গতকাল রোববার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে গুলশান–২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১৪ তলা ভবনের ১১ তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে নেভানোর কাজ শুরু করে। পাশাপাশি ভবন থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনতে থাকে তারা।
রাজধানীর গুলশান–২ নম্বরের একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত রাত দুইটা পর্যন্ত এতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও অন্তত চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভানোর চেষ্টার মধ্যেই আগুন ভবনের ১২ তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আরও ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। মোট ১৯টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দিয়ে ভবনের বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও সেখানে কাজ করে। সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশ নেন। আগুন লাগার পর ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মাহিন বিশ্বাসসহ কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা সাতটার পর হঠাৎ করে ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ভবনের বাসিন্দারা চিৎকার করতে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসার পরেও ভবন থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এর মধ্যেই আতঙ্কিত হয়ে সাততলা থেকে কয়েকজন লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুনের তীব্রতা বাড়লে ভবনের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ১১ ও ১২তলায় আগুন জ্বলছে। সে সময় ১১তলার বারান্দায় একদল লোক অবস্থান নিয়ে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন। এ সময় ঘটনাস্থলে রেশমী খাতুন নামের এক নারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বেশ কয়েকজন স্বজন ভবনের ১১তলায় আটকা পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। তাঁদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন তিনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ওই শিশুসহ অন্যদের বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী, মডেল নোবেলসহ আশপাশের অনেক বাসিন্দা। মাহী বি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কয়েকজন আত্মীয় ওই ভবনে আটকা পড়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিস তাঁদের উদ্ধার করেছেন।
আগুনের খবর শুনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, আগুন লাগার পর ভবন থেকে কয়েকজন লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। তাঁদের আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের অন্তত দুজন বাসিন্দা লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে মোহন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি অন্তত পাঁচজনকে লাফিয়ে পড়ে আহত হতে দেখেছেন।
রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে মৃত একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মৃত ওই ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম–পরিচয় জানা যায়নি। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।
গুরুতর আহত একজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাম সামা রহমান সিনহা। তিনি জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী। স্বজনেরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর সামা রহমান সাততলা থেকে বাসার সামনের সুইমিং পুলে লাফিয়ে পড়েন। ভবনের ১২তলায় তাঁদের বাসা। বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, সামা রহমান অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।