ট্রেন লাইনচ্যুত হবার ঘটনা বহুবার শুনেছেন, তবে কেউ কখনো শুনেছে কিনা জানিনা, উক্ত লাইনচ্যুত ট্রেনটি সড়ক পথে চলাচল করতে শুরু করে দিয়েছে! না তেমনটা হবার নয়।
ট্রেনটি তৈরী করাই হয়েছে লাইনের উপর ছুটাছুটি করার জন্য। যে কোনো কারণে লাইনচ্যুতি ঘটতে পারে, তবে পরক্ষণে উদ্ধারকারী ট্রেন অকুস্থলে চলে আসে লাইনচ্যুত ট্রেন ও কম্পাটমেন্ট পুনরায় লাইনে তুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় মেরামত সম্পন্ন করার পর তা চালু করা হয়।
মানুষকেও খোদা নিজের সুরতে তাঁর মহিমা প্রকাশ করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ হলো মহান রাব্বুল আল–আমিনের প্রতিনিধি, কেবল কল্যাণ আর কল্যাণই হলো খোদার পরিকল্পনা যা তিনি অংকন করে রেখেছেন; খোদা মানুষের কোনো ক্ষতিসাধন করেন না; মানুষের ক্ষতি করে বেড়ায় খোদার চিরন্তন দুষমণ অভিশপ্ত ইবলিস, যে মানুষকে ধ্বংস করে ফিরছে তাদের যাত্রারম্ভ থেকে। প্রলোভন ও প্রতারণা দিয়ে মানুষকে পরিণত করেছে ইবলিসের ক্রিড়নক বা নোমায়েন্দা রূপে, যা হলো নিয়ত মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে চলা।
মানুষের কল্যাণ সাধন খোদার দ্বারা হয়ে থাকে সাধিত। খোদা নিজের প্রাণাধিক মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকেন। আর মানুষের সর্বনাশ বয়ে আনে কেবল ইবলিস ও ইবলিসা¯্রতি ব্যক্তিবর্গ দ্বারা, যা বুঝতে সাস্ত্রীয় প্রমাণ প্রাপ্তির প্রয়োজন পড়ে না। যেমন আদমের প্রথম জোড়া পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিল; কাবিল স্বীয় হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিজ ভ্রাতাকে কতল করে জগতে নরহত্যার রীতি চালু করেছে। অন্ধজন যেমন কাল স্রোতে ভেসে চলে, একইভাবে খোদার সুমহান পরিকল্পনা থেকে যারা দূরে সরে থাকে তারা সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করবে কেমন করে?
আপনার মহান নির্মাতা লাইনচ্যুত ইঞ্জিনের মত আপনাকে ফিরিয়ে আনতে চান আপনার জীবনে যতটাই দুর্ঘটনা ঘটুক না কেন, আপনি বেঁচে আছেন এটাই হবে যথেষ্ট প্রমান। তিনি আপনাকে পুনর্বার গঠন দিয়ে অবশ্যই তাঁর কাজে লাগাবেন, যে বিষয় আপনি সুনিশ্চিত হতে পারেন। খোদা হলেন চিরন্তন অব্যয় অক্ষয় চিরজাগ্রত অপরিবর্তনীয় করুনার পারাবার এক রূহানি সত্ত্বা। মানুষ মানুষের ক্ষতি করুক অথবা একজন অন্যজনকে কতল করুক যা দেখে তিনি তৃপ্ত হতে পারেন না। মানুষ কতল করা খোদাদ্রোহীতার বা খোদা–বিরোধি জঘন্য অপরাধ। মূসা নবীর মাধ্যমে খোদা যে দশটি শরিয়ত বা আইন প্রদান করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো খুনের বিরুদ্ধে একটি আইন।
মানুষ স্বীয় অপরাধের বিষয় যখন বুঝতে পারে এবং স্বীয় কৃতকর্মের জন্য সে যদি অনুতপ্ত হয় এবং অপরাধ প্রবণতা ও বদঅভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে চায় তখন খোদা অবশ্য্ই তাকে ক্ষমা করেন এবং তার কোনো ক্ষতিয়ান তিনি ধরে রাখেন না, যেমন ইশাইয়া নবীর মাধ্যমে “আমি, আমিই আমার নিজের জন্য তোমার অন্যায় মুছে ফেলি; আমি তোমার গুনাহ্ আর মনে আনব না” (৪৩ : ২৫)। অনেকের জীবনে তেমন আমূল পরিবর্তন সাধিত হতে দেখেছি। আপনি যদি পাককালাম পাঠ করেন তবে বহু দৃষ্টান্ত আপনাকে মুগ্ধ করবে।
