কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মানুষ।
খালি পায়ে বুকে কালো ব্যাজ আর হাতে ফুল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছে
তারা।
শহীদ
দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে মঙ্গলবার (২১
ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। পরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনারের বেদি। এরপর শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। এ
ছাড়া দেশের সব জেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিবসটি।
স্কাউট
সদস্যরা, বিএনসিসির সদস্যরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের
এগিয়ে চলতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
কয়েক স্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলছে শ্রদ্ধা নিবেদন। হাজারও মানুষের
মধ্যে বাদ পড়েনি শিশু-বৃদ্ধরাও।
দ্বিজাতিতত্ত্বের
ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের
শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের বিরুদ্ধে করা নানা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বাঙালির প্রাণের
মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষা করে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। এরপরই
শুরু হয় ভাষার জন্য আন্দোলন। যার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১
ফেব্রুয়ারি।
সেদিন
ঢাকায় শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করেন দেশের
ছাত্র-জনতা। তাদের ওপর গুলি চালায় পাকিস্তানের পুলিশ। গুলিতে সালাম, বরকত,
রফিক, সফিউর, জব্বারসহ অনেক বীর সন্তান প্রাণ হারান। এরপর ১৯৫৬ সালে অন্যতম
রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
একুশে
ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ
শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি
গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের
নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে, জাতীয়
সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের চিফ হুইফ
নূর-ই আলম চৌধুরী প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা
নিবেদন করেন মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং এরপর উত্তর সিটি
করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির
নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
জানান।
এরপর
শহীদ বেদীতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর
অ্যাটর্নি জেনারেল, আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক, ভাষা
সৈনিকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ, বিদেশি সংস্থার
প্রধানগণ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। সেক্টর কমান্ডাররা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা একুশের
প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যায়ক্রমে
তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক
কর্মকর্তারা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ
কংগ্রেস, জাতীয় প্রেসক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা
প্রকৌশলী সমিতি, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড,
প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনসহ
বেশ কয়েকটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে ফুল দিতে দেখা যায়।
এদিকে,
দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পালিত হচ্ছে মহান শহীদ
দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক,
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেও পালন করছে
দিবসটি। রেখেছে নানা কর্মসূচি।