একখন্ড আস্ত লোহার রড় কামারের হাতে তুলে দিন, সে জানতে চাইবে, উক্ত রড়টি দিয়ে আপনার জন্য কি বানাবে! আপনি আপনার ফরমাস তাকে জানিয়ে দিন! আপনি যা বলবেন তদনুযায়ী সে পুড়ে, পিটিয়ে, পানিতে ভিজিয়ে আপনার চাহিদা মোতাবেক একটি বস্তু বানিয়ে দিবে; আপনি দেখতে পেলেন, কি করে পোড়ানো, পেটানো ভিজানোর মাধ্যমে অকেজো রডটি পরিণত করল দাও বা বটি বা কোদাল, কুড়াল ইত্যাদি দ্রব্যে। বিশ্বের তাবৎ বস্তু নির্মান করার প্রক্রিয়া হলো বস্তুকে নানাভাবে আকৃতি দেয়া।
এবার আসুন, একজন অধার্মিক ব্যক্তিকে কিভাবে আপনি ধার্মিক হিসেবে রূপান্তরিত করবেন, সেই প্রসংগে ধারণা নেয়া যাক! খোদা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। নিজের মত করে। নিজের সাথে মিল রেখে। তিনি নিজে হলেন এক রূহানী অদৃশ্য আত্মা, যাকে চর্ম চোখে দেখা সম্ভব নয়। মানুষ হলো অদৃশ্য খোদার হুবহু প্রকাশ। (পয়দায়েশ এক অধ্যায় ছাব্বিশ থেকে আটাশ পদ)।
দুঃখজনক সত্য ঘটনা হলো, প্রথম ব্যক্তি চরমভাবে হলো প্রতারিত; বলতে পারেন প্রথম জোড়া মানুষ হলো দিকভ্রান্ত; যা কিছু আদিষ্ট কল্যাণজনক তা না করে ধোকাবাজ ইবলিসের লোভাতুরা মন্ত্রে বিশ্বাস করলো, খোদার সুমহান পরিকল্পনা অবহেলা করে নিজেদের খোদাদ্রোহী করে বসলো। অবশ্য তারা বুঝতে পেরেছে খোদাদ্রোহীতার চরম প্রতিফল। গোটা জীবন কেঁদে কেটে ঘর্মাক্ত মুখে আহার করে চলছে আদমের বংশধর।
মানুষকে পিটিয়ে ধার্মিক বানানো আদৌ সম্ভব নয়। মানুষ আজ পাপে ক্লেদাক্ত, চাই তাকে পুনরায় স্নাতশুভ্র করে তোলা এবং তা করার জন্য পেতে হবে, উন্নতমানের, তাৎক্ষণিক কার্যকর ডিটার্জেন্ট, যা শতবছরের পুরানো দাগ নিমিষেই তুলে ফেলার ক্ষমতা রাখে। চাই পরিষ্কার জল যা ধৌত করার কাজে ব্যবহার করা চলবে।
প্রিয় পাঠক, আপনার কি অভিজ্ঞতালব্ধ নিজস্ব জ্ঞান আছে, যখন কোনো নোংরাবস্তু ধুয়ে ফেলা হয় তখন উক্ত মলিনতাটুকু কোথা চলে যায়। হয়ত বিষয়টি নিয়ে এমন করে ভাবেন নি বা ভাবার সুযোগ পান নি। এমন একটি ব্যাসিনে আপনার পাত্রটি ধুয়ে ফেলুন যার মধ্য থেকে পানি নির্গমন হয়ে না যায়। অন্ততঃ আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু না হয়। বস্তুটি ধুয়ে ফেলার পরে তা অবশ্যই পরিষ্কার ধবধবে হয়ে ওঠবে। প্রশ্ন থেকে যায়, এতক্ষণ বস্তুটির সারা শরীরে যে মলিনতাটুকু এঁটে ছিল, উক্ত মলিনতা কোথা গেল, বা কে নিল; আর কেউ যখন আপনার ভারী বোঝা স্বীয় কাঁধে তুলে নেয় ঠিক তখনই হতে পারলেন আপনি বোঝামুক্ত। কালামপাকে তাই আহŸান শুনা যায়, (মথি এগার অধ্যায় আটাশ পদ) যদি সম্ভব হয় তবে ব্যাসেিনর জলটুকু রোধে শুকোতে দিন, জলটুকু যখন শুকিয়ে যাবে তখন দেখতে পাবেন একটা ময়লার আস্তরণ ব্যাসিনে লেগে আছে।
আদম গুনাহগার; গুনাহের বোঝায় সে পিষ্ট; পাপ হলো সাপের বিষের মত, মানুষকে অস্তির করে তুলছে; ত্রাহী ত্রাহী চিৎকার করে বিশ্বটাকে অস্থির করে তুলছে। মানুষ বাঁচতে চায়। হতে চায় পাপের বোঝা থেকে আশুমুক্ত। নিজের মুক্তির জন্য যেটা মনে জাগে তাই করে চলে । চাই বিষের অপসারণ, পাপের কবল থেকে অবমুক্তি। আশেপাশে, কাছে কিনারে, যাকেই দেখতে পায় তার কাছ থেকে সাহায্য প্রত্যাশা করে, বিষমুক্ত হবার জন্য। বিষের জ্বালায় কিভাবে যে ছটফট করে তা আমি প্রত্যক্ষ করেছি বহুক্ষেত্রে। হৃদয় বিদীর্ণ করা দৃশ্য। আমি কোনো দিন তা ভুলতে পারবোনা। কাঁধের বোঝা অপসারণ তথা শরীরের বিষ নিষ্কৃয় না করা পর্যন্ত বিপন্ন ব্যক্তির পরিত্রাণ লাভ হতে পারে কি?
