বিশ্বটি গোলাকার, চন্দ্র-সূর্য, তাও গোলাকার এবং আছে নিয়ত আবর্তমান অবস্থায়। আমরা মানুষ, নিয়ত ছুটাছুটি করে চলছি, তা আমাদের অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট কেন্দ্র আছে, আর উক্ত কেন্দ্রটিকে প্রাধান্য দিয়ে চলে আমাদের আবর্ত। বলতে পারেন একটি লাটিম, যেটি পাক খেতে থাকে, তা মুল কেন্দ্রীয় দন্ডটিকে ঠিক রেখে চলতে থাকে নাটাইয়ের ঘূর্ণাবর্ত। আমরা নিজ নিজ কাজে কর্মস্থলে সকালে বেরিয়ে পড়ি, গোটা দিন নানা স্থানে বিচরণ করে সাঁঝ বেলা আবার ফিরে আসি নিজ নিজ গৃহে, আর এ হলো আমাদের কেন্দ্রাভিমুখি অভিযাত্রা। এমনি করেই একদিন আমাদের যাত্রার পালা ফুরিয়ে যাবে, ফিরে যেতে হবে ঠিক সেই স্থানে, যেস্থান থেকে মানবজাতি হয়েছিল স্খলিত।
জীবনে অনেকগুলো আন্দোলন আমাদের নিয়ত দোল খাওয়ায়। তবে আমরা যতোটাইনা দোল খেতে থাকি, সর্বাবস্থায় কেন্দ্রবিন্দুর আকর্ষণে ফিরে আসতে হয় কেন্দ্রাভিমুখে, কেন্দ্র ত্যাগ করার সহজ কোনো উপায় নেই আমাদের হাতে।
আমরা পৃথিবীটাকে যদি কেন্দ্রবিন্দু মনে করি তবে আমাদের প্রত্যেকটা মুভমেন্ট পৃথিবীর টানে ঘুরে ঘুরে পৃথিবীতেই ফিরে আসবো। আমাদের সকল শ্রমসাধনা পার্থিব বস্তুর স্বার্থ রক্ষার জন্যই ব্যয় হবে।
আবার আর একদিকে ঐশি বিষয়কেন্দ্রীক আমাদের ধ্যান-ধারণা কর্মকান্ড চলছে, তখন দেখা যাবে, বিশেষ চরম মুহুর্তে অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের লগ্নে কেন্দ্রীয় বিষয়টিকেই আমরা বেছে নিয়েছি। তাই বিবেচনা করতে হবে, জলকাদা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, আবার পৃথিবীটা যে একটা অস্থায়ী মঞ্চ, ক্ষণিকের জন্য অভিনয় করে যবনিকা টানতে হয় তা হয়তো ক্লাইমেক্স্যে পরাকাষ্ঠায় উন্নিত হবার সময় মনে থাকে না, জীবনের চূড়া আর পাহাড়ের চূড়া মুহুর্তের মধ্যেই পিছনে ফেলে আসতে হয়, যা বড়ই স্বাভাবিক, কেননা আমরা যে চলমান প্রাণী। যে মুহুর্তটি পিছনে ফেলে এলাম, শত সাধ্যসাধনা করা সত্তে¡ও আর তথা ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, আদম হাওয়া পিছনে ফিরে যেতে পারে নি; আমাদের ফিরে যাবার প্রশ্নই জাগে না। আমাদের গতি হলো সম্মুখপানে। পা দুটো সেভাবেই সেট করা, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। বীজের খোদা ভেদ করে চারার জন্ম, তারপর উক্ত চারাটি কলায় কলায় বৃদ্ধি পাবে, যা হলো স্বাভাবিক, চাইলেই কি আমরা এ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী হতে পারবো? প্রশ্নই জাগে না। কথায় বলে জিরো থেকে হিরো, আবার হিরো যে জিরো হয়ে যায় সে কথাটি কেউ সহজে মানতে চায় না।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো পরিবারে সদ্য জন্মপ্রাপ্ত শিশুটির কর্ণে ঘোষণা দিতে হবে, ‘তুমি এক নন্দিত আশির্বাদপুষ্ট মানব সন্তান’ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন গোটা বিশ্বের খোদ মালিক নিজের সুরতে, তা তুমি যে কোনো প্রান্তেই জন্ম নাও না কেন তাতে কোনো প্রভেদ নেই, বিশ্বের তাবৎ মানুষের সাথে তুমি একজন নতুন সদস্য, তোমার রয়েছে শতকোটি ভ্রাতাভগ্নি গোটা বিশ্বজুড়ে যারা পাবে তোমার কাছ থেকে সম্মান আর তুমিও তাদের কাছে থেকে পাবে স্নেহ ভালবাসা। তুমি তিলে তিলে বৃদ্ধি পেয়ে বয়ে আনবে সমৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠা করবে প্রকৃত শান্তি যা বাস্তবায়নকল্পে অত্যাবশ্যক হলো পারষ্পরিক সহমর্মিতা প্রেম সহানুভুতি। কোনো মানুষ স্বার্থপর হলে তেমন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না, প্রত্যেকে যখন ব্যস্ত থাকবে পরষ্পরের কল্যাণ সাধনকল্পে, ঠিক তখনই একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে ওঠবে।