প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আজ পর্যন্ত আপনি বেঁচে আছেন এর তাৎপর্য হলো, আপনার উপর খোদার সুমহান প্রভাব ও পরিকল্পনা পুনরায় চালু করবেন। কেননা, তিনি কাউকে হারাতে চান না। মনে রাখবেন মানুষের ক্ষতিসাধন কেবল অভিশপ্ত ইবলিসের দ্বারা হয়ে থাকে। কালামে আছে, চোর আসে চুরি, খুন ও নষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়েই; কিন্তু খোদাবন্দ হযরত ঈসা কালেমাতুল্লাহ এসেছেন মানুষকে জীবন দান করার জন্য। কালামপাকে দেখতে পাবেন, তিনি মৃতকে পর্যন্ত জীবিত করে তুলেছেন, অবশ রোগীকে মুখের কথায় সুস্থ করে তুলেছেন, জন্মান্ধকে চক্ষুদান করেছেন, সমুদ্রে ঝড়ো হাওয়া থামিয়ে দিয়েছেন এবং সবচেয়ে আশ্চর্যকাজ হলো, তিনি নিজে মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হয়ে ওঠেছেন। তিনি কারো কোনো ক্ষতি করার জন্য পৃথিবীতে আগমন করেন নি বরং গুনাহগারদের জন্য নিজের রক্তের দামে কাফফারা পরিশোধ করেছেন। তিনি যথার্থ বলেছেন, পাপ ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। “পাপ ও পাপী” তিনি গুলিয়ে ফেলেন নি। যেমন “পানপাত্র এবং পানেয় দ্রব্য” এক নয়; পানেয় দ্রব্য পান করার জন্য একটি পাত্রের প্রয়োজন হয়, তাই বলে কেউ পাত্র পান করে না। কথাটা বলার অর্থ হলো, যে পাত্রে কেউ মদ্যপান করতো, মদের অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরে উক্ত ব্যক্তি যদি উক্ত পাত্রে দুধ বা জলপান করে তাতে তো কোনো ক্ষতি হতে পারে না। ব্যক্তিকে অন্ধকার থেকে যদি আলোর রাজ্যে অবমুক্ত করা সম্ভব হয় তখন তেমন ব্যক্তিই হয়ে ওঠে প্রকৃত সত্যান্বেষী যারা তেমন ইতিহাস রচনা করে গেছেন।
সবকিছুর পিছনে রয়েছে খোদার হাত। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন নিজের মত করে, নিজের উদ্দেশ্য সাধন করার নিমিত্তে। তিনি হলেন মহাশক্তিধর, তার ওয়াদায় সন্দেহারোপ করা কেবল অভিশপ্ত ইবলিসেরই মানায়।
লাইনচ্যুত ইঞ্জিন উদ্ধার করার পর তা যেমন লইনেই চলাচল করে, বখে যাওয়া ব্যক্তিবর্গ খোদার রহমতে পুনরায় খোদার গৌরব বহন করে ফিরবে যা কতইনা সুনিশ্চিত বিষয়!
প্রথম দিন থেকেই মানুষ যত ধরণের অপরাধ কর্মে যুক্ত হয়ে পড়েছে, তার জন্য ইবলিসের কুমন্ত্রণা যেমন দায়ী, তাছাড়া মানুষের মাংসিক কামনা বাসনাও কোনো অংশে কম নয়। কালামে যেমন লেখা আছে: দেহের কামনা, চোখের লোভ এবং সাংসারিক বিষয়ের অহংকার সত্য থেকে মানুষকে ভ্রান্তির পথে ঠেলে দেয়। তাছাড়া এগুলো কেবল পার্থীব বিষয় নিয়ে মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। খোদা এবং তাঁর রূহানি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে মানুষকে সুযোগ দেয় না। কালামপাকে তাই বর্ণীত রয়েছে ঐশি বিষয় নিয়ে ভাবনা চিরন্তন কল্যান জনক। মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, খোদার মুখনিশ্রিত কালামের দ্বারাই বেঁচে থাকে (মথি ৪ : ৪)।
উদ্ধেগ উৎকণ্ঠা হতাশা ব্যর্থতা খোদার অভিধানে খুঁজে পাবেন না; ওটা কেবল খোদাদ্রোহী ব্যর্থ মানুষের রচনা। মানুষ কোনো বস্তুর পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না, মানুষ যা করে তা হলো বস্তুর উপযোগ বাড়ানো ও নষ্ট করা। লিখবার সময় চোখে পড়লো, আমার ঘরের কাঠের দরজার দিকে। এ দরজা বা কপাট তৈরি হয়েছে আমাদের বাগানে আমাদের হাতে রোপন করা মেহগনি কাঠ দিয়ে। খোদা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রেম ও ক্ষমার বাণী প্রচার করার জন্য।
আসুন কায়মনবাক্যে সমস্ত মন, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি দিয়ে খোদার আজ্ঞা বাস্তবায়ন করে চলি। অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে খোদার উপর ও খোদার হাতে সমর্পীত হই, এবং জগতের লোকদের অর্থাৎ প্রতিবেশি আত্মবৎ প্রেম করি।
খোদার জীবন্ত কালাম কালেমাতুল্লাহর মাধ্যমে বিশ্বাসহেতু মানুষ যুক্ত হতে পেরেছে খোদার সাথে। তিনিই গুনাহগার মানুষের গুনাহের কাফফারা পরিশোধ দিলেন নিজের পবিত্র রক্তের মূল্যে; তিনি হলেন রহমতের পারাবার যার মধ্যে ডুব দিয়ে পাপীতাপী আজ হতে পারল স্নাতশুভ্র এক নতুন সৃষ্টি, ফলে পূতপবিত্র পিতার সাথে তাদের পুনর্মিলন হওয়া সম্ভব হলো।
খোদার সুরতে গড়া মানুষ খোদার সাথে যুক্ত থাকবে তা কতইনা স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ গুনাহে কর্দমাক্ত, স্নাতশুভ্র ও পাপের ঋণ থেকে অবমুক্ত হওয়া অপরিহার্য্য। কোনো পাপী নিজের বা অন্য মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দেবার ক্ষমতা আদৌ রাখে না। মানুষের প্রতি অসীম প্রেমের আতিসহ্যে খোদা নিজেই তেমন এক অনুপম ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন, যা হলো স্বীয় কালাম ও রূহ মানবরূপে জগতে প্রেরণ করলেন, যিনি হলেন বাতেনী খোদার হুবহু জাহেরী প্রকাশ, প্রেম ও ত্যাগের মহিমা তিনি প্রমান করলেন নিজেকে মানুষের পাপার্থক কোরবানি দেবার মাধ্যমে। “মনে রেখো, ইবনে–আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মথি ২০ : ২৮)। “আল্লাহর অশেষ রহমত অনুসারে মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর রক্তের দ্বারা আমরা মুক্ত হয়েছি, অর্থাৎ গুনাহের মাফ পেয়েছি” (ইফিষীয় ১ : ৭)। “আমাদের গুনাহ দুর করবার জন্য মসিহ তাঁর নিজের জীবন কোরবানী করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করেছেন। কেবল আমাদের গুনাহ নয়, কিন্তু সমস্ত মানুষের গুনাহ দূর করবার জন্য তিনি তা করেছেন” (১ইউহোন্না ২ : ২)। “তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা কিছুই জান না, আর ভেবেও দেখ না যে, গোটা জাতিটা নষ্ট হওয়ার চেয়ে বরং সমস্ত লোকের বদলে একজন মানুষের মৃত্যু অনেক ভাল। কাইয়াফা যে নিজে থেকে এই কথা বলেছিলেন তা নয়। কিন্তু তিনি ছিলেন সেই বছরের মহা–ইমাম। সেজন্য তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেছিলেন যে, ইহুদী জাতির জন্য ঈসাই মরবেন। কেবল ইহুদী জাতির জন্যই নয়, কিন্তু আল্লাহর যে সন্তানেরা চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে তাদের জমায়েত করে এক করবার জন্যও তিনি মরবেন” (ইউহোন্না ১১ : ৫০–৫২)। “আসলে মাবুদ তাঁর ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে চুরমার করেছিলেন আর তাঁকে কষ্ট ভোগ করিয়েছিলেন। মাবুদের গোলাম যখন তাঁর প্রাণকে দোষের কোরবানী হিসাবে দেবেন তখন তিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে পাবেন আর তাঁর আয়ু বাড়ানো হবে; তাঁর দ্বারাই মাবুদের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তিনি তাঁর কষ্টভোগের ফল দেখে তৃপ্ত হবেন; মাবুদ বলছেন, আমার ন্যায়বান গোলামকে গভীরভাবে জানবার মধ্য দিয়ে অনেককে ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হবে, কারণ তিনি তাদের সব অন্যায় বহন করবেন” (ইশাইয়া ৫৩: ১০–১১)। “কিন্তু মসীহ ঈসা মানুষকে গুনাহের হাত থেকে মুক্ত করবার ব্যবস্থা করেছেন এবং সেই মুক্তির মধ্য দিয়েই রহমতের দান হিসাবে ঈমানদারদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হয়। আল্লাহ প্রকাশ করেছিলেন যে, যারা ঈমান আনে তাদের জন্য ইসা মসীহ তাঁর রক্তের দ্বারা, অর্থাৎ তাঁর জীবন–কোরবানীর দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করেছেন। এভাবেই আল্লাহ দেখিয়েছেন, যদিও তিনি তাঁর সহ্যগুণের জন্য মানুষের আগেকার গুনাহের শাস্তি দেন নি তবুও তিনি ন্যায়বান। তিনি যে ন্যায়বান তা তিনি এখন দেখিয়েছেন যেন প্রমাণ হয় যে, তিনি নিজে ন্যায়বান এবং যে কেউ ঈসার উপর ঈমান আনে তাকেও তিনি ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন” (রোমীয় ৩ : ২৪–২৬)।