ধর্ম দুটি ভাগে ভাগ করা চলে, যেমন বস্তুনির্ভর ধর্ম ও ঐশী ধর্ম। পাইকারীহারে ধর্ম শব্দটি শুনামাত্র মনে প্রাণে যেন একটা অজানা শিহরণ জাগে, নিজেকে অপবিত্র মনে করা হয়। ধার্মিকতা যেন অতি উচ্চ কোনো মার্গ থেকে নেমে এসেছে কলুষিত বিশ্বপরে, সবকিছু অভিযুক্ত করার কারণে। আসলে ধর্ম সম্বন্ধে প্রাঞ্জল ধারণা না থাকার কারণে লেজে-গোবরে জাড়িয়ে পড়ে সকলে। মানুষের এহেন হতভম্ব অবস্থার সুযোগ নিয়ে গোটা বিশ্ব কতিপয় চাটুকারের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
অনেকে বলে বসেন, বস্তুনিষ্ঠ ধর্ম, তা কথাটা উড়িয়ে দেয়া চলবে না। যেক্ষেত্রে বাস্তবতা থাকে না তাকে বস্তুনিষ্ঠ বলা ঠিক হবে না। বস্তুজগত নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ বেঁচে আছে। মানুষ খায়-দায় বেঁচে রয় এই বস্তুজগত নিয়ে। মানুষে মানুষে প্রেম প্রীতি কলহ-বিবাদ তাও বস্তুজগতকে কেন্দ্র করে টিকে আছে। মানুষ জীবিত থাকে বস্তুজগতের উপর নির্ভর করে।
যা কিছু এতটাই অত্যাবশ্যক প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এবং মানুষের জন্য, তা নিয়ে ভোক্তা শ্রেণির মন্তব্য বা কিছু একটা বলার অধিকার থাকতে হবে সংগৃহীত। জগতে তা চলে আসছে এবং তেমন বিধিকলাপ মানুষের যাত্রারম্ভেই তা আকার পেতে শুরু করেছে।
প্রাগ ঐতিহাসিক যুগেও মানুষ মানুষকে ভাল বেসেছে, ঐক্য গড়ে তুলেছে, আবার বখড়া নিয়ে ঝগড়া করতে উদ্ধত হয়েছে। ভাই ভাইকে কতল পর্যন্ত করেছে; আর বর্তমানে মানুষ খুন করার বহুধরণের পন্থা হয়েছে উদ্ভাবিত।
বস্তু ধর্ম বস্তুর কথা বলে, যেমন চুম্বকের ধর্ম, বীজের ধর্ম, জলের ধর্ম অর্থাৎ বস্তুর কার্যকারিতা বুঝাতে এমন শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চাই পাঁচটি মৌলিক বস্তু যা প্রকৃতির নিপুণ হস্তের দান, সকলে তা উপভোগ করতঃ খোদার অর্থাৎ দাতার মান রক্ষা করবে।
দাতার ধর্ম দান করে চলা আর ভোক্তা বা গ্রহীতার ধর্ম গ্রহণ ও উপভোগ করবে ও দাতার প্রতি আন্তরিক আনুগত্য প্রকাশ করবে। কথায় আছে, মানুষ কোনো বস্তু না পারে সৃষ্টি করতে, না পারে ধ্বংস করতে, মানুষ যা কিছু করে তা হলো বস্তুর উপযোগ বাড়ানো বা নষ্ট করা। যেমন একটি কাঠালের বীজ আপনি ভেজে খেয়ে নিলেন অথবা উক্ত বীজটিকে না খেয়ে যথাযথ মাটিতে রোপন করে দিলেন, যত্ন নিলেন, অঙ্কুরিত হলো, কলায় কলায় বৃদ্ধি লাভ করে শত শত কাঠাল উৎপাদন করলো, বাগান ভরে দিল।
খোদা প্রথম মানুষ আদমকে আর্শিবাদ করলেন, ক্ষমতা দিলেন, তাঁর বীজ ছড়িয়ে দিতে, নিজের মত শত শত মানুষ উৎপাদন করে গোটা বিশ্ব আবাদ করার জন্য। আজ পর্যন্ত প্রজননের কোনো ব্যতিক্রম কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছেন? এর যথাযথ জবাব পাওনা র’লো।
