সত্যের পক্ষে বার বার সাক্ষ্য দিতে আপত্তি জাগে না; সত্য ঘটনা বর্ণনা দিতেও জিভ আড়ষ্ট হবার কথা নয়।
মানুষ খোদার প্রতিনিধি যা হলো তার জন্মাধিকার! খোদার মুখ থেকেই শোনা যাক, “পরে মাবুদ আল্লাহ মাটি দিয়ে একটি পুরুষ মানুষ তৈরি করলেন এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার ভিতরে জীবন বায়ু ঢুকিয়ে দিলেন তাতে সেই মানুষ একটি জীবন্ত প্রাণী হল (পয়দায়েশ ২ : ২)।
মানুষের বর্ণনা দেখতে পাই খোদার মনের পরিকল্পনা শুনে, যেথা তিনি প্রকাশ করেছেন, “আমরা আমাদরে মত করে এবং আমাদের সাথে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরি করি। তারা সমুদ্রের মাাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে হাটা প্রাণী এবং সমস্ত দূনিয়ার উপর রাজত্ব করুন (পয়দায়েশ ১ : ২৬)” অত্র আয়াতে মানুষের উপর দত্ত অর্পীত ক্ষমতা দেখানো হয়েছে। পরে আল্লাহ তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, “ পরে আল্লাহ তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে” (পয়দায়েশ ১ : ২৭)।
একটি প্রশ্ন রাখি আপনাদের কাছে; আপনার বন্ধুর বন্ধু আপনার কি হবে? আর আপনার বন্ধুর শত্রু আপনার কি হবে? পুনরায় আপনার শত্রুর বন্ধু আপনার কি হবে, আবার আপনার শত্রুর শত্রু আপনার কি হবে?
পরম করুণাময় আল্লাহপাকের শত্রু কিভাবে হতে পারে আপনার বন্ধু? আমার বোধে তা ধরে না। খোদার চিরস্থায়ী দুষমন হলো অভিশপ্ত ইবলিস যে কিনা সদা ব্যস্ত থাকে খোদার সুমহান পরিকল্পনা লন্ডভন্ড করে দিতে; যেমন বিগত ১৯৭১ সনে পাকহানাদার বাহিনী চির সবুজ সোনার বাংলার বুকে আগুন জ্বালিয়ে ছাড়খার করে গেল; দেশ জনতাকে কচুকাঁটা করে বিরান করতে চাইল। আমাদের কলজের মধ্যে যে কাঁচা ঘা সৃষ্টি করে গেল তাতে আমরা বুঝতে পারি, যারাই হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নগর জনপদ কচুকাটা করে আসছে এবং বর্তমানেও তেমন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে ঘোষণা দিচ্ছে স্বাধীনতা বা ধার্মিকতার নিশানা, তারা আসলেই মানুষ ও খোদার চিরস্থায়ী দুষমন। বৃক্ষ তো পরিচিত হয়ে থাকে ওর ফলের দ্বারা। আমরা আমাদের প্রকৃত অবস্থান জানতে পারব আমাদের অতীতের ক্রিয়া কলাপের মাধ্যমে। বিউটি পার্লার থেকে সেজেগুজে এসে ফটো সেশনে ছবি তুললে মনোহরী তো মনেই হবে; তবে তা কতক্ষণ যে থাকবে সেটাই হলো ভাবনার বিষয়। আদম থেকে শুরু করে আজকের আমি পর্যন্ত যা কিছু করে চলছি তার সবটুকুই হলো আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র। প্রকৃত আমি হলাম এমন এক পাত্র যার মধ্যে খুঁজে পাবেন রাজ্যের যাবতীয় অজাচার অনাচার পাপ কালিমা যা আমাকে জীর্ণ পাতার মত উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাতাসের খেয়াল খুশি মত (ইশাইয়অ ৬৪ : ৬)।
