চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শতবর্ষী গোদার পুকুর প্রায় ভরাটের পথে। শতাধিকের বেশি ট্রাকে করে ফসলি জমির মাটি এনে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে মার্কেট নির্মাণের জন্য।
আইন লঙ্ঘন করে দিনদুপুরে ভরাটের কর্মযজ্ঞ চললেও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়, পৌর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন ‘চুপচাপ’। অথচ জেলা প্রশাসকের স্পষ্ট নির্দেশনা পুকুর ফসলি জমি ভরাট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী মহলের মধ্যস্থতায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের জন্য নেমেছে একটি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, শতবর্ষী গোদার পুকুরটি সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার ও বাজার মসজিদের মুসল্লিরা ব্যবহার করে আসছেন। আশেপাশে রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক, বিশাল বিশাল মার্কেট, স্কুল–কলেজসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। অগ্নিকাণ্ডে পানির অন্যতম উৎস হতে পারে এটি তবে বছর পাঁচেক ধরে পুকুরটিতে কচুরিপানা জমিয়ে মার্কেটের ময়লা ফেলে কৌশলে ব্যবহার অনুপযোগী করে মালিকপক্ষের একটি অংশ। তখন থেকেই পুকুরটি ভরাট করে তাদের মার্কেট নির্মাণের স্বপ্ন। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও অর্থদাতারা সরে যাওয়ায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এবার বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গত ১২ এপ্রিল পুকুরটি ভরাটের কার্যক্রম শুরু করে চক্রটি। শুরুতে অর্ধশত ট্রাক মাটি ফেলে পুকুরের উত্তরাংশ ভরাট করা হয়। সেসময় দৈনিক পূর্বকোণসহ স্থানীয়, জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে পুকুরটি ভরাটে জড়িতদের নিষেধের কথা জানানো হলেও রহস্যজনকভাবে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
এর পর প্রশাসনের রহস্যজনক এ নীরবতায় ১৯ জুন রাত ৮টা থেকে আবারো তিন শতাধিকের অধিক ট্রাক নিয়ে একযোগে মাটি ফেলে পুকুরটি ভরাটযজ্ঞ সফল করে। সে সময়ও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে লোক পাঠানোর কথা বারবার বললেও আদতে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
যদিও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী বলছেন, ঈদের পর পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজ করার কিছুই নেই। চার আনা পয়সা দিয়ে যদি কেউ ম্যানেজ করতে পারে, তার প্রমাণ যদি দিতে পারে আমি নিজেই এখান থেকে চলে যাব। এ ধরনের অভিযোগ আমার জন্য বিব্রতকর। পুনঃখননের নির্দেশনা পেলে পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ–জোহরাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, অভিযোগ পেয়ে একজন পরিদর্শককে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেছেন, অনেকটা সুস্থতার পথে, দেখা যাক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। ভরাট করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিজ খরচে পুনঃখনন করে দিতে হবে।