মানুষ বরাবর অবাধ্য খোদাদ্রোহী, দাঁতার দান গ্রহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে পাদমূল উঠায়। মহামতি দাউদ তাই যথার্থই বলেছেন, যে আমার রুটি খেয়েছে, সে আমার বিরুদ্ধে পাদমূল উঠিয়েছে। তেমন বাস্তবতা, পাঠকবৃন্দ, বোধকরি আপনাদের কাছেও ২/৪টি জানা থাকবে নিশ্চয়। আসলে ধর্ম বস্তুগত বা বস্তু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নিয়ম বিধি রচনা ও পালন করা হয়, তাকেই বস্তুনিষ্ট বা বস্তুনির্ভর ধর্ম বলা চলে।
সাধারণতঃ মানুষ একবাক্যে ধর্ম বিষয়ে বা ধর্মসংক্রান্ত যা কিছু মনে করে তা হলো ঐশি ধর্ম বা অবস্তুগত অদৃশ্য খোদাকে নিয়ে বিধিকলাপ। খোদা হলেন এক রুহানি সত্ত্বা যা হলো বস্তুজগতের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন পাককালামে লেখা রয়েছে, খোদা হলেন রূহ! তিনি সত্য প্রেম পবিত্রতা! প্রেমের তাগিদে স্বীয় প্রতিনিধি, যার অর্থ হলো, খোদার সাদৃশ্য, প্রতিমূর্তি, অনুকল্প, দূত ইত্যাদি, যেন দৃশ্যমান মানুষ দেখে অদৃশ্য খোদাকে বুঝতে পারে। খোদা ও মানুষের মধ্যে আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল বিরাজমান, বলা চলে হার্ট টু হার্ট সম্পর্ক, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বাধন, প্রেমের বাধন। দুঃখের বিষয় হলো, দুষ্ট প্রতারক ইবলিসের কুটচালে মানুষ হয়ে পড়লো প্রলুব্ধ, যার ফলে খোদার হুকুম অমান্য করে তেমন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান থেকে তারা দূরীকৃত হলো।
আজ মানুষ হলো মানুষের দুষমন। পরষ্পর প্রেমের পরিবর্তে হিংসানলে একে অন্যকে পুড়িয়ে মারার প্রচেষ্টা চলছে যাত্রারম্ভ থেকে। মানুষ যে কতোটা বিনাশপ্রাপ্ত তার শত সহস্র নজিরের মধ্যে একটা জ্বলন্ত নজীর হলো বর্তমানকার ‘রোহিঙ্গা’।
খোদার ধর্ম হলো ঐশি ধর্ম যা মানুষের কল্যাণকর্মে থাকে শতত: তৎপর। খোদার আহার নিদ্রা বলতে কিছুই নেই। খোদার না আছে তন্দ্রা না আছে ঘুম, সদাজাগ্রত প্রেমকাতর মাবুদ তাঁর হস্তনির্মিত সন্তানদের খুঁজে ফেরা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে থাকেন তিনি কর্মব্যস্ত। যে কেউ তার কাছে আসতে চায় তাকে অবশ্যই খোদার উপর বিশ্বাস করতে হবে, তিনি আছেন স্বমহিমায় সদাজাগ্রত।
গুনাহগার মানুষ রক্ষা করার জন্য তিনি এক অপূর্ব ও অভাবিত ব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন যা হলো সম্পূর্ণ পূতপবিত্র প্রেম ও ত্যাগের পরাকাষ্টা, একক নজির। তিনি হলেন খোদার পূত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, খোদার কালাম ও পাকরূহ, মানবরূপ নিয়ে জগতে করেছেন আগমন। তিনি কোনো মানুষকে দোষী প্রমাণ করার জন্য আগত নন। যদিও সকলে পাপ করেছে এবং খোদার গৌরব হারিয়ে বসেছে, লোভে পাপ, আর পাপের বেতন মৃত্যু।
মসিহের আগমন হলো, অসহায় মানবজাতিকে স্নাত শুভ্র করা, তাদের নাজাত দান করা, খোদার কাছে ফিরিয়ে দেয়া। কালামে তাই পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে, যদি কেউ মসিহের সাথে যুক্ত হয় তবে সে নতুন জন্ম লাভ করে। মানুষ আজ রুহানিভাবে মৃত, মসিহ তাদের তাদরে রুহানি জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। রুহানি মানুষ ক্ষমতা রাখে মাংসিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার। তাছাড়া তিনি তো এখন মসিহের বিশেষ দান পাকরূহের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে পরিচালিত।
