ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। তাই এখন থেকে ওই চুক্তির নবায়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আগের চুক্তিতে পানি ভাগাভাগির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে কতটুকু পানি পেলাম, তার চেয়ে পানির যথার্থ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পিএইচডি অভিসন্দর্ভের ভিত্তিতে লেখা বই নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ‘শেয়ারিং’ গঙ্গাস ওয়াটার: ইন্দো–বাংলাদেশ ট্রিটিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. (ইউপিএল)। রাজধানীর গ্রিন রোডে প্রকাশনা সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল সোমবার আয়োজিত আলোচনা সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় নদী ও আইনবিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন।
বক্তারা বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ওই বইটিতে করা সুপারিশ আমলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নদীর ওপরে মানুষের অধিকারের পাশাপাশি মৎস্য, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর অর্থাৎ জীববৈচিত্র্যের অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। এ জন্য শুধু সেচের পানি ও বছরে গড়ে কী পরিমাণে পানি বাংলাদেশ পেল, তার চেয়ে যে সময়ে, যে পরিমাণে পানি দরকার, তার ওপরে গুরুত্ব দিয়ে চুক্তি নবায়নের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বইটিতে যথার্থভাবেই গঙ্গার মতো অভিন্ন নদীগুলোর ক্ষেত্রে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনাকে সুপারিশ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক বছর বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে তেমন আলোচনা শুরু হয়নি।
চুক্তিটি নবায়নের ক্ষেত্রে এই বইতে থাকা সুপারিশগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আইনুন নিশাত বলেন, শুধু আমলা ও কূটনীতিকদের দিয়ে এ ধরনের সমঝোতার আলোচনা করা ঠিক না। এ জন্য আসিফ নজরুলের মতো নদী আইনবিশেষজ্ঞ ও নদীর পানি এবং জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার পিএইচডি গবেষণা করার সময় শুধু শুনতাম ভারত উজান থেকে সব পানি নিয়ে নিচ্ছে। তাই আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদেরা সব সময়ে বলে এসেছেন উত্তর প্রদেশে পানি আটকে দেওয়া হয়। ফলে পশ্চিমবঙ্গ তার পানি পায় না। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাত বছরে লোকসভায় গঙ্গার পানি নিয়ে বিতর্ক, পাকিস্তানের সংসদে বিতর্কগুলো আমাকে পড়তে হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, গঙ্গার পানির ওপরে শুধু মানুষের না, সব প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ আন্তর্জাতিক নদী আইনে স্বাক্ষর করেনি। গঙ্গা চুক্তির মধ্যে ওই আইনের কোনো ছাপ নেই। গঙ্গা চুক্তির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আসিফ নজরুলের সুপারিশ আমলে নিতে হবে। তা আন্তর্জাতিক নদী আইনের আলোকে করতে হবে।
সাংবাদিক শেখ রোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।