চট্টগ্রামে অরক্ষিত নালায় পড়ে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এবার খোলা নালায় পড়ে মারা গেছে এক শিশু। গত রবিবার নগরীর হালিশহর থানার রঙ্গীপাড়া এলাকায় ইয়াসিন আরাফাত নামে দেড় বছর বয়সী এক শিশু নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে বাসার সামনের নালা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এ নিয়ে চলতি বছর নালায় পড়ে দুই শিশু ও এক ছাত্রীসহ তিন জনের মৃত্যু হলো চট্টগ্রামে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল সদরঘাটের নালাপাড়া এলাকায় তিন বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায় নালায় পড়ে। এরপর গত ৭ আগস্ট নীপা পালিত নামে হাটহাজারী কলেজের এক শিক্ষার্থী নালায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে, নগরীর জলাবদ্ধতার দায় এড়াতে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন পরস্পরকে দোষী করার প্রবণতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ কারণে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ দায় সিডিএর ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু সিডিএ বলছে, চলমান প্রকল্পটি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আর তাছাড়া নগরীতে মোট নালা ও খালের পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার যার মধ্যে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার পড়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায়। বাকি ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সিডিএ বলছে, চসিক সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে না বলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না।
এদিকে,
জলাবদ্ধতা প্রকল্পের
মেয়াদ বাড়ানোর
জন্য সিডিএর
একটি প্রস্তাবনা
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো
হয়েছে বলে
জানা গেছে।
গত কয়েক
বছরের ধারাবাহিকতায়
এ বছরও
মাঝারি বৃষ্টিতেই
নগরীর রাস্তাঘাট
তলিয়ে যেতে
দেখা গেছে।
চলতি আগস্ট
মাসেই দুই
দফা নগরীতে
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি
হয়েছে। জলাবদ্ধতার
সময় রাস্তাগুলো
মরণফাঁদে পরিণত
হয়। নগরীর
অনেক রাস্তার
পাশেই অরক্ষিত
খাল এবং
নালা রয়েছে।
বৃষ্টির সময়
খাল ও
নালার সঙ্গে
রাস্তা একাকার
হয়ে ভয়ঙ্কর
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
সৃষ্টি হয়।
এছাড়া অনেক
জায়গায় ফুটপাতে
ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল
আছে যেখানে
অসাবধানতাবশত পড়ে
গিয়ে প্রায়ই
হতাহতের ঘটনা
ঘটছে। নালায়
পড়ার ঝুঁকি
নিয়েই এসব
এলাকায় চলাচল
করেন পথচারীরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকাকালেই গত সাত বছরে অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ চার জন মারা যায়। ঐ বছর ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে খালে পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর এলাকায় চশমাখালে পড়ে মারা যায় কামাল উদ্দিন নামে এক শিশু। নিখোঁজের তিন দিন পর তার লাশ উদ্ধার হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ মোড়ে নালায় পড়ে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া মারা যান। ৩০ জুন ষোলশহরের চশমাখালে পড়ে তিন অটোরিকশা আরোহী নিখোঁজ হন। পরে চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ বছরও নালায় পড়ে এ পর্যন্ত তিন জন মারা গেছে চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ দায় কোনোটা সড়ক এবং কোনোটা খাল–নালা তা আলাদাভাবে বোঝা যায় না। যে কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নগরীর প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউর ষোলশহর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বিশাল এলাকা জুড়ে অরক্ষিত খাল রয়েছে। এছাড়া নগরীর মেহেদিবাগ সড়ক, শেখ মুজিব সড়কসহ অনেক সড়কের পাশেই খোলা নালা রয়েছে যেগুলোতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে মোট ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার নালা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় আরও ১০০ কিলোমিটার নালা করার কথা রয়েছে। বাকি ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার নালা তদারকির দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্বে থাকা নালার আবর্জনা ঠিকমতো পরিষ্কার করে না। যে কারণে বৃষ্টির সময় দ্রুত পানি সরতে না পারায় নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, নগরীর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নালার দায়িত্বে রয়েছে সিডিএ। এর বাইরে যেসব নালা রয়েছে সেগুলো জলাবদ্ধতায় খুব একটা প্রভাব ফেলে না। তবু সিটি করপোরেশন সেগুলো নিয়মিত সংস্কার করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত, খাল ও নালার ওপরে জরিপ করে ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হালিশহরে সর্বশেষ একটি শিশু নালায় পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের কোনো দায় নেই দাবি করে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ঐ পরিবারটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নালার পাশে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাসা তৈরি করেছিল।