জমি হস্তান্তর করে নিঃস্বত্ববান হয়েছেন।
আব্দুস সালাম আরও বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছর যাবত তারা শান্তিপূর্ণভাবে এসব জমি ভোগদখল করছেন। জমির নামজারি জমাভাগও (খারিজ) তার পিতার নামে। তাদের সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক মালিকানার বিষয়টি জেনেও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে জনৈক আলমগীর নিঃস্বত্ববান গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হারুনের কাছ থেকে কথিত বায়নামূলে উক্ত জমির মালিকানা দাবি করছেন এবং তাদের মিথ্যা মামলায় জেলে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে জমিতে টিনের ছাপড়াঘর উঠিয়ে জবরদখলের চেষ্টা করেন।
জবরদখলের সময় তিনি কাশিমপুর থানার সহযোগিতা চাইলে থানার ওসি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে জানান, তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাবেন তবুও সেখানে পুলিশ পাঠাতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কথিত আত্মীয় আলমগীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমিটি আমি বায়নাসূত্রে কিনেছি। মহিউদ্দিন ওই জমির মালিক না, মহিউদ্দিনের ভাই গিয়াস উদ্দিন জমির প্রকৃত মালিক।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর পাড়াপ্রতিবেশী, হ্যালিপ্যাডের কাছে বাড়ি।
এদিকে সাংবাদিকরা ওই জমি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে কাশিমপুর থানায় ওসি রাফিউল ইসলামের বক্তব্য জানতে গেলে তাকে থানায় পাওয়া যায়নি। অবরোধের ডিউটিতে আছেন বলে থানা থেকে জানানো হয়। পরবর্তীতে রাতে এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত ওসির সরকারি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।