জগতে বস্তু রয়েছে অগণিত, স্বাভাবিক কারণে বস্তুধর্ম অবশ্যই থাকবে অগণিত। তাই বলে ঐশি ধর্ম তো আর বহুধা হতে পারে না, কেননা ঈশ্বর তো মাত্র একজন। পাককালামে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে, খোদা তাঁর সভাসদ ফেরেশতাদের নিয়ে বললেন, ‘…আমরা আমাদের সুরতে, আমাদের সাদৃশ্য মানুষ সৃষ্টি করি।’ উক্ত বক্তব্যের আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার হলো, মানুষ রীতিমত খোদার হাতে, খোদার সুরতে, তাঁর সাদৃশ্য সৃষ্ট।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইবলিসের দাগায় মানুষ হলো বিভ্রান্ত, খোদার হুকুমের চেয়ে অভিশপ্ত ইবলিসের মন্ত্রণা সে অধিক মূল্যবান ভেবে বসলো, আর যায় কোথা, নির্ঘাত পতন, সম্মানিত আসন, অবস্থান ও মর্যাদা থেকে হলো বিতাড়িত।
বস্তুর সাথে রূহ মিলিয়ে যারা জল ঘোলা করতে অভ্যস্থ, আজ তারাই বাণিজ্য ও রাজনীতির উপর নির্ভর করে ধর্মীয় নিয়মাচার সৃষ্টি করেছে যার প্রতিক্রিয়া হলো সত্য ধর্মটাকে জটিল-কুটিল করে রেখেছে। ধার্মিক কেবল বিশ্বাসহেতু বেঁচে থাকে।
পাপ থেকে মন ফিরালে নাজাত হয় লব্ধ, প্রত্যেকের দ্বারপ্রান্তে নাজাত দন্ডায়মান, যেমন প্রত্যেকের নাকের ডগায় প্রস্তুতকৃত অক্সিজেন রয়েছে, বাঁচার তাগিদে টেনে নিলেই সারে। গুনাহগার অনুতাপ করার সাথে সাথে বেহেশতে আনন্দের ঢেউ খেলতে শুরু করে। একজন গুনাহগার ব্যক্তি পাপ থেকে মনফিরালে খোদার সকল প্রচেষ্টা সার্থক হয়। অপব্যয়ী পুত্রটি জীর্ণশীর্ণ কলেবরে যখনই পিতার কাছে ফিরে আসলো, অমনি পিতার আনন্দ চারদিক ছাপিয়ে উথলে পড়ল। হারাধন ফিরে পাবার আনন্দে গোটা এলাকায় আমন্ত্রণ জানালো, সে কি এক আনন্দ!
মানুষ আজ গুনাহের পংকে ডুবে রয়েছে। নিজেরা নিজেদের নাজাত করার শতপ্রকার ব্যবস্থা ভÐুল বলে হচ্ছে প্রমাণিত। নাজাতের লোভে পৃথিবীর চেনাজানা পদার্থের কাছে আহাজারি করছে, এতটা কৃচ্ছ্রতা করা সত্তে¡ও মানুষের হাতে মানুষ নিধন বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টি যেন অন্ধের হাতী দেখার মতো কান্ড। পাঁচ অন্ধ পাঁচ ভাবে হাতীটিকে দেখল, পরিশেষে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিটি এসে হাতীটির যথার্থ বর্ণনা দিয়ে দিলেন।
মসিহ তাই বর্ণনা দিলেন, খোদা রূহ, যারা তাঁর ভজনা করবে, তাদের সত্যে ও রূহে তাঁর ভজনা করতে হবে। খোদা হলেন মহব্বত, কেবল মহব্বতের তাগিদেই তিনি দুষ্টচক্র থেকে, স্বীয় প্রতিনিধি মানুষ, রক্ষার জন্য এক চূড়ান্ত মাশুল দিলেন পুত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের পবিত্র রক্তের মূল্যে। যারা মসিহের পাপার্থক কোরবানি নিজেদের কোরবানি হিসেবে বিশ্বাস করলো, আপন আপন পাপ থেকে তওবা করে মসিহের ক্রোড়ে ঠাই নিল, আজ তাদের নতুনভাবে সৃষ্টি করলেন। তাদের পুরাতন হৃদয় খোদার হৃদয় দিয়ে পুনস্থাপন (Replacement)করে দিলেন।
