রাখাল পাঠানো হলো ছড়ানো ছিটানো মেষগুলো জড়ো করার জন্য, খোয়াড়ে ফিরানোর জন্য। অথচ, আহাম্মক রাখালের দল হারানো মেষ খুঁজতে না গিয়ে উল্টো ছড়িয়ে দিলো যারা ইতোপূর্বে ছিল একীভূত, অর্থাৎ খোদার পরিপন্থী কাজে মত্ত হয়ে পড়া, যার ফলে বিশ্ববাসি আমরা আজ চরমভাবে ভুগে চলছি নিত্যদিন।
নবী–রাসুল বলে যারা নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তারাও হয়তো জানেন না, কার পক্ষে তাঁরা কাজ করে চলছেন? যার প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করছেন, সম্ভবত তাঁর পরিচয় নেই তাদের জানা। কালামে রয়েছে, নবীদের মধ্যে ভেদাভেদ করা নিষিদ্ধ! সেই সুবাদে, সকল নবী–রাসুল একই খোদার প্রতিনিধিত্ব করণার্থে হয়েছে মনোনিত। মনে রাখতে হবে খোদার পরিচয় হলো, তিনি প্রেম। তিনি প্রেমের তাগিদে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতাদের মর্যাদার চেয়েও মানুষের মর্যাদা অনেক বেশি দিয়েছেন তিনি। তবে মানুষ হলো প্রতারিত! ধরা খেল ইবলিসের কুট চালে, নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করে বসলো, নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুঠারাঘাত হানলো। আজ মানুষ হয়ে পড়েছে অভিশপ্ত ইবলিসের ক্রিড়নক। হেন কাজ অবশিষ্ট নেই যা মানুষ ঘটাতে পারে না। অভিশপ্ত ইবলিসকে পেনশনে পাঠিয়েছে বিকারপ্রাপ্ত মানুষের দল।
মানুষের উগ্রতা যখন চরম সীমায় পৌছালো, তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে মানুষের কুকর্ম সংশোধন করে দিয়েছে অতিতে, যেমন নূহ নবীর সময়কার ৪০ দিনের জলপ্লাবন। নূহের জাহাজে যারা ঠাই নিয়েছিল কেবল তারাই বেঁচেছিল, আর তাদের বংশধর আমরা, অবশ্য তারাও ছিলেন আদমের বংশধর, কেননা, খোদা মাত্র একজন আদম সৃষ্টি করলেন।
ঐতিহাসি সূত্রমতে, বর্তমান বিশ্ব সবিশেষ জানতে পেরেছে, পূর্বের সকল ঘটনাপুঞ্জি, যথা: সর্বশক্তিমান খোদার বিশেষ অভিপ্রায় মানুষ সৃষ্টি করা, আর তা নিজের সুরতে, নিজের প্রতিমূর্তিতে! দুঃখজনক হলো, অভিশপ্ত ইবলিস মানুষকে ধোকা দিয়ে লানতি করে ছাড়লো। কলুষিত মানুষ পূতপবিত্র এদন উদ্যান থেকে হলো বিতাড়িত। খোদা তাদের কাছে পয়গাম পাঠালেন, তাদের চেতনাদৃপ্ত করার জন্য, অনুতপ্ত হয়ে মাবুদের দ্বারে হাজির হবার জন্য, গুনাহগারদের নাজাত করার একমাত্র ঐশি ব্যবস্থা হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ! তাঁকে কবুল করে নেবার ফলেই অর্জিত হয়। এবং মসিহ যে গোটা বিশ্বের পাপের প্রায়শ্চিত্ত, স্বীয় পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে শোধ দিয়েছেন, তা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস পূর্বক নিজেদের দেহ–মন–আত্মা নিঃশর্তভাবে তাঁর হাতে তুলে দেয়া হলো গুনাহমুক্তির একমাত্র উপায়।
হ্যা, যারাই নিজেদের তুলে দিয়েছেন মসিহের হাতে তারা আজ পরিণত খোদার যোগ্য সন্তান হিসেবে, তাদের ডাকা হচ্ছে দুনিয়ার নূর হিসেবে। তারা সত্যিকারের ‘নুরুল আলম’ যাদের উপস্থিতি দেখে অন্ধকার বেজায় ভয় পায় এবং দূরে পালায়। অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থাকে জাহেলিয়াত বলা হয়, তার অর্থ, উক্ত অবস্থায় বিকিরণ ঘটেনি রুহানি নূরের। উক্ত এলাকা অদ্যাবধি রয়ে গেছে ইবলিসের কর্তৃত্বাধীন। একমাত্র নুরুল আলমের পক্ষেই সম্ভব উক্ত স্থানটি আলোকিত করার। কথায় বলে, রাতের অন্ধকার প্রজ্জলিত মোম পারে দূর করতে, অন্তত: কিয়দংশ হলেও সম্ভব! তাই বলে যে মোমটি তখনও নিজে জ্বলে ওঠে নি, তেমন একটি মোমদন্ড দিয়ে কি সম্ভব, কোনো এলাকা আলোকিত করা, অথবা আর একটি মোম জ্বালিয়ে নেয়া? অসম্ভব!