কোনো মানুষ নিজে নিজেকে স্নাতশুভ্র করার ক্ষমতা আদৌ রাখে না। দিনরাত আপনার ওজন যতবারই মাপুন না কেন তাতে কি আপনার ওভারওয়েট কমাতে পারবেন। ডাক্তারের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রেসক্রিপশন হয়ত আপনার মুখস্ত হয়ে গেছে, এমন কি ডায়াগনোষ্টিক রিপোর্ট হয়ে আছে ঠোটস্ত, তারপরেও আপনি মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত! ভিন্নভাবে বলা চলে, শরীয়তের দশটি ধাপ রয়েছে আপনার জানা, তারপরেও ঘুষ–দূর্নীতিতে আপনার জুড়ি দুটো পাওয়া মুস্কিল। বলুন জানা ও মানার মধ্যে কতোটা পার্থক্য রয়েছে? ভ্রান্ত: বিশে^র সবকটি লোক চরমভাবে পরাভুত আর তা খোদ ইবলিসের কবলে; যে কারণে মানুষের রক্ত ঝর্ণাধারার মত ক্ষরিত হচ্ছে বিশ্বেব্যাপী। মানুষ ভুলে যায় অতীতকে, তা বেশ ভাল কথা, তবে অতীতের অপকর্ম বর্তমানেও যদি স্বাচ্ছন্দে চালাতে থাকে, তেমন ক্ষেত্রে বলতে হবে, বিধি বিধান জানা স্বত্ত্বেও যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল। বর্তমান বিশ্বটা খুন ধর্ষনের দিক দিয়ে সেই কাবিলের চরিত্রেই কর্মময়।
মহাজ্ঞানী পরম করুণার পারাবার খোদা স্বীয় সুরতে মাত্র একজন মানুষ তৈরি করলেন, যার উপর প্রীত হয়ে তার হাতে তুলে দিলেন জগত–সংসারের দায়–দায়িত্ব। তাঁর মনোবাসনা হলো , মানুষ সবকিছু পরিপাটি করে রাখবে এবং নিজেরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে খোদার গৌরব বর্ধন করবে। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা এই প্রথম মানুষ আদম থেকেই তারা হলো প্রতারিত; খোদার দুষমন অভিশপ্ত ইবলিসের দ্বারা। মানুষের ডালে নেমে এলো চরম অভিঘাত। হলো গোটা বিশ্ব কুপোকাত, চিরতরে কবলিত ইবলিসের রাহুগ্রাসে। কথাটা যদি মেনে নিতে আপত্তি থাকে তবে অনুরোধ থাকবে, আদম বংশে মাত্র একটি লোক খুঁজে বের করুন যে কিনা রয়েছে সম্পূর্ণ নিখুঁত। সকলেই পাপ করেছে, খোদার গৌরব হারিয়ে বসেছে। মানুষ নিজের কাছে নিজেই আজ চরমভাবে ধরা খাওয়া নিদারুন অসহায়। বলেছি পার্লারের দ্বারা সাজুগুজু ক্ষাণিক্ষণ থাকে, প্রাকৃতিক ডাকে ছুটাছুটি করার পরে অবস্থা হয়ে দাড়ায় বেগতিক। মানুষ কেবল স্নাতশুভ্র হয় বাহিরের দিকে, কিন্তু ভিতরের দিকটা যেমন ছিল তেমনই থাকতে বাধ্য। এত গেলো ভৌতিক বর্জের বিষয়। কিন্তু মন ও হৃদয়ের কালিমা দূর করবেন কেমন করে। সুতরাং মানুষকে যেভাবে সাদা ধবধবে কবরেরর সাথে তুলনা করা হয়েছে তা যথার্থ।