নতুন জন্মের রহস্য এখানেই নিহিত। নাম পরিবর্তন নতুন জন্মের চিহ্ন হতে পারে না। পোশাক আসাক, বাহ্যিক কোনো কিছু পরিবর্তন হৃদয়ের পরিবর্তনের ফলে বয়ে আনতে পারে না। মানুষ বাহ্যিক যা কিছু করে চলছে তা কেবল বাণিজ্য ও বাণিজ্য রক্ষার জন্য রাজনীতিই তেমন ক্ষেত্রে ধর্মের কোন সেবা হতেই পারে না।
আসলে ধর্ম মাত্র একটি, আর তা হলো ঐশী ধর্ম, রুহানি বিষয়, যার সাথে দৈহিক অঙ্গ-ভঙ্গি বা কসরতের কোনো যোগসাজস নেই এবং থাকার প্রশ্নও জাগে না। অনেকে মানুষ খুন করাটাকেও ধর্মের প্রতিষ্ঠা সহায়ক কর্ম বলে চালিয়ে দিচ্ছে, আসলে মানুষ বাঁচাতে মসিহ নিজের প্রাণ দিলেন কোরবানি।
যেক্ষেত্রে মসিহ অর্থাৎ খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ আমাদের সাথে রয়েছেন যুক্ত তেমন ক্ষেত্রে আরিন্দম দেখে ভীত সন্ত্রস্থ হবার কারণ খুঁজে পাই না। মসিহ হলেন বাতেনি খোদার প্রকাশ্য রূপ (কলসীয় ১ ঃ ১৫)।
মানুষের ধর্ম হবে মানবতা, যে দেখা ভাইকে মহব্বত করত ব্যর্থ সে অদেখা খোদার সেবা করে চলছে বলে সর্বপ্রকার ঘোষণা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কি হতে পারে? মানবতা রক্ষার জন্যই মসিহ নিজের পূতপবিত্র প্রাণ কোরবানি দিলেন, যেন বিশ্বাস পূর্বক প্রত্যেকটি ব্যক্তি নাজাত লাভে ধন্য হতে পারে, এবং ঠাই পেতে পারে পিতার (খোদার) মহান ক্রোড়ে।
অনেকে বলে বসেন, বস্তুনিষ্ঠ ধর্ম, তা কথাটা উড়িয়ে দেয়া চলবে না। যেক্ষেত্রে বাস্তবতা থাকে না তাকে বস্তুনিষ্ঠ বলা ঠিক হবে না। বস্তুজগত নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ বেঁচে আছে। মানুষ খায়-দায় বেঁচে রয় এই বস্তুজগত নিয়ে। মানুষে মানুষে প্রেম প্রীতি কলহ-বিবাদ তাও বস্তুজগতকে কেন্দ্র করে টিকে আছে। মানুষ জীবিত থাকে বস্তুজগতের উপর নির্ভর করে।
যা কিছু এতটাই অত্যাবশ্যক প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এবং মানুষের জন্য, তা নিয়ে ভোক্তা শ্রেণির মন্তব্য বা কিছু একটা বলার অধিকার থাকতে হবে সংগৃহীত। জগতে তা চলে আসছে এবং তেমন বিধিকলাপ মানুষের যাত্রারম্ভেই তা আকার পেতে শুরু করেছে।
প্রাগ ঐতিহাসিক যুগেও মানুষ মানুষকে ভাল বেসেছে, ঐক্য গড়ে তুলেছে, আবার বখড়া নিয়ে ঝগড়া করতে উদ্ধত হয়েছে। ভাই ভাইকে কতল পর্যন্ত করেছে; আর বর্তমানে মানুষ খুন করার বহুধরণের পন্থা হয়েছে উদ্ভাবিত।
বস্তু ধর্ম বস্তুর কথা বলে, যেমন চুম্বকের ধর্ম, বীজের ধর্ম, জলের ধর্ম অর্থাৎ বস্তুর কার্যকারিতা বুঝাতে এমন শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চাই পাঁচটি মৌলিক বস্তু যা প্রকৃতির নিপুণ হস্তের দান, সকলে তা উপভোগ করতঃ খোদার অর্থাৎ দাতার মান রক্ষা করবে।
