সৃজনশীল অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং তদসংলগ্ন প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ফাহিম এর একটি পোষা কুকুর আছে। কুকুরটি সব সময় ফাহিম এর আশেপাশে থাকে।
বাড়ির অন্যরা যতœ না নিলেও ফাহিম ওর যতেœর ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকে।
পোষা কুকুরটিকে ফাহিম আপন করে নিয়েছে। সে খেলতে মাঠে গেলে বা স্কুলে যাওয়ার
সময কুকুরটা তাকে খানিকটা পথ এগিয়ে দেয়।
ক. বেরিবেরি রোগীরা গরম কালে মোজা পরত কেন?
খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুয়েক দেরি করল কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ ও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রে তুচ্ছ
জীবের অনুভূতিই প্রাধান্য পেয়েছেÑ মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. বেরিবেরি রোগীরা কৌতুহলী লোক চক্ষু থেকে তাদের বিকৃতিটা আড়াল করার জন্য গরমকালেও মোজা পরতো।
খ. অতিথি কুকুরটিকে ছেড়ে যেতে মন খারাপ লাগার কারণে দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে লেখক দুইদিন দেরি করলেন।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে আসেন। বিকেলে
বেড়াতে বের হতেন একা একা। একদিন বাড়ি ফিরতে তার সন্ধ্যা হয়ে যায়। তিনি
লক্ষ্য করলেন পথের একটি কুকুর তার সঙ্গী হয়। তার পরদিন থেকে প্রতিদিন
কুকুরটি বাড়ির গেইটের সামনে লেখকের জন্য অপেক্ষা করে। লেখক অসুস্থ হয়ে
বিছানায় পড়ে থাকার সময় কুকুরটি বাড়িতে ঢুকে লেখককে দেখতে আসে। লেখকের সাথে
তার কথোপকথন চলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
কুকুরটির সাথে এভাবে লেখকের অকৃত্রিম মমত্ববোধ জেগে ওঠে। ফলে দেওঘর থেকে
বিদায় নেওয়ার সময় হলে কুকুরটির জন্য লেখকের খারাপ লাগে। তাই লেখক নানা
অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন।
গ. কুকুরের অবস্থাগত দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’- গল্পে লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য
দেওঘরে বেড়াতে আসেন। বিকেল বেলা হাঁটতে বের হলে তার সঙ্গী হয় একটি কুকুর।
পথের কুকুর হলেও তার প্রতি লেখকের ভালবাসা সে টের পায়। তাই সে লেখকের সঙ্গে
থাকে। বাড়ির ভেতর ঢুকে না। লেখক তাকে নিমন্ত্রণ জানায়। চাকরদের বলে দেয়
কুকুরটিকে খেতে দেবার জন্য। কিন্তু কুকুর আসে না।
পর দিন লেখকের বাইরে যাবার অপেক্ষায় সে গেইটর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে,
লেখকের সাথে দেখা হলে লেখক তার সাথে কথা বলে, উল্টো কুকুরটির কখনো লেজ
নাড়ায় কখনো ঘন ঘন লেজ নাড়িয়ে লেখকের কথার উত্তর দেয়। এভাবে রাস্তার কুকুরের
সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’- গল্পের লেখকের একটি মমত্ববোধের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
লেখক তুচ্ছ জীবের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে উদ্দীপকে ফাহিম এর কুকুরটি ছিল পোষা। পোষা কুকুরটিকে সে আপন করে
নেয়। বিভিন্নভাবে যতœ করে। কুকুরটিও ফাহিমের আশেপাশে থাকে। পোষা প্রাণীর
সান্নিধ্যে থেকে ফাহিম আনন্দ লাভ করে।
‘অতিথির স্মৃতি’- গল্পের কুকুরটি ছিল পথের সাধারণ কুকুর ও মানবেতর প্রাণী।
কিন্তু ফাহিমের কুকুরটি ছিল যতেœ গড়ে তোলা পোষা প্রাণী এই দিক থেকে উভয়ের
মধ্যে বৈসাদৃশ্য প্রকাশ পায়।
ঘ. অতিথির স্মৃতি ও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রে তুচ্ছ জীবের অনুভূতি প্রাধান্য পেয়েছে মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের সাথে মানুষের যেমন স্নেহ মায়া মমতার সম্পর্ক তৈরি হয় তেমনি প্রাণীর
সাথেও এ ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরা মানুষের ভালবাসা বুঝতে পারে এবং
প্রতিদানে ভালবাসা প্রকাশ করে।
অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখক দেওঘরে এসে রাস্তার একটি কুকুরের আচরণে অভিভূত
হন। তিনি কুকুরটির সাথে নানা গল্প করেন। কুকুরটি এমন আচরণ করে যেন সে
লেখকের সব কথা বুঝতে পারে। লেখক তাকে খাবার খেতে দাওয়াত দেয়। কিন্তু চাকররা
তাকে তাড়িয়ে দেয় । চাকরদের ভয়ে সে ঘরে ঢুকে না। লেখক বাড়ির সকলকে বলে দেয়
কুকুরকে যেন খাবার দেয়। কুকুর ঘরে আসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে থাকে। কিছুদিন
লেখক অসুস্থ থাকায় বাইরে বের হতে পারেননি তাই কুকুর দোতলায় ওঠে লেখককে
দেখতে যায়।
এভাবে কুকুরের আচরণের কারণে তার প্রতি লেখকের মমত্ববোধ জেগে ওঠে। দেওঘর
থেকে চলে যাবার সময় হলেও লেখক কুকুরের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আরো দুদিন থেকে
যান। যাবার দিন মালপত্র গোছগাছের সময় কুকুরটি মহাব্যস্ত ছিল যাতে কোন জিনিস
খোয়া না যায়। ঘর থেকে স্টেশন অবধি গাড়ির সাথে কুকুর চলল। ট্রেন ছেড়ে দিলে
কুকুরটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ট্রেনের দিকে।
অন্যদিকে ফাহিম এর পোষা কুকুরটিও তার প্রতি গভীর ভালবাসা প্রকাশ করে। সব
সময় ফাহিম এর আশেপাশে থাকে। খেলতে গেলে বা স্কুলে যাওয়ার সময় কুকুরটি তাকে
এগিয়ে দেয়।
ফাহিমও কুকুরের যত্নে সতর্ক থাকে। এভাবে একে অন্যের প্রতি ভালবাসায় সিক্ত থাকে।
অতএব বলা যায় উভয় ক্ষেত্রে তুচ্ছ জীবের অনুভূতিই প্রাধান্য পেয়েছে এবং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।