মানুষ মানুষকে দোষারোপ করার জন্য বলে বেড়ায়, তার চোখ নষ্ট, কথাটার অর্থ হলো মাংসিক কামনায় সে পরিপূর্ণ যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কথাটা যদি সঠিকভাবে বলতে হয় তবে এভাবে বলতে হবে, হৃদয় ও মন লোভাতুরা হয়ে পড়েছে, তাই ভিতরের লুপ্ত মন্দতা চোখ দিয়ে প্রকাাশ হয়ে পড়ে। চোখ নষ্ট হয় ছানি পড়লে। আবার সারাক্ষণ কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকাতেও চোখ বা দৃষ্টি শক্তি লোপ পেতে থাকে।
মানুষের মন নষ্ট হয়ে আছে অভিশপ্ত ইবলিসের কুটচালে। সে খোদার প্রতিজ্ঞায় আর আস্থা রাখতে পারছে না, ন্যায়–অন্যায়, ডানহাত–বামহাত ব্যবহার করে ফিরছে ক্ষণস্থায়ী রুজী–রুটির তাগিদে। অবশ্য খোদাকে হাজির নাজির দেখতে না পাবার কারণে মানুষের এমন দুর্গতি ঘটেছে।
মানুষের নির্মাতা ক্লান্ত হয়ে পড়েন নি। তিনি স্বীয় নয়নের মণি রক্ষা করার জন্য এক অভিন্ন অনুপম ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। অনেকেই তেমন ব্যবস্থার বিষয়ে রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আমরা আকাশ দেখি; আাসলে কি আকাশ বলতে কিছু আছে? যা কিছু দেখি তা তো দৃষ্টি সীমার সমাপ্তি মাত্র। যাকে আকাশ বলে চালিয়ে দেয়া হয়, তার বাস্তবতা কিছু যদি থাকত তবে চন্দ্রাভিযানে রকেট কি যেতে পারত বলুন! প্রকৃতার্থে মানুষ নিজের অক্ষমতা নিজে জানে, তবে তা জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়–ক তা করোরেই ভালো লাগতে পারে না। সকলেই কেতাদুরস্ত থেকে সম্মান কুড়িয়ে ফেরে।
সর্বশক্তিমান খোদা আমাদের অত্যন্ত মহব্বত করেন বিধায় আজ পর্যন্ত আমরা বেঁচে আছি। আমরা ইবলিসের হাতে নিঃশেষিত হয়ে যাই তা তিনি চাইতে পারেন না এবং তেমন কিছু ঘটতে দিতে পারেন না। প্রেমের তাগিদে তিনি স্বীয় কালাম ও পাকরূহ মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন মানব শিশুরূপে। খোদা তাঁকে মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধ করার জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করলেন। কথায় বলে লোভে পাপ আর পাপের বেতন মৃত্যু। গোটা বিশে^র গুনাহের বোঝা স্বীয় কাধে নিয়ে তিনি সলীবে হলেন কোরবানি হলেন কবরে সায়িত। অবশ্য তৃতীয় দিবসে তিনি হলেন পুনরুত্থিত এবং পাকরূহের মাধ্যমে আজ গোটা বিশ্ব–চরাচর সত্য সুন্দরের পথে করে চলছেন পরিচালনা।
আপনার আমার জন্মের বহুপূর্বে যে সত্য ঘটনা ঘটে গেছে তা কোন যুক্তিতে আজ আমরা অস্বীকার করব বলুন? তবে অভিশপ্ত ইবলিস আজ পর্যন্ত আমাদের সাথে প্রতারনা করে চলছে। ইবলিস চেনার উপায় অতি পরিষ্কার। প্রথম থেকে সে খুনি। কাবিলকে উত্তেজিত করেছিল ভ্রাতা খুন করার জন্য। তাই কাবিলের মত খুনি সম্প্রদায় অবশ্যই ইবলিসাশ্রিত। যে কথা প্রত্যয়ের সাথে বলতে হবে। খোদা পরম করুনাময় রাহমানের রাহীম। আপনার আমার কলুষতা দিয়ে তাকে কলুষিত করার ধৃষ্টতা তিনি মেনে নিবেন না। বরং তিনি বলেছেন আমি পবিত্র বলে তোমরাও পবিত্র হও (লেবিয় ১১ : ৪৪)।