দাতার ধর্ম দান করে চলা আর ভোক্তা বা গ্রহীতার ধর্ম গ্রহণ ও উপভোগ করবে ও দাতার প্রতি আন্তরিক আনুগত্য প্রকাশ করবে। কথায় আছে, মানুষ কোনো বস্তু না পারে সৃষ্টি করতে, না পারে ধ্বংস করতে, মানুষ যা কিছু করে তা হলো বস্তুর উপযোগ বাড়ানো বা নষ্ট করা। যেমন একটি কাঠালের বীজ আপনি ভেজে খেয়ে নিলেন অথবা উক্ত বীজটিকে না খেয়ে যথাযথ মাটিতে রোপন করে দিলেন, যত্ন নিলেন, অঙ্কুরিত হলো, কলায় কলায় বৃদ্ধি লাভ করে শত শত কাঠাল উৎপাদন করলো, বাগান ভরে দিল।
খোদা প্রথম মানুষ আদমকে আর্শিবাদ করলেন, ক্ষমতা দিলেন, তাঁর বীজ ছড়িয়ে দিতে, নিজের মত শত শত মানুষ উৎপাদন করে গোটা বিশ্ব আবাদ করার জন্য। আজ পর্যন্ত প্রজননের কোনো ব্যতিক্রম কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছেন? এর যথাযথ জবাব পাওনা র’লো।
মানুষ বরাবর অবাধ্য খোদাদ্রোহী, দাঁতার দান গ্রহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে পাদমূল উঠায়। মহামতি দাউদ তাই যথার্থই বলেছেন, যে আমার রুটি খেয়েছে, সে আমার বিরুদ্ধে পাদমূল উঠিয়েছে। তেমন বাস্তবতা, পাঠকবৃন্দ, বোধকরি আপনাদের কাছেও ২/৪টি জানা থাকবে নিশ্চয়। আসলে ধর্ম বস্তুগত বা বস্তু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নিয়ম বিধি রচনা ও পালন করা হয়, তাকেই বস্তুনিষ্ট বা বস্তুনির্ভর ধর্ম বলা চলে।
সাধারণতঃ মানুষ একবাক্যে ধর্ম বিষয়ে বা ধর্মসংক্রান্ত যা কিছু মনে করে তা হলো ঐশি ধর্ম বা অবস্তুগত অদৃশ্য খোদাকে নিয়ে বিধিকলাপ। খোদা হলেন এক রুহানি সত্ত্বা যা হলো বস্তুজগতের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন পাককালামে লেখা রয়েছে, খোদা হলেন রূহ! তিনি সত্য প্রেম পবিত্রতা! প্রেমের তাগিদে স্বীয় প্রতিনিধি, যার অর্থ হলো, খোদার সাদৃশ্য, প্রতিমূর্তি, অনুকল্প, দূত ইত্যাদি, যেন দৃশ্যমান মানুষ দেখে অদৃশ্য খোদাকে বুঝতে পারে। খোদা ও মানুষের মধ্যে আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল বিরাজমান, বলা চলে হার্ট টু হার্ট সম্পর্ক, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বাধন, প্রেমের বাধন। দুঃখের বিষয় হলো, দুষ্ট প্রতারক ইবলিসের কুটচালে মানুষ হয়ে পড়লো প্রলুব্ধ, যার ফলে খোদার হুকুম অমান্য করে তেমন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান থেকে তারা দূরীকৃত হলো।
আজ মানুষ হলো মানুষের দুষমন। পরষ্পর প্রেমের পরিবর্তে হিংসানলে একে অন্যকে পুড়িয়ে মারার প্রচেষ্টা চলছে যাত্রারম্ভ থেকে। মানুষ যে কতোটা বিনাশপ্রাপ্ত তার শত সহস্র নজিরের মধ্যে একটা জ্বলন্ত নজীর হলো বর্তমানকার ‘রোহিঙ্গা’।
খোদার ধর্ম হলো ঐশি ধর্ম যা মানুষের কল্যাণকর্মে থাকে শতত: তৎপর। খোদার আহার নিদ্রা বলতে কিছুই নেই। খোদার না আছে তন্দ্রা না আছে ঘুম, সদাজাগ্রত প্রেমকাতর মাবুদ তাঁর হস্তনির্মিত সন্তানদের খুঁজে ফেরা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে থাকেন তিনি কর্মব্যস্ত। যে কেউ তার কাছে আসতে চায় তাকে অবশ্যই খোদার উপর বিশ্বাস করতে হবে, তিনি আছেন স্বমহিমায় সদাজাগ্রত।