আজকে নিত্যদিনের খাদ্যসামগ্রী ক্রয় বা উৎপাদন করার জন্য যে কয়টা টাকার প্রয়োজন, তা একটি মারণাস্ত্রের মুল্যের চেয়ে অতীব নগণ্য। গোটা বিশ্ব রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পিছনে যতো কোটি অর্থের অপচয় করেছে, জীবন বলি দিয়েছে এবং বর্তমানেও খন্ডযুদ্ধের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে যত অপচয় গুণতে হচ্ছে তার এক শতাংশ বোধ করি প্রয়োজন হবে বিশ্বে শান্তি সহমর্মিতা মিলন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। যুদ্ধ শুরু হয় পারস্পরিক শত্র“তার জের ধরে, আর শত্র“তা জন্ম নেয় স্বার্থেরটানে। যে বৃক্ষটি অঙ্কুরে বিনাশ করা সম্ভব তা অবহেলার কারণে কঠিন পর্যায় পৌছতে দেব। পাককালাম তো সে কথাই শিক্ষা দেয়, সূর্য ডুবিবার পূর্বেই তোমাদের রাগ ছেড়ে দাও, এ কথার অর্থ হলো, ক্রোধের বয়স অনুর্ধ্ব দশ ঘণ্টার অধিক বাড়তে দেয়া চলবে না।
প্রত্যেকটি শিশু মানব সন্তান হয়ে জন্মগ্রহন করে। নবী সে কথাই বলেছেন ‘তুমিই আমার অন্তর সৃষ্টি করেছো; মায়ের গর্ভে তুমিই আমার শরীরের অংশগুলো একসঙ্গে বুনেছ’ (জবুর ১৩৯ ঃ ১৩)।
সদ্যজাত শিশুটিকে অবশ্যই এ শুভ বারতা জ্ঞাপন করতে হবে, তাকে ক্রমেক্রমে অর্থাৎ বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলিক শিক্ষা, অর্থাৎ মানবতাবোধে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। উক্ত মানব শিশুটি যাতে মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজে পায় প্রতিষ্ঠা, তার পূর্ণ সহযোগিতা দান করতে হবে সমাজপতিদের। কেউ যেন ঘরকুণো, সমাজ ছাড়া, আত্মমুখি হয়ে না পড়ে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আর এ দায়িত্ব সর্বপ্রথম পিতা-মাতার কাধে বর্তায়। কোনো এক জনসভায় আমি বলেছি, একটি সন্তান মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠতে চাইলে তার উপর নজর রাখতে হবে তিন শ্রেণির পিতামাতার; অর্থাৎ জন্মদাতা, শিক্ষাগুরু আর কর্মস্থলে প্রশিক্ষক ও সিনিয়র সহকর্মীবৃন্দ। দেখা যাচ্ছে উক্ত শিশুটি কোনো অবস্থাতেই একাকিত্ব বোধ করার কারণ খুঁজে পাবে না। তার জন্ম যেমন মানুষের মধ্যদিয়ে হয়েছে, তদ্রুপ মানব সমাজের প্রতি রয়েছে তার প্রচুর দায়িত্ব কর্তব্য আর যথাযথ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার মধ্যেই থাকে কিছু পাবার অধিকার। তবে শিশুর ক্ষেত্রে কিছু পাবার অধিকার থাকে সর্বাগ্রে, আর দেবার মত দায়িত্ব ও কর্মক্ষমতা আসবে উক্ত শিশুটি যখন সুঠাম কর্মক্ষম প্রাজ্ঞ মানুষে হয় পরিণত। আর সেজন্য চাই মানুষ গড়ার উপযুক্ত শিক্ষা মালার প্রণয়ন।
মজার বিষয় হলো, কিতাবে কোথাও কোথাও দেখতে পাওয়া যায়, মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তির সমর্থন রয়েছে। তবে সৃষ্টির গোড়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করা হলে দেখা যাবে, মহাজ্ঞানি ধার্মিক পূতপবিত্র খোদা মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁকেই প্রচুর আশির্বাদ ও ক্ষমতা, প্রজ্ঞা-ধার্মিকতা, যুগিয়েছেন যেন নিজের মত স্বজাতি উৎপাদন করে গোটা বিশ্ব ভরে তুলতে পারে, পারে