ঘোষকগণ যথারীথি ঘোষণা দিয়ে গেলেন, পথ প্রস্তুত করার কাজ করে গেলেন, মহানায়কের আবির্ভাব ঘটবে, চাই মঞ্চ প্রস্তুত, তাকে সমাসীন করার নিমিত্তে। আর এ মঞ্চ হলো মানুষের হৃদয়, গোটা বিশ্বাবাসি আদম সন্তান, যারা বিতাড়িত, হারিয়ে যাওয়া, অন্ধকারে ঘুরে মরছে কেবল তাদের হৃদয়ে সাগ্রহে সমাসীম হবেন মহান মাবুদ। কোনো দল–উপদল নেই, সকলকেই করতে হবে শৃঙ্খলা মোতাবেক একীভূত, আর পাকরূহের কাজ হলো প্রত্যেককে এক নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তোলা। কেবল স্বার্থপর ইবলিস মানুষকে ধ্বংস করার জন্যই করে রেখেছে বিভক্ত, পথ শ্রান্ত।
দৃষ্টান্তটি হলো কাঁচের পাত্র পাথরের উপর পড়ে গিয়ে শত টুকরো হয়ে চার তরফ ছড়িয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত; পাত্রের মৌলিক উপযোগ নষ্ট হয়ে গেল, কোনো টুকরো, তা যত বড়ই হোক না কেন, মূল পাত্রের উপযোগ ফিরিয়ে দিতে আর পারছে না, তবু আইনানুগভাবে প্রত্যেকে তার বংশীয় আভিজাত্য প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা দিয়ে ফিরছে, শ্রোতৃমন্ডলি হচ্ছে বিভ্রান্ত। আর একটি কথা হলো, উক্ত টুকরোগুলো মূল পাত্রের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করতেও আর পারছে না। মূল পাত্রের অবিকল আর একটি পাত্র আমাদের চাই–ই চাই! কেবলমাত্র মালিক পারেন আমাদের সেই চাহিদা পূরন করতে। তিনি অত্যন্ত মেহেরবান। তিনি নিজেই সে ব্যবস্থা হাতে নিলেন, আমাদের একীভূত করার জন্য, স্নাতশুভ্র করার জন্য।
খোদা জগতকে এতই মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে মানব রূপে ঐশি মেষ হিসেবে জগতে প্রেরণ করলেন। গোটা বিশ্ববাসি রক্ষা করার জন্য তিনি তাঁকে জগতে প্রেরণ করলেন, অর্থাৎ পতিত আদম সন্তানদের জন্য। অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়া লোকদের একই প্লাটফর্মে চয়ন করার জন্য, খোদার গৌরব সাধনের যে ক্ষতি হয়েছে ইতোমধ্যে তার শতগুন ফিরিয়ে দেবার জন্য মসিহ ধরাপৃষ্টে নেমে এসেছেন, শ্রান্ত–ক্লান্ত পথিকদের উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন, যে কেউ তাঁর ডাক শুনতে পায়, গ্রহণ করে, বিবেচনা করে, তদনুযায়ী নিজেদের দেহ–মন–আত্মা মসিহের হাতে, বিশ্বাসের নিরিখে সমর্পণ করে, সেই হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ এক নতুন সৃষ্টি হিসেবে, পরিণত হয় মসিহের ফটো কপি! অবশ্য এ পরিবর্তন কেবল খোদার রহমত ও ঐশি শক্তির ফলেই ঘটে থাকে।
যারা ঈসা মসিহের পক্ষে গোটা বিশ্ব আলোকিত করার ব্রতে রয়েছেন নিবেদিত, তাদের কাছে কোনো প্রকার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে না, উচিত নয় তাদের রচনা করা মানুষে মানুষে বৈষম্য, ভাগাভাগি, কেননা তারা জানেন, সকল মানুষ পাপী, আর নাজাত সবার জন্য হয়েছে রচিত ক্রিত কেবল মসিহের পূতপবিত্র কোরবানিকৃত রক্তের দামে। কোনো ধর্ম–কর্মের দ্বারা তা অর্জিত হতে পারে না, তাই কারো গর্ব করারও কিছু থাকতে পারে না। খোদার চোখে সকলই সমান! (ইফিষীয় ২ ঃ ৮–১০)