গুনাহগার মানুষ রক্ষা করার জন্য তিনি এক অপূর্ব ও অভাবিত ব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন যা হলো সম্পূর্ণ পূতপবিত্র প্রেম ও ত্যাগের পরাকাষ্টা, একক নজির। তিনি হলেন খোদার পূত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, খোদার কালাম ও পাকরূহ, মানবরূপ নিয়ে জগতে করেছেন আগমন। তিনি কোনো মানুষকে দোষী প্রমাণ করার জন্য আগত নন। যদিও সকলে পাপ করেছে এবং খোদার গৌরব হারিয়ে বসেছে, লোভে পাপ, আর পাপের বেতন মৃত্যু।
মসিহের আগমন হলো, অসহায় মানবজাতিকে স্নাত শুভ্র করা, তাদের নাজাত দান করা, খোদার কাছে ফিরিয়ে দেয়া। কালামে তাই পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে, যদি কেউ মসিহের সাথে যুক্ত হয় তবে সে নতুন জন্ম লাভ করে। মানুষ আজ রুহানিভাবে মৃত, মসিহ তাদের তাদরে রুহানি জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। রুহানি মানুষ ক্ষমতা রাখে মাংসিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার। তাছাড়া তিনি তো এখন মসিহের বিশেষ দান পাকরূহের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে পরিচালিত।
জগতে বস্তু রয়েছে অগণিত, স্বাভাবিক কারণে বস্তুধর্ম অবশ্যই থাকবে অগণিত। তাই বলে ঐশি ধর্ম তো আর বহুধা হতে পারে না, কেননা ঈশ্বর তো মাত্র একজন। পাককালামে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে, খোদা তাঁর সভাসদ ফেরেশতাদের নিয়ে বললেন, ‘…আমরা আমাদের সুরতে, আমাদের সাদৃশ্য মানুষ সৃষ্টি করি।’ উক্ত বক্তব্যের আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার হলো, মানুষ রীতিমত খোদার হাতে, খোদার সুরতে, তাঁর সাদৃশ্য সৃষ্ট।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইবলিসের দাগায় মানুষ হলো বিভ্রান্ত, খোদার হুকুমের চেয়ে অভিশপ্ত ইবলিসের মন্ত্রণা সে অধিক মূল্যবান ভেবে বসলো, আর যায় কোথা, নির্ঘাত পতন, সম্মানিত আসন, অবস্থান ও মর্যাদা থেকে হলো বিতাড়িত।
বস্তুর সাথে রূহ মিলিয়ে যারা জল ঘোলা করতে অভ্যস্থ, আজ তারাই বাণিজ্য ও রাজনীতির উপর নির্ভর করে ধর্মীয় নিয়মাচার সৃষ্টি করেছে যার প্রতিক্রিয়া হলো সত্য ধর্মটাকে জটিল-কুটিল করে রেখেছে। ধার্মিক কেবল বিশ্বাসহেতু বেঁচে থাকে।
পাপ থেকে মন ফিরালে নাজাত হয় লব্ধ, প্রত্যেকের দ্বারপ্রান্তে নাজাত দন্ডায়মান, যেমন প্রত্যেকের নাকের ডগায় প্রস্তুতকৃত অক্সিজেন রয়েছে, বাঁচার তাগিদে টেনে নিলেই সারে। গুনাহগার অনুতাপ করার সাথে সাথে বেহেশতে আনন্দের ঢেউ খেলতে শুরু করে। একজন গুনাহগার ব্যক্তি পাপ থেকে মনফিরালে খোদার সকল প্রচেষ্টা সার্থক হয়। অপব্যয়ী পুত্রটি জীর্ণশীর্ণ কলেবরে যখনই পিতার কাছে ফিরে আসলো, অমনি পিতার আনন্দ চারদিক ছাপিয়ে উথলে পড়ল। হারাধন ফিরে পাবার আনন্দে গোটা এলাকায় আমন্ত্রণ জানালো, সে কি এক আনন্দ!
