অভিবাসীদের জন্য দুয়ার খুলে দিতে হাঙ্গেরির জনগণের প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন রোম ও ভ্যাটিকান সিটির বিশপ পোপ ফ্রান্সিস। মধ্য ইউরোপের দেশটি
সফরকালে রোববার এ আহ্বান জানান তিনি। ক্যাথলিক বিশ্বের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পোপ ফ্রান্সিস, সর্বদাই তার কথাবার্তায় তুলে ধরেছেন
অভিবাসীদের প্রতি সমর্থনের কথা। তার স্পষ্ট অবস্থান- সমাজে ‘স্বাগত,
সুরক্ষিত, সমর্থিত ও একত্রিত’ করতে হবে অভিবাসীদের।
প্রধানমন্ত্রী
ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বাধীন বর্তমান হাঙ্গেরি সরকার কট্টর অভিবাসনবিরোধী
অবস্থানে। ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা দেশটিতে কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ
রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বুদাপেস্ট সফর করেন পোপ
ফ্রান্সিস। পোপের পুরো সফরজুড়ে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং শরণার্থীদের প্রসঙ্গটি
গুরুত্ব পেয়েছে। যুদ্ধ, সংঘাত বা দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের
প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবের ওপর জোর দিয়েছেন পোপ। বুদাপেস্টে খোলা আকাশের
নিচে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের সামনে বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে
উপস্থিত ছিলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
ছিল কড়া নিরাপত্তা। সেখানেই রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে
অভিবাসীদের প্রতি সবাইকে আরো উদার হওয়ার আহ্বান জানান ৮৬ বছরের এই ধর্মীয়
গুরু।
সমুদ্র পেরিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রাথমিক গন্তব্য থাকে
গ্রিস, সাইপ্রাস, ইতালি, স্পেনের মতো দেশগুলো। এই দেশগুলোকেই তাই
অভিবাসীদের বড় অংশের দায়িত্বভার নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউরোপের সব দেশকে
দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পোপ। তিনি বলেন – প্রকৃতপক্ষ এই
দায়িত্ব সবার ভাগাভাগি করে নেয়া উচিত, যাতে কোন একটি দেশ চাপে না পড়ে। সেই
দরজাগুলো আমাদের খুলতে দিন, প্লিজ। কিন্তু সেই বন্ধ দরজা দেখা দুঃখের এবং
বেদনার।
গণসমাবেশের শেষ দিকে বিপর্যস্ত ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান
নাগরিকদের জন্য প্রার্থনা করেন পোপ। তিনি বলেন, যুদ্ধ নয়, একটি সুন্দর
আগামী চাই। সমাধি নয়, চাই দোলনা। বিশ্ব হবে ভ্রাতৃত্বের, থাকবে না কোনো
বাধা, দেয়াল। রোবরাত রাতে রোমে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এসময় রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে আগ্রহ
প্রকাশ করেন। পোপের কাছে বৃহস্পতিবার এমন অনুরোধ করেছিলেন ইউক্রেনের
প্রধানমন্ত্রী ডেনিস চমিগাল। ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে
রাজি বলেও জানান পোপ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ চলমান আছে। তবে এখনও
সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এর বেশি কিছু অবশ্য বলতে রাজি হননি পোপ।
বুদাপেস্টের একটি চার্চে শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাদের
বেশিরভাগই ছিলেন ইউক্রেন থেকে যাওয়া।
মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায়
রাখার ক্ষেত্রে ভিক্টর অরবানের জেদের কারণে হাঙ্গেরিতে আশ্রিত ইউক্রেনীয়রা
বিচ্ছিন্ন বলে অভিযোগ রয়েছে। অরবান রোববার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, আমাদের
শান্তি প্রয়োজন, দোলনায় পূর্ণ একটি পৃথিবী প্রয়োজন, কবর নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ
শেষ করতে শান্তি আলোচনারও আহ্বান জানিয়েছেন হাঙ্গেরির এই শীর্ষ নেতা। পোপ
তার হাঙ্গেরির সফরের সর্বশেষ বক্তব্যটি রাখেন বুদাপেস্টের একটি ক্যাথলিক
চার্চে। হাঙ্গেরিতে এটি ছিল তার দ্বিতীয় সফর।
এর আগে ২০২১ সালে অল্প
সময়ের জন্য দেশটিতে এসেছিলেন তিনি। প্রথম পোপ হিসেবে হাঙ্গেরি সফর করেন জন
পল দ্বিতীয়। প্রথম সফরটি ছিল ১৯৯১ সালে এবং দ্বিতীয়বার সফর করেন ১৯৯৬
সালে। ওইসময় হাঙ্গেরির মোট জনসংখ্যার ৩৯ ভাগ ছিলেন ক্যাথলিক অনুসারী। এভাবে
ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে যাওয়া অভিবাসীদের বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলোকে আরো মানবিক
হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানিয়ে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস।