দু’দিনের ভারী বর্ষণে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৬ হাজার ৬৪১টি মৎস্য খামারের ৩৭ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে ৩ হাজার ৪০১ জন মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ভেসে যাওয়া এসব মাছের পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৫ টন ৫০০ কেজি। এ ছাড়া পাড়সহ খামারের ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মাছচাষিরই এখন পথে বসার অবস্থা। অন্যদিকে এসব মাছ শিকারে উৎসবে মেতেছে এলাকাবাসী। জাল আর বড়শি নিয়ে সারি সারি মানুষের মিলনমেলা বসেছে রাস্তার ধারে। শিশুরাও খাল–বিল, নিমজ্জিত ফসলি মাঠ ও নদী থেকে মাছ ধরছে।
এমন অনেক মৎস্য খামারের মালিক আছেন, যারা মাছ চাষ করেই সংসার চালাতেন। এমনই একজন ফিশারি মালিক হোসেনপুরের দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের শিহাব উদ্দিন।
শনিবার গোবিন্দপুর এলাকায় গেলে শিহাব উদ্দিন জানান, তাঁর ফিশারিতে রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন জাতের অন্তত ২ লাখ টাকার মাছ ছিল। একেকটি মাছ দু–তিন কেজি ওজন হয়েছিল। ব্যাপারীরা দেড় লাখ টাকা দাম করেছিলেন। তিনি বিক্রি করেননি। কিন্তু এরই মাঝে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল সর্বনাশা বৃষ্টিতে।
শিহাব উদ্দিন জানান, তাঁর ৬০ বছর বয়সে এ রকম বৃষ্টিও দেখেননি, গোবিন্দপুরের মতো উঁচু এলাকার ফিশারি আর বাড়িঘর তলিয়ে যেতেও দেখেননি। তিনি ধারদেনা করে ফিশারিতে মাছ চাষ করেছিলেন। এটিই তাঁর একমাত্র সম্বল। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দেড় লাখ টাকা লাভ হতো। তা দিয়েই ছেলেদের পড়াশোনাসহ সংসার চলে যেত। এখন তিনি দিশেহারা। তিনি দুই ছেলেকে পড়াচ্ছেন। বড় ছেলে ফাহিম জেলা শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজে অর্থনীতিতে সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। দ্বিতীয় ছেলে সাদিক পড়ছে জেলা শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।
একই গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক কৃষকের মাছের খামার থেকে ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। সাবেক সেনাসদস্য সুলতান উদ্দিনের তিনটি বড় ফিশারির অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আরেক সাবেক সেনাসদস্য নজরুল ইসলামের ১২ একরের ফিশারি থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তাঁর লেয়ার মুরগির খামার ডুবে গিয়ে ১ হাজার মুরগিও মারা গেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গোবিন্দপুর এলাকায় অন্তত দেড়শ ফিশারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
পার্শ্ববর্তী লাকুহাটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে গোবিন্দপুর–কিশোরগঞ্জ সড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ পানিতে টইটম্বুর। রাস্তার ধারে প্রচুর মানুষ জাল আর বড়শি নিয়ে বসে মাছ ধরছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় ৩ হাজার ৪০১ জন মৎস্যচাষির ৬ হাজার ৬৪১টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব খামার থেকে ১ হাজার ৮৩৫ টন মাছ অতিবৃষ্টিতে বেরিয়ে গেছে। যার মূল্য ৩৭ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাড়সহ খামারের ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।