যথাযথ আবাদ করতে। বর্তমানকার স্পষ্ট দৃষ্ট জাতিভেদ আমরা অস্বীকার করতে পারি না, তবে প্রচুর গবেষণার ফলে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, কেবল ‘পাপ’ অথবা খোদাদ্রোহীতা হলো মানুষের পতনের একমাত্র কারণ। অবাধ্যতার কারণে প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া হলেন বেহেশত বা এদন কানন থেকে বিতাড়িত। তাদের সন্তান সন্তুতি হলাম আজকের আমরা, আর যারা বিগত প্রায়ত হয়েছেন, তারাও অবশ্যাম্ভাবিরূপে ঐ একই আদমের বংশধারী ছিলেন। আর ভবিষ্যতে যতো প্রজন্ম জন্মাবে, তারা একবাক্যে সকলেই গণ্য ও ঘোষিত হবে আদম সন্তান হিসেবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিক্রমের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানকার ইতিহাস লিখতে গেলে আমাকে অবশ্যই দৃশ্যমান জগতের বর্ণনা দিতে হবে, যাকে বলে সুরতহাল রিপোর্ট। যেকোনো একটি অঘটন ঘটে গেলে পর উক্ত ঘটনার বিষয়ে যা কিছু লিখতে হবে তার মধ্যে উঠে আসবে ঘটনার পরবর্তী প্রাপ্ত উপাত্ত সমূহ। আর অত্র রিপোর্টের সাথে পূর্বের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হলে বুঝা যাবে আলোচ্য বিষয়ের প্রকৃত অবস্থান। যে কোনো বংশের কেবল নাতিপুতিদের উপর ভিত্তি করে উপসংহারে পৌছানো বুদ্ধিমানে কাজ হবে না, তাদের পূর্বপুরুষ নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে, যেমন আমাদের আদি পুরষ হলেন হযরত আদম (আ.)। বর্তমানে কে কোথায় বসবাস করছি তার উপর নির্ভর করে আমাদের বংশ গণনা করা হবে সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত টানা। যেমন জমি-জমার সত্ত¡ ও অধিকার নির্ণয় করার জন্য অত্যাবশ্যক হলো পূর্বাপর দলিল রেকর্ড পর্চা ক্ষতিয়ে দেখা। আলোচ্য জমিটি পূর্বে কার হাতে ছিল, কোন সূত্রে সে মালিকানা পেয়েছিল ইত্যাদি।
মজার বিষয়, ভারত বর্ষের জমি-জমার মালিকানা মেনে নেয়া হয় বৃটিশ যুগ থেকে, অর্থাৎ যারা জোরজবরদস্তি করে এ দেশটাকে দুইশত বৎসর শাসন শোষণ করে গেছে, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অধিকারপত্র নাকি নির্ভরযোগ্য ও সার্বজনীন সমর্থযোগ্য ভিত, যাকে বলে জেনুইন অথরিটি। ‘শুনলে দাদা হাসি পায়, রাজাকারেরা ভোট চায় চায়’ এটি একটি মুখ-রোচক স্লোগানমাত্র। একইভাবে, যে মতবাদটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নরঘাতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে, আর বর্তমানেও একইভাবে নরহত্যা করে চলছে উক্ত মতবাদে মদদপুষ্ট নরখাদকের দল, তেমন মতবাদ কেউ জেনে শুনে সুবিবেচনায় শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মেনে নিতে পারে না। তবে শানিত তরবারিঘাতে নিত্য নতুন অনেক কিছুই ঘটে চলছে।
এতদসত্তে¡ও আমরা মানুষ, বিবেক বিবেচনাবোধ রয়েছে আমাদের, আর খোদা নিজেই নিজের সুরতে ও তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন। খোদার উপর আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে সমান অধিকার। তিনি পক্ষপাতিত্ত¡ দোষে দুষ্ট নন। আমরা যদিও তাঁর গর্বিত প্রতিনিধি, তবুও ইতিহাস ঐতিহ্য আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। কথায় বলে, মানিব্যাগ পড়ে আছে সুণ্যহিয়া নিয়া, আর মানি (অর্থ) হয়ে গেছে উধাও। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি ঘটেছে অভিনব এক ফন্দিতে। আজ আমরা সুণ্য মানিব্যাগের মত অধঃস্থলে পড়ে আছি।