সকলেই পাপ করেছে, খোদার বিরুদ্ধে চলে গেছে, কেউই খোদার নিশান বহন করছে না, প্রত্যেকের কাঁধে ঝুলছে অভিশপ্ত ইবলিসের পতাকা। কাবিল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রত্যেকটি মানুষ লিপ্ত আসক্ত কেবল পাপাচারে; যদিও খোদা বারবার তাগিদ দিয়ে ফিরছেন, “আমি পবিত্র বলে তোমরাও পবিত্র হও” (লেবীয় এগার অধ্যায় চুয়াল্লিশ পদ)। পার্থিব বোঝা তুলে নেবার মত কুলি আপনি পেয়ে যাবে ২/৪টাকা খরচ করলেই; তবে আপনার হৃদয়ে পুঞ্জীভুত পাপকালিমা কারো কাধে তুলে দেবার মত কোনো বান্ধব পাওয়া সম্ভব নয়। কেউই রাজী হবে না আপনার পাপ বা পাপের ফল বহন করার জন্য। দ্যর্থহীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষ আজ পাপাচারে চরমভাবে কলুষিত। মানুষের ধার্মিকতা খোদার পবিত্রতার তুলনায় নোংরা কাপড়ের মত (ইশাইয়া চৌষষ্টি অধ্যায়ের ছয় পদ)।
মানুষের সাথে মানুষের তুলনা করা হলে ইতর ভদ্র পেতে পারেন, তবে খোদার সাথে মানুষের ধার্মিকতা পবিত্রতা তুলনা করা হলে দেখা যাবে, প্রত্যেকটি ব্যক্তি চরমভাবে পতীত গুনাহগার। আদমবংশে কেউ নেই যাকে শতভাগ পাকপবিত্র বলে মান্য করা চলে।
আপনি গোত্র পরিবর্তন করে কি ধার্মিক হতে চান? শুনলে হাসি পায়! দেশান্তরিত হয়েও কোনো লাভ নেই, কেননা বোঝা তো আপনার ভিতরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই উক্ত কলঙ্ক সাথে সাথে পৌছে যাবে।
আপনি যখন বুঝতে পারলেন সমস্যাটি কেবল আপনার, তাই কোথাও ছুটাছুটি না করে নিজেকে হালকা করুন। যেখানেই আছেন সেখানেই বোঝা ফেলে দিন, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবার চলতে শুরু করুন। আটত্রিশ বছর ধরে পক্ষাঘাত গ্রস্থ ব্যক্তিটি পুকুরঘাটে অপেক্ষা করছিল, সুস্থ হবার মানসে, মসিহ এসে তাকে বললেন, সুস্থ হতে চাইলে সোজা হয়ে দাড়াও, খাটিয়া তুলে লও, চলতে শুরু কর। ব্যক্তিটি হতবাক, তবে আজ্ঞামাফিক চলতে শুরু করলো। আমাদের জীবনে এমন শত শত ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে; নেই মনে দিন তারিখ, তবে অদ্যাবধি যে বেঁচে আছি তা হলো কুদরতের প্রকৃষ্ট প্রমান।
বিশ্বের সকল মানুষ গুনাহগার, তবে প্রত্যেকে যে খোদার প্রিয় পাত্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খোদা জগতকে এতটাই প্রেম করলেন, স্বীয় পুত্রকে দান করলেন, যেন তিনি বিশ্ববাসীর পাপের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নেয়, ফলে আমরা হতে পারব গুনাহমুক্ত, বোঝা মুক্ত। তিনি এসেছেন আমাদের কলুষিত হৃদয় অপসারণ করে তথায় তাঁর নিজস্ব পূতপবিত্র হৃদয় স্থাপন করবেন (যিহিষ্কেল ছত্রিশ অধ্যায় ছাব্বিশ পদ)। আর ঠিক তখনই আমাদের হৃদয়ে সৃষ্টি হবে প্রকৃত প্রেম, সহমর্মীতা, পূতপবিত্রতা, ফলে দয়াময় খোদার পক্ষে আমরা কথা বলতে পারব। আমরা সকলেই খোদার খাস প্রতিনিধি। তবে আমাদের শরীরের সর্বত্র পাঁচ গা, যা নিয়ে পূতপবিত্র খোদার পক্ষে সাখ্য বহন করা অসম্ভব।