নগর ভবনের দায়িত্বশীল কতিপয় কর্মকর্তা–কর্মচারীর উদাসীনতার সাথে বিবেকহীন অবহেলায় নগরীর পানিবদ্ধতা ও মশক নিধনের মত অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উন্নতির পরিবর্তে ক্রমশ অবনতি ঘটছে। সামান্য বৃষ্টিতেও নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জমে যাওয়া পানি দিনের পর দিন আটকে থাকছে। অথচ বালু,মাটি, পলিথিন আর ময়লা আবর্জনায় ঠাশা সড়কের পাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত দুরের কথা ছয় মাসেও পরিস্কার হচ্ছে না। ঢাকার পরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় বরিশালের অবস্থান নিশ্চিত হলেও এনগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম বলতে এখন আর নগরবাসীর চোখে কিছু পড়ছে না।
প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য নগর ভবনের হাতে থাকা ১২টি ফগার মেশিনের একটি বিকল দীর্ঘ দিন। অবশিষ্ট ১১টির সাহায্যে পর্যায়ক্রমে ৩০টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমও অনুপস্থিত। কিছু ভিআইপি এলাকার বাইরে এ নগরীর কোথায় কবে মশার ওষুধ ছেটান হয়েছে তা নগরবাসীর জানা না থাকলেও ‘নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে কাজ হচ্ছে’ বলে দাবী নগর ভবনের। তাদের দাবী, ‘সব ঠিক আছে’।
কিন্তু আমজনতার মতে, বর্তমান মেয়র আগামী মাসেই বিদায় নেয়ার আগে সব কিছুতেই যেন ছন্নছাড়া ভাব নগরভবনে। এতদিন যেসব কর্মকর্তা–কর্মচারী মেয়রের কাছের লোক হিসেবে নিজেদের অনেক কিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতেন, এখন তাদের বিবেকহীন কর্মকান্ডই নগর পিতাকে নগরবাসীর কাছে আরো হেয় করছে। সাথে নগরবাসীর কষ্টও বাড়ছে। ফলে তলানীতে ঠেকা বর্তমান মেয়রের ভাবমূর্তি আরো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এমনকি নগরীর অনেক এলাকার বর্জ্য অপসারনেও সম্প্রতি নানা ব্যাত্যয় ঘটছে। বিকেলেই নগরীর অনেক জনবহুল রাস্তার ধারে ময়লা–আবর্জনা সহ নানা ধনের বর্জ্য স্তুপ করা হচ্ছে। যা পড়ে থাকছে সন্ধ্যা গড়িয়ে অনেক রাত অবধি। নগরীর বেশীরভাগ রস্তায়ই সন্ধ্যার পরেই ঝাড়– দেয়া শুরু করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। ফলে ধুলা বালুতে দূর্ভেগে পরেন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াও পথচারী ও নানা কাজে পথেনামা মানুষ।
কিন্তু এসব দেখার এখন আর কেউ আছে বলে দৃশ্যমান নয়। নগর ভবনের কনজার্ভেন্সী শাখায় এতদিন একজন প্রাণী সম্পদ চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করলেও সম্প্রতি তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
নগরীর কাঁচা–পাকা প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত দুরের কথা ছয় মাসেও পরিস্কার হচ্ছেনা। ফলে অতীতে কখনোই যেসব রাস্তাঘাট পানি জমে থাকত না, এখন সামান্য বৃষ্টিতেই সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। নগরীর নবগ্রাম রোডের রাজু মিয়ার পুল থেকে ফরেষ্ট্রার বাড়ীর পুল পর্যন্ত অংশে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে। এমনকি বৃষ্টি ছাড়াও বছর যুড়েই সড়কের এ অংশের পাশের ড্রেনের পানি মূল রাস্তা ছুই ছুই করে। মূলত কতিপয় বিবেকহীন বাড়ীর মালিক রাস্তার ওপরেই ইট–বালু ও সিমেন্ট স্তুপ করে নানা অবকাঠামো সমুহ নির্মান করেছেন। এমনকি রাস্তার পাশে বালু সহ নির্মান সামগ্রীর স্তুপও বন্ধ হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট রোড ইনেস্পক্টর সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন। গত পনের দিন ধরে লাগাতর কম বেশী বৃষ্টিতে সড়কটির উল্লেখিত অংশে বার বারই পানি জমে গেলেও তার মধ্যেই অক্সফোর্ড মিশন রোড ও নিউ সার্কুলার রোডের মধ্যবর্তি অংশে বালুর স্তুপ জমা করা হয়েছে। যা বৃষ্টির পানিতে পাশে ড্রেনের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাকে আরো রুদ্ধ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৫ বছরেও নবগ্রাম রোডটির ড্রেন সঠিকভাবে পরিস্কার করা হয়নি। অথচ প্রায় ৮ ফুট প্রসস্ত ড্রেনটির ওপরে পকেট হোল তৈরী সহ এমএস রডের জাল তৈরী করে সেসব পকেটে নিরাপত্তায় বিপুল অর্থ ব্যায় হয়েছে। উপরন্তু ড্রেনটির পশ্চিম প্রান্তে নবগ্রাম রোড–চৌমহনীর কাছে ডেলিভারী পয়েন্টটি প্রশস্ত করতেও সম্প্রতি আরো বিপুুল অর্থ ব্যায় করা হলেও মূল ড্রেন পরিস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেনের পানি রাস্তায় গড়াচ্ছে। ফলে গত দশ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ও সংস্কার করা নবগ্রাম রোডটি কার্পেটিং সহ ম্যাকাডম’ও ক্রমশ নাজুক হয়ে পড়ছে।
একই সড়কের নবগ্রাম রোড–চৌমহনী থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত মূল খালটিও নিয়মিত পরিস্কার না করায় নগরীর পশ্চিম অংশের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা আরো রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। নিয়মিত পরিস্কার না করায় পলিথিন সহ নানা বর্জ্যে খলটির বেশীরভাগই ভড়াট হয়ে ইতোমধ্যে পানি বহন ও প্রবাহ ৯০ ভাগই রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে ভারী বর্ষণ হলেই খালটির সংযুক্ত ড্রেন দিয়ে পানি ঐ এলাকার বাড়ী ঘরকে সয়লাব করে দিচ্ছে। নগরীর পশ্চিম অংশের পুরো পয়ঃনিস্কাশ ব্যবস্থাই এখন রুদ্ধ।
নগর ভবনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা না থাকায় বিষয়গুলো নিয়ে দায়িত্বশীল কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সিটি করপোরেশেনের কনজার্ভেন্সী বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা শাহিন জানান, ‘আমরা সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি’। নবগ্রাম রোডের পাশের ড্রেনটি গত ছয়মাসে পরিপূর্ণ পরিস্কার করা হয়নি বলে স্বীকার করলেও কবে নাগাদ তা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেন নি তিনি।