রূপান্তরিত হয়ে পড়েছি মনুষ্যত্ব বা মানবতা শুণ্য মানুষের দলে, আর সে কারণেই গোটা বিশ্বে নিয়ত জ্বলছে জিঘাংসার দাবানল। এ প্রলয়ংকারী দাবানলে কত নগর-বন্দর-জনপদ যে ভূষ্মিভুত হয়ে পড়েছে তার খোঁজ নেবার কেউ নেই। মানবতা বিবর্জিত মানুষ যে কাজেই যাক না কেন, লাভের চেয়ে ক্ষাতির ভাগ অধিক রেখে আসে। নর্দমায় পড়ে যাওয়া শিশুটি কোনো হেদায়েত বাণীর অপেক্ষায় থাকে না, চাই তাকে বিনা শর্তে আশু-কর্দমমুক্ত করা। বর্তমানকার মানুষ একইভাবে পাপের কর্দমার অতলে আছে তলিয়ে। নিত্যদিন কিসের ফতোয়া দিচ্ছেন আপনি। আর আপনার নিজের অবস্থানই বা কোথা। ওহে ফতোয়াধারী, বেয়াদবি নিবেন না, আপনার কাছে প্রশ্ন করি, আপনার হাত দুটো কি যথেষ্ট পরিষ্কার আছে? মুছে কি গেছে খুনের রক্তের সবটুকু দাগ? হায়রে ধর্মান্ধ! অন্ধজনের অনধিকার চর্চার কারণে আজ ধর্ম হয়ে পড়েছে দুষিত।
প্রচুর বর্ষণ হতে দেখে লোকে কথায় কথায় বলে বসে, ভালোই বৃষ্টি ঝরেছে। এই ভালোর অর্থ হলো প্রচুর পরিমান। ভালো মান্দের ভালো নয়। তবে বৃষ্টির জল সবসময় ভালোই থাকে, কর্দমাক্ত স্থানে পড়ার পরে তা ঘোলা হয়ে যায়। তাতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয়, কেননা জল শোধন করা হলে এবং এর মধ্যে মিশে থাকা অন্যান্য পদার্থ ছেকে ফেললে বরাবরের মতো মনে সুপেয় জল সুপেয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেমন মানুষ যখন অভিশপ্ত ইবলিসের কবলে পতিত হয়, তখন সে কেবল দুষ্ট বুদ্ধি চালাতে থাকে, নিয়ত মানুষের ক্ষতিকারক কর্মে থাকে ব্যতিব্যস্ত, আবার উক্ত মানুষটি যখন শয়তানের কব্জা থেকে মুক্তি পেল, পাকরূহের নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হতে শুরু করলো, তখন থেকে সে মানবকল্যাণে থাকে সদা স্বতঃস্ফুর্ত।
পাককালামে তেমন একটি আয়াত রয়েছে, এ আয়াতটি বিশদ বিবরণ দিয়েছে মানুষের পরিবর্তনের বিষয়ে, মানুষের পরিবর্তন কোনো জৈবিক পরিবর্তন নয়, তা তার হৃদয়ের আমূল পরিবর্তন, চিন্তা চেতনার পরিবর্তন, পার্থিব বিষয়কেন্দ্রিকতা থেকে রুহানি বিষয়কেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার দ্বারা সেই পুরানো বিশ্বটাকে নতুনভাবে সে দেখতে শুরু করেছে। উক্ত ব্যক্তি নিজেকে মাবুদের হাতে তুলে দিয়েছে, নতুনভাবে তারই নির্দেশনা অনুযায়ী মানব কল্যাণ বয়ে আনার সাথে সে এখন থাকে ব্যস্ত। তার কেন্দ্রে এখন রয়েছে মহান খোদা, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ আজ তাকে নতুন করে গড়ে তুলছেন, তিনি তাঁর পূতপবিত্র কোমল হৃদয় উক্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রতিস্থাপন করেছেন, তাই পূর্বের মতো পাষাণ হৃদয় দিয়ে কোনো কিছু বিবেচনা করে না। উক্ত বক্তি বর্তমানে পূতপবিত্র মসিহের মত দায়িত্বপ্রাপ্ত, অন্ধকার দুনিয়া মসিহের নূরে উজ্জ্বল করার জন্য সদাই থাকে ব্যতিব্যস্ত। কেবলমাত্র মাবুদ নিজেই নিজের হাতে ব্যক্তির জীবনের পরিবর্তন সাধন করেছেন, জগতের লোকদের কোনো মন্তব্য তাঁর ক্ষেত্রে আর কার্যকর রইল না। খোদা যাদের বেছে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর কে আনতে পারে? তবে অভিশপ্ত ইবলিসের কথা সম্পূর্ণ আলাদা, উক্ত কুলটা খোদ খোদার বিরুদ্ধে পর্যন্ত দুর্ণাম রটনা করে ফেরে।