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রুগ্ন ব্যক্তিকে দিয়ে আপনি কি কোনো কাজ করাতে পারবেন? তাকে সুস্থ হতে দিন, নিরোগ হয়ে উঠতে দিন, সুচিকিৎসা চালিয়ে যান, দেখবেন একসময় সুস্থ হয়ে ওঠছে, হয়ে গেছে পুনরায় কর্মক্ষম। এবার তার হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়া সম্ভব।
মসিহ এসেছেন আমাদের মুক্তপাপ করার জন্য, স্নাতশুভ্র করার জন্য, আমাদরে কৃতপাপ ও কলঙ্ক নিজের কাঁধে তিনি তুলে নিলেন, পাপের বেতন মৃত্যু, আমাদরে স্থলে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, আমাদের সকলের ঋণ তিনি বহন করলেন, যেন মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতে পারি, আজ মসিহের মাধ্যমে আমরা হতে পেরেছি গুনাহমুক্ত, সম্পূর্ণ সুস্থ সবল ব্যক্তি, যে কোনো দায়িত্ব পালনে আজ আমরা পারঙ্গম। ভিতর থেকে গানের সুর ভেসে উঠলো, “কে আছে মোরে দোষী করিবারে, বিশ্বচরাচরে আজি; চুড়ান্ত মূল্যে নিয়েছেন তুলে ডুবায়ে পাপের রাজি।”
ব্যক্তির নামধাম, খানাদানা, পোশাক–পরিচ্ছদ বাহ্যিক বস্তুর কোন পরিবর্তন করানোর তাগিদ কে দিচ্ছেন, কেন সুসম্পর্ক তিক্ত করে তুলছেন, মসিহ কি তেমন কোনো আভাস ইঙ্গিত দিয়েছেন। মসিহের পরশে ব্যক্তির কি বদলে যায় তা কি আপনার জানা আছে? দৈহিক কোনো পরিবর্তনের জন্য মসিহ ধরাপৃষ্টে আগমন করেন নি, বরং হৃদয়ের পরিবর্তন সাধন করার জন্যই মসিহকে খোদা জগতে প্রেরণ করেছেন। পাপাচারে কলুষিত ব্যক্তির হৃদয়টা যেন মসিহের প্রেমপূর্ণ হৃদয়ে পরিণত হয়ে ওঠে, মসিহের আত্মত্যাগের প্রধান ও একমাত্র কারণ এখানেই নিহীত।
ব্যক্তির কলূষিত হৃদয়ের অপসারণ হবার পরে তার কাছ থেকে সহজেই আমরা প্রেমপূর্ণ আচরণ লাভ করতে পারব। সে তো খোদার রূহের দ্বারা হচ্ছে পরিচালিত। মসিহ অবশ্য প্রতিশ্রæতি দিলেন, এক নতুন আত্মার অভিষেকের বিষয়ে। তিনি যখন আসবেন, তিনি ব্যক্তির অন্তরে বাস করবেন এবং ভিতর থেকে অনুপ্রেরণা দিবেন, পূর্ণাঙ্গ সতে পরিচালনা করবেন, বয়ে আনবেন খোদার মহিমা, ফিরিয়ে দিবেন হারানো অধিকার, যা পাপের কারণে আমরা এদন–কাননে হারিয়ে ফেলেছি। আর তা হলো মানুষ হলো খোদার প্রতিনিধি, আর তা সকলেই। মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি কেবল পাপের বিরুপ প্রতিক্রিয়া। পাপের অবসানের সাথে সাথে মানুষ পুনরায় পরিণত হলো সাধুসন্তে (দ্বিতীয় করিন্থীয় পাঁচ অধ্যায় সতের থেকে একুশ পদ)।
আসুন সর্বপ্রকার সন্দেহের উর্দ্ধে উঠে আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে প্রেম করি, যেমন প্রেম রয়েছে পিতা, পুত্র, পবিত্রআত্মার মধ্যে (ইউহোন্না তের অধ্যায় ছৌত্রিশ পদ)।