মানুষ আজ গুনাহের পংকে ডুবে রয়েছে। নিজেরা নিজেদের নাজাত করার শতপ্রকার ব্যবস্থা ভÐুল বলে হচ্ছে প্রমাণিত। নাজাতের লোভে পৃথিবীর চেনাজানা পদার্থের কাছে আহাজারি করছে, এতটা কৃচ্ছ্রতা করা সত্তে¡ও মানুষের হাতে মানুষ নিধন বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টি যেন অন্ধের হাতী দেখার মতো কান্ড। পাঁচ অন্ধ পাঁচ ভাবে হাতীটিকে দেখল, পরিশেষে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিটি এসে হাতীটির যথার্থ বর্ণনা দিয়ে দিলেন।
মসিহ তাই বর্ণনা দিলেন, খোদা রূহ, যারা তাঁর ভজনা করবে, তাদের সত্যে ও রূহে তাঁর ভজনা করতে হবে। খোদা হলেন মহব্বত, কেবল মহব্বতের তাগিদেই তিনি দুষ্টচক্র থেকে, স্বীয় প্রতিনিধি মানুষ, রক্ষার জন্য এক চূড়ান্ত মাশুল দিলেন পুত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের পবিত্র রক্তের মূল্যে। যারা মসিহের পাপার্থক কোরবানি নিজেদের কোরবানি হিসেবে বিশ্বাস করলো, আপন আপন পাপ থেকে তওবা করে মসিহের ক্রোড়ে ঠাই নিল, আজ তাদের নতুনভাবে সৃষ্টি করলেন। তাদের পুরাতন হৃদয় খোদার হৃদয় দিয়ে পুনস্থাপন (Replacement)করে দিলেন।
নতুন জন্মের রহস্য এখানেই নিহিত। নাম পরিবর্তন নতুন জন্মের চিহ্ন হতে পারে না। পোশাক আসাক, বাহ্যিক কোনো কিছু পরিবর্তন হৃদয়ের পরিবর্তনের ফলে বয়ে আনতে পারে না। মানুষ বাহ্যিক যা কিছু করে চলছে তা কেবল বাণিজ্য ও বাণিজ্য রক্ষার জন্য রাজনীতিই তেমন ক্ষেত্রে ধর্মের কোন সেবা হতেই পারে না।
আসলে ধর্ম মাত্র একটি, আর তা হলো ঐশী ধর্ম, রুহানি বিষয়, যার সাথে দৈহিক অঙ্গ-ভঙ্গি বা কসরতের কোনো যোগসাজস নেই এবং থাকার প্রশ্নও জাগে না। অনেকে মানুষ খুন করাটাকেও ধর্মের প্রতিষ্ঠা সহায়ক কর্ম বলে চালিয়ে দিচ্ছে, আসলে মানুষ বাঁচাতে মসিহ নিজের প্রাণ দিলেন কোরবানি।
যেক্ষেত্রে মসিহ অর্থাৎ খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ আমাদের সাথে রয়েছেন যুক্ত তেমন ক্ষেত্রে আরিন্দম দেখে ভীত সন্ত্রস্থ হবার কারণ খুঁজে পাই না। মসিহ হলেন বাতেনি খোদার প্রকাশ্য রূপ (কলসীয় ১ ঃ ১৫)।
মানুষের ধর্ম হবে মানবতা, যে দেখা ভাইকে মহব্বত করত ব্যর্থ সে অদেখা খোদার সেবা করে চলছে বলে সর্বপ্রকার ঘোষণা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কি হতে পারে? মানবতা রক্ষার জন্যই মসিহ নিজের পূতপবিত্র প্রাণ কোরবানি দিলেন, যেন বিশ্বাস পূর্বক প্রত্যেকটি ব্যক্তি নাজাত লাভে ধন্য হতে পারে, এবং ঠাই পেতে পারে পিতার (খোদার) মহান ক্রোড়ে।