গোটা বিশ্ববাসির জন্য একমাত্র পথ, সত্য ও জীবন হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। তিনি নিজের পূতপবিত্র রক্তের মুল্যে বিশ্ববাসির পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিয়েছেন, ক্রয় করে এনেছেন শত জনমের কাঙ্খিত নাজাত, সকলের জন্যই সমভাবে তা প্রযোজ্য। কেবল অনুতাপানলে জ্বলে পুড়ে বিশ্বাসে আমরা তা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে চলছি। আজ আমাদের দায়িত্ব হলো খোদার অশেষ শুকরিয়া আদায় করা। প্রাপ্তি স্বীকার করা।
জীবনে অনেকগুলো আন্দোলন আমাদের নিয়ত দোল খাওয়ায়। তবে আমরা যতোটাইনা দোল খেতে থাকি, সর্বাবস্থায় কেন্দ্রবিন্দুর আকর্ষণে ফিরে আসতে হয় কেন্দ্রাভিমুখে, কেন্দ্র ত্যাগ করার সহজ কোনো উপায় নেই আমাদের হাতে।
আমরা পৃথিবীটাকে যদি কেন্দ্রবিন্দু মনে করি তবে আমাদের প্রত্যেকটা মুভমেন্ট পৃথিবীর টানে ঘুরে ঘুরে পৃথিবীতেই ফিরে আসবো। আমাদের সকল শ্রমসাধনা পার্থিব বস্তুর স্বার্থ রক্ষার জন্যই ব্যয় হবে।
আবার আর একদিকে ঐশি বিষয়কেন্দ্রীক আমাদের ধ্যান-ধারণা কর্মকান্ড চলছে, তখন দেখা যাবে, বিশেষ চরম মুহুর্তে অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের লগ্নে কেন্দ্রীয় বিষয়টিকেই আমরা বেছে নিয়েছি। তাই বিবেচনা করতে হবে, জলকাদা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, আবার পৃথিবীটা যে একটা অস্থায়ী মঞ্চ, ক্ষণিকের জন্য অভিনয় করে যবনিকা টানতে হয় তা হয়তো ক্লাইমেক্স্যে পরাকাষ্ঠায় উন্নিত হবার সময় মনে থাকে না, জীবনের চূড়া আর পাহাড়ের চূড়া মুহুর্তের মধ্যেই পিছনে ফেলে আসতে হয়, যা বড়ই স্বাভাবিক, কেননা আমরা যে চলমান প্রাণী। যে মুহুর্তটি পিছনে ফেলে এলাম, শত সাধ্যসাধনা করা সত্তে¡ও আর তথা ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, আদম হাওয়া পিছনে ফিরে যেতে পারে নি; আমাদের ফিরে যাবার প্রশ্নই জাগে না। আমাদের গতি হলো সম্মুখপানে। পা দুটো সেভাবেই সেট করা, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। বীজের খোদা ভেদ করে চারার জন্ম, তারপর উক্ত চারাটি কলায় কলায় বৃদ্ধি পাবে, যা হলো স্বাভাবিক, চাইলেই কি আমরা এ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী হতে পারবো? প্রশ্নই জাগে না। কথায় বলে জিরো থেকে হিরো, আবার হিরো যে জিরো হয়ে যায় সে কথাটি কেউ সহজে মানতে চায় না।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো পরিবারে সদ্য জন্মপ্রাপ্ত শিশুটির কর্ণে ঘোষণা দিতে হবে, ‘তুমি এক নন্দিত আশির্বাদপুষ্ট মানব সন্তান’ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন গোটা বিশ্বের খোদ মালিক নিজের সুরতে, তা তুমি যে কোনো প্রান্তেই জন্ম নাও না কেন তাতে কোনো প্রভেদ নেই, বিশ্বের তাবৎ মানুষের সাথে তুমি একজন নতুন সদস্য, তোমার রয়েছে শতকোটি ভ্রাতাভগ্নি গোটা বিশ্বজুড়ে যারা পাবে তোমার কাছ থেকে সম্মান আর তুমিও তাদের কাছে থেকে পাবে স্নেহ ভালবাসা। তুমি তিলে তিলে বৃদ্ধি পেয়ে বয়ে আনবে সমৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠা করবে প্রকৃত শান্তি যা বাস্তবায়নকল্পে অত্যাবশ্যক হলো পারষ্পরিক সহমর্মিতা প্রেম সহানুভুতি। কোনো মানুষ স্বার্থপর হলে তেমন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না, প্রত্যেকে যখন ব্যস্ত থাকবে পরষ্পরের কল্যাণ সাধনকল্পে, ঠিক তখনই একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে ওঠবে।
