চট্টগ্রামে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চসিক ও সরকারি হাসপাতালে ভিড় করছে। চসিক কুকুরের কামড়ানো রোগীদের নামেমাত্র মূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করতেন। কিন্তু গত প্রায় এক বছর যাবত কুকুরের ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ। আর্থিকসংকটের কারণে ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রতিদিন রোগীরা এসে ফেরত যাচ্ছে। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। নগরীতে বেওয়ারিশ রোগী বেশি থাকায় আক্রান্ত রোগীও বেশি দেখা যায়। চসিক গত সাত/আট বছর যাবত কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের ভ্যাকসিন প্রদান করছে। এজন্য প্রতি ডোজের জন্য ৫০ টাকা আদায় করা হতো। একজন রোগীকে পাঁচ ডোজ ভ্যাকসিন দিতে হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুপারিশ করা রোগীদের চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ ভ্যাকসিন প্রদান করতেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে চসিক ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতেন। বছরে প্রায় ৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হতো। চসিক ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ রেখেছে তা অনেকেই জানে না। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য কুকুরে কামড়ানো রোগী এসে ফেরত যাচ্ছে।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, গত প্রায় এক বছর যাবত কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আমরা আগে বেসরকারি কোম্পানি থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে রোগীদের প্রদান করতাম। এখন আর্থিকসংকটের কারণে ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বন্ধ রাখা হয়েছে।’
জানা যায়, কুকুর, বিড়াল, ইঁদুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত র্যাবিস ভ্যাকসিন দিতে হয়। দুই ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হয়। একটি ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে। এটি একজন রোগীকে তিন ডোজ আর যেটি মাংসের ভেতর দিতে হয় সেটি চার ডোজ। এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা করে কিনতে হয়। এতে দরিদ্র মানুষের পক্ষে তিন/চার ডোজ ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব হয় না। কুকুরের কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে রোগীদের র্যাবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি র্যাবিস ইমোনোগ্লোবিন (র্যাবিস আইজি) প্রদান করতে হয়। সরকারি হাসপাতালে র্যাবিস ভ্যাকসিন সরবরাহ থাকলেও র্যাবিস আইজি সরবরাহ নেই। প্রতিটি র্যাবিস আইজির দাম প্রায় ৮০০ টাকা। এতে রোগীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ফৌজদারহাট সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এখানে ২০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। বর্তমানে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত সাত জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আক্রান্ত কম হলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সারা বছরই এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের আউট ডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চালু রয়েছে। র্যাবিস ভ্যাকসিন ও র্যাবিক্স আইজি সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে। এখন রোগীর চাপ একটি বেশি।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। জুলাই মাসে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ৪৪৩ জন ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত ৭৪৩ জন এবং আগস্ট মাসে ৩৪৪ জন কুকুরের কামড়ে ও ৫৫২ জন অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। তবে এখানে র্যাবিস ভ্যাকসিন সরবরাহ থাকলেও র্যাবিক্স আইজি সরবরাহ নেই।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, র্যাবিস ভ্যাকসিন সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে এই মুহূর্তে র্যাবিক্স আইজির সরবরাহ নেই। রোগীর শরীরের ওজনভেদে এই ইনজেকশন দিতে হয়।’