আজকে নিত্যদিনের খাদ্যসামগ্রী ক্রয় বা উৎপাদন করার জন্য যে কয়টা টাকার প্রয়োজন, তা একটি মারণাস্ত্রের মুল্যের চেয়ে অতীব নগণ্য। গোটা বিশ্ব রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পিছনে যতো কোটি অর্থের অপচয় করেছে, জীবন বলি দিয়েছে এবং বর্তমানেও খন্ডযুদ্ধের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে যত অপচয় গুণতে হচ্ছে তার এক শতাংশ বোধ করি প্রয়োজন হবে বিশ্বে শান্তি সহমর্মিতা মিলন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। যুদ্ধ শুরু হয় পারস্পরিক শত্র“তার জের ধরে, আর শত্র“তা জন্ম নেয় স্বার্থেরটানে। যে বৃক্ষটি অঙ্কুরে বিনাশ করা সম্ভব তা অবহেলার কারণে কঠিন পর্যায় পৌছতে দেব। পাককালাম তো সে কথাই শিক্ষা দেয়, সূর্য ডুবিবার পূর্বেই তোমাদের রাগ ছেড়ে দাও, এ কথার অর্থ হলো, ক্রোধের বয়স অনুর্ধ্ব দশ ঘণ্টার অধিক বাড়তে দেয়া চলবে না।
প্রত্যেকটি শিশু মানব সন্তান হয়ে জন্মগ্রহন করে। নবী সে কথাই বলেছেন ‘তুমিই আমার অন্তর সৃষ্টি করেছো; মায়ের গর্ভে তুমিই আমার শরীরের অংশগুলো একসঙ্গে বুনেছ’ (জবুর ১৩৯ ঃ ১৩)।
সদ্যজাত শিশুটিকে অবশ্যই এ শুভ বারতা জ্ঞাপন করতে হবে, তাকে ক্রমেক্রমে অর্থাৎ বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলিক শিক্ষা, অর্থাৎ মানবতাবোধে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। উক্ত মানব শিশুটি যাতে মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজে পায় প্রতিষ্ঠা, তার পূর্ণ সহযোগিতা দান করতে হবে সমাজপতিদের। কেউ যেন ঘরকুণো, সমাজ ছাড়া, আত্মমুখি হয়ে না পড়ে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আর এ দায়িত্ব সর্বপ্রথম পিতা-মাতার কাধে বর্তায়। কোনো এক জনসভায় আমি বলেছি, একটি সন্তান মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠতে চাইলে তার উপর নজর রাখতে হবে তিন শ্রেণির পিতামাতার; অর্থাৎ জন্মদাতা, শিক্ষাগুরু আর কর্মস্থলে প্রশিক্ষক ও সিনিয়র সহকর্মীবৃন্দ। দেখা যাচ্ছে উক্ত শিশুটি কোনো অবস্থাতেই একাকিত্ব বোধ করার কারণ খুঁজে পাবে না। তার জন্ম যেমন মানুষের মধ্যদিয়ে হয়েছে, তদ্রুপ মানব সমাজের প্রতি রয়েছে তার প্রচুর দায়িত্ব কর্তব্য আর যথাযথ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার মধ্যেই থাকে কিছু পাবার অধিকার। তবে শিশুর ক্ষেত্রে কিছু পাবার অধিকার থাকে সর্বাগ্রে, আর দেবার মত দায়িত্ব ও কর্মক্ষমতা আসবে উক্ত শিশুটি যখন সুঠাম কর্মক্ষম প্রাজ্ঞ মানুষে হয় পরিণত। আর সেজন্য চাই মানুষ গড়ার উপযুক্ত শিক্ষা মালার প্রণয়ন।
মজার বিষয় হলো, কিতাবে কোথাও কোথাও দেখতে পাওয়া যায়, মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তির সমর্থন রয়েছে। তবে সৃষ্টির গোড়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করা হলে দেখা যাবে, মহাজ্ঞানি ধার্মিক পূতপবিত্র খোদা মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁকেই প্রচুর আশির্বাদ ও ক্ষমতা, প্রজ্ঞা-ধার্মিকতা, যুগিয়েছেন যেন নিজের মত স্বজাতি উৎপাদন করে গোটা বিশ্ব ভরে তুলতে পারে, পারে যথাযথ আবাদ করতে। বর্তমানকার স্পষ্ট দৃষ্ট জাতিভেদ আমরা অস্বীকার করতে পারি না, তবে প্রচুর গবেষণার ফলে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, কেবল ‘পাপ’ অথবা খোদাদ্রোহীতা হলো মানুষের পতনের একমাত্র কারণ। অবাধ্যতার কারণে প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া হলেন বেহেশত বা এদন কানন থেকে বিতাড়িত। তাদের সন্তান সন্তুতি হলাম আজকের আমরা, আর যারা বিগত প্রায়ত হয়েছেন, তারাও অবশ্যাম্ভাবিরূপে ঐ একই আদমের বংশধারী ছিলেন। আর ভবিষ্যতে যতো প্রজন্ম জন্মাবে, তারা একবাক্যে সকলেই গণ্য ও ঘোষিত হবে আদম সন্তান হিসেবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিক্রমের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানকার ইতিহাস লিখতে গেলে আমাকে অবশ্যই দৃশ্যমান জগতের বর্ণনা দিতে হবে, যাকে বলে সুরতহাল রিপোর্ট। যেকোনো একটি অঘটন ঘটে গেলে পর উক্ত ঘটনার বিষয়ে যা কিছু লিখতে হবে তার মধ্যে উঠে আসবে ঘটনার পরবর্তী প্রাপ্ত উপাত্ত সমূহ। আর অত্র রিপোর্টের সাথে পূর্বের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হলে বুঝা যাবে আলোচ্য বিষয়ের প্রকৃত অবস্থান। যে কোনো বংশের কেবল নাতিপুতিদের উপর ভিত্তি করে উপসংহারে পৌছানো বুদ্ধিমানে কাজ হবে না, তাদের পূর্বপুরুষ নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে, যেমন আমাদের আদি পুরষ হলেন হযরত আদম (আ.)। বর্তমানে কে কোথায় বসবাস করছি তার উপর নির্ভর করে আমাদের বংশ গণনা করা হবে সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত টানা। যেমন জমি-জমার সত্ত¡ ও অধিকার নির্ণয় করার জন্য অত্যাবশ্যক হলো পূর্বাপর দলিল রেকর্ড পর্চা ক্ষতিয়ে দেখা। আলোচ্য জমিটি পূর্বে কার হাতে ছিল, কোন সূত্রে সে মালিকানা পেয়েছিল ইত্যাদি।
মজার বিষয়, ভারত বর্ষের জমি-জমার মালিকানা মেনে নেয়া হয় বৃটিশ যুগ থেকে, অর্থাৎ যারা জোরজবরদস্তি করে এ দেশটাকে দুইশত বৎসর শাসন শোষণ করে গেছে, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অধিকারপত্র নাকি নির্ভরযোগ্য ও সার্বজনীন সমর্থযোগ্য ভিত, যাকে বলে জেনুইন অথরিটি। ‘শুনলে দাদা হাসি পায়, রাজাকারেরা ভোট চায় চায়’ এটি একটি মুখ-রোচক স্লোগানমাত্র। একইভাবে, যে মতবাদটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নরঘাতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে, আর বর্তমানেও একইভাবে নরহত্যা করে চলছে উক্ত মতবাদে মদদপুষ্ট নরখাদকের দল, তেমন মতবাদ কেউ জেনে শুনে সুবিবেচনায় শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মেনে নিতে পারে না। তবে শানিত তরবারিঘাতে নিত্য নতুন অনেক কিছুই ঘটে চলছে।
এতদসত্তে¡ও আমরা মানুষ, বিবেক বিবেচনাবোধ রয়েছে আমাদের, আর খোদা নিজেই নিজের সুরতে ও তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন। খোদার উপর আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে সমান অধিকার। তিনি পক্ষপাতিত্ত¡ দোষে দুষ্ট নন। আমরা যদিও তাঁর গর্বিত প্রতিনিধি, তবুও ইতিহাস ঐতিহ্য আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। কথায় বলে, মানিব্যাগ পড়ে আছে সুণ্যহিয়া নিয়া, আর মানি (অর্থ) হয়ে গেছে উধাও। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি ঘটেছে অভিনব এক ফন্দিতে। আজ আমরা সুণ্য মানিব্যাগের মত অধঃস্থলে পড়ে আছি।
রূপান্তরিত হয়ে পড়েছি মনুষ্যত্ব বা মানবতা শুণ্য মানুষের দলে, আর সে কারণেই গোটা বিশ্বে নিয়ত জ্বলছে জিঘাংসার দাবানল। এ প্রলয়ংকারী দাবানলে কত নগর-বন্দর-জনপদ যে ভূষ্মিভুত হয়ে পড়েছে তার খোঁজ নেবার কেউ নেই। মানবতা বিবর্জিত মানুষ যে কাজেই যাক না কেন, লাভের চেয়ে ক্ষাতির ভাগ অধিক রেখে আসে। নর্দমায় পড়ে যাওয়া শিশুটি কোনো হেদায়েত বাণীর অপেক্ষায় থাকে না, চাই তাকে বিনা শর্তে আশু-কর্দমমুক্ত করা। বর্তমানকার মানুষ একইভাবে পাপের কর্দমার অতলে আছে তলিয়ে। নিত্যদিন কিসের ফতোয়া দিচ্ছেন আপনি। আর আপনার নিজের অবস্থানই বা কোথা। ওহে ফতোয়াধারী, বেয়াদবি নিবেন না, আপনার কাছে প্রশ্ন করি, আপনার হাত দুটো কি যথেষ্ট পরিষ্কার আছে? মুছে কি গেছে খুনের রক্তের সবটুকু দাগ? হায়রে ধর্মান্ধ! অন্ধজনের অনধিকার চর্চার কারণে আজ ধর্ম হয়ে পড়েছে দুষিত।
প্রচুর বর্ষণ হতে দেখে লোকে কথায় কথায় বলে বসে, ভালোই বৃষ্টি ঝরেছে। এই ভালোর অর্থ হলো প্রচুর পরিমান। ভালো মান্দের ভালো নয়। তবে বৃষ্টির জল সবসময় ভালোই থাকে, কর্দমাক্ত স্থানে পড়ার পরে তা ঘোলা হয়ে যায়। তাতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয়, কেননা জল শোধন করা হলে এবং এর মধ্যে মিশে থাকা অন্যান্য পদার্থ ছেকে ফেললে বরাবরের মতো মনে সুপেয় জল সুপেয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেমন মানুষ যখন অভিশপ্ত ইবলিসের কবলে পতিত হয়, তখন সে কেবল দুষ্ট বুদ্ধি চালাতে থাকে, নিয়ত মানুষের ক্ষতিকারক কর্মে থাকে ব্যতিব্যস্ত, আবার উক্ত মানুষটি যখন শয়তানের কব্জা থেকে মুক্তি পেল, পাকরূহের নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হতে শুরু করলো, তখন থেকে সে মানবকল্যাণে থাকে সদা স্বতঃস্ফুর্ত।
পাককালামে তেমন একটি আয়াত রয়েছে, এ আয়াতটি বিশদ বিবরণ দিয়েছে মানুষের পরিবর্তনের বিষয়ে, মানুষের পরিবর্তন কোনো জৈবিক পরিবর্তন নয়, তা তার হৃদয়ের আমূল পরিবর্তন, চিন্তা চেতনার পরিবর্তন, পার্থিব বিষয়কেন্দ্রিকতা থেকে রুহানি বিষয়কেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার দ্বারা সেই পুরানো বিশ্বটাকে নতুনভাবে সে দেখতে শুরু করেছে। উক্ত ব্যক্তি নিজেকে মাবুদের হাতে তুলে দিয়েছে, নতুনভাবে তারই নির্দেশনা অনুযায়ী মানব কল্যাণ বয়ে আনার সাথে সে এখন থাকে ব্যস্ত। তার কেন্দ্রে এখন রয়েছে মহান খোদা, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ আজ তাকে নতুন করে গড়ে তুলছেন, তিনি তাঁর পূতপবিত্র কোমল হৃদয় উক্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রতিস্থাপন করেছেন, তাই পূর্বের মতো পাষাণ হৃদয় দিয়ে কোনো কিছু বিবেচনা করে না। উক্ত বক্তি বর্তমানে পূতপবিত্র মসিহের মত দায়িত্বপ্রাপ্ত, অন্ধকার দুনিয়া মসিহের নূরে উজ্জ্বল করার জন্য সদাই থাকে ব্যতিব্যস্ত। কেবলমাত্র মাবুদ নিজেই নিজের হাতে ব্যক্তির জীবনের পরিবর্তন সাধন করেছেন, জগতের লোকদের কোনো মন্তব্য তাঁর ক্ষেত্রে আর কার্যকর রইল না। খোদা যাদের বেছে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর কে আনতে পারে? তবে অভিশপ্ত ইবলিসের কথা সম্পূর্ণ আলাদা, উক্ত কুলটা খোদ খোদার বিরুদ্ধে পর্যন্ত দুর্ণাম রটনা করে ফেরে।
গোটা বিশ্ববাসির জন্য একমাত্র পথ, সত্য ও জীবন হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। তিনি নিজের পূতপবিত্র রক্তের মুল্যে বিশ্ববাসির পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিয়েছেন, ক্রয় করে এনেছেন শত জনমের কাঙ্খিত নাজাত, সকলের জন্যই সমভাবে তা প্রযোজ্য। কেবল অনুতাপানলে জ্বলে পুড়ে বিশ্বাসে আমরা তা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে চলছি। আজ আমাদের দায়িত্ব হলো খোদার অশেষ শুকরিয়া আদায় করা। প্রাপ্